ছোট্ট আয়েশা!
কেমন আছো তুমি? জানি ভালো নেই। তোমরা কেউই ভালো নেই। বারুদের গন্ধ আর বুলেটের নিশানায় কে-ই-বা ভালো থাকতে পারে!
জানো আয়েশা! তোমার বয়সি আমার একটা বোনের মেয়ে আছে। ওর নামও আয়েশা। ওর মুখের দিকে তাকালেই তোমার কথা মনে পড়ে। ও যখন ছুটোছুটি করে তখন ভাবি তোমারও এখন ছুটে বেড়ানোর কথা ছিল। অথচ তুমি হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছ। কথা ছিল তুমি ফুলবাগানে ওড়ে ওড়ে ফুলের সুবাস গায়ে মাখবে, অথচ আজ তোমার চারপাশে ওষুধের তীব্র গন্ধ। সারা ঘরে ছুটে ছুটে মায়ের হাতে খাবার খাওয়ার কথা ছিল তোমার, তার বদলে তোমাকে নার্সের হাতে বিস্বাদ স্যুপ খেতে হচ্ছে। মায়ের বুকে শুয়ে তাঁর মুখ থেকে নাশিদ শুনতে শুনতে তোমার ঘুমানোর কথা ছিল, কিন্তু তুমি শুয়ে আছ হাসপাতালের নির্জন বেডে। ভাইয়ার সাথে লুকোচুরি খেলারও কথা ছিল এখন, অথচ তুমি ব্যান্ডেজ মোড়া শরীরে নির্জীব পড়ে আছ। আসাদ বাহিনীর নিষ্ঠুরতায় ধ্বংস হয়ে গেছে ছবির মতো তোমাদের বাড়িটি। একগাদা খেলনা আর রঙ-তুলিতে সাজানো ছিল তোমার ছোট্ট কামরা। এক বোমার আঘাতে নিমিষে ধ্বংসস্তুপ হয়ে গেছে সব। তখন বাবা ল্যাপটপে কী একটা কাজ করছিলেন। মা খুব যতনে তোমার জন্য উলের জামা বুনছিলেন। ভাইয়া কার্টুন দেখছিল। আর তুমি পুতুল নিয়ে পুতুলের মতো খেলছিলে। হঠাৎ প্রচÐ এক আওয়াজের সাথে এক পৃথিবী ধোঁয়া। আর কিচ্ছু তোমার মনে নেই, তাই না?
আয়েশা! তোমাকে কী করে বলি, বাবা আর তোমাকে কাঁধে চড়িয়ে পার্কে নিয়ে যাবেন না। মাও বুকে জড়িয়ে রূপকথার গল্প শোনাবেন না। ভাইয়াও আর দুষ্টুমি করবে না তোমার সাথে। আমি জানি না তুমিও আর দৌড়াতে পারবে কিনা! সকালেই শুকনো মুখে ডাক্তার কী যেন একটা বলে গেলেন। আমি ঠিক শুনতে পাইনি কিংবা শুনতে চাইনি।
ছোট্ট আয়েশা! আমরা এক অক্ষম জাতি। মুষ্টিমেয় কিছু মর্দে মুমিন ছাড়া অন্য সবাই ভীরু বিড়াল হয়ে গেছি। তুমি দোয়া কোরো, আমি যেন মুজাহিদ কিংবা শহিদের মা হতে পারি। কথা দিলাম, তোমার মতো ছোট্ট পাখিদের বাঁচাতে আমার ছেলেদের উৎসর্গ করব। হাসিমুখে মাথায় পাগড়ি বেঁধে পাঠিয়ে দেব তোমাদের কাছে। ততোদিন তুমি আমাকে ক্ষমা কোরো না, কক্ষণো ক্ষমা কোরো না।
লিখেছেন : পাওয়ার হাউজ মোড়, খুলনা থেকে
মে ২০১৮