প্রিয় বই কোনটি এই প্রশ্নটি একজন সত্যিকারের পাঠকের কাছে অনেক জটিল একটি প্রশ্ন। জ্ঞান অন্বেষী পাঠক যিনি তার কাছে পাঠযোগ্য বইমাত্রই প্রিয়। জ্ঞানের সমুদ্রে যে কোনো বইয়েই কোনো না কোনো জ্ঞানমুক্তা পাওয়া যায়। এরপরও কিছু কিছু বই প্রিয় মনে হতে পারে। এই প্রিয় হওয়া কোনো সূত্র মেনে চলে না।
প্রিয় বই হতে পারে নানা ধরণের। কোনো বই শুধু একবার পড়েই প্রিয়। কোনো বই এতই প্রিয় যে বারবার পড়েও শখ মেটে না। আবার কত বইই তো বারবার পড়লেও অপ্রিয় থেকে যায়। আমাদের টেবিলে থাকা পাঠ্য বইয়ের স্ত‘পের বেশিরভাগ বইই তো এমন তাই না?
প্রিয় বই নিয়ে লিখতে গিয়ে অনেক ভেবেছি। মনে হয়েছে কিছু বইকে যদি প্রিয়ের তালিকায় রাখি তাহলে অন্য অনেক বয়ের প্রতি অবিচার করা হবে।
তবু স্মৃতি থেকে কিছু প্রিয় বইয়ের নাম বলি।
ছোটবেলায় আমাদের বাসায় থাকা বহু বইয়ের স্ত‘প থেকে ছোটদের ইসলাম নামে একটি বই পেয়েছিলাম। ছবিসহ এই বইটি দাগ কেটেছিল মনে। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ছোটদের অনেক বই ছিল প্রিয়ের তালিকায়। নাম মনে নেই। তবে বইগুলোর গল্প এখনো মনে উজ্জ্বল।
চাঁদ হলো দু টুকরো নামে একটি বই আছে। লেখক মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ। ওনার শেষজীবনে লেখা বইয়ের অনেক পাঠকই জানেন না এই নামে তিনি একটি বই লিখেছিলেন। কি অদ্ভ’ত সুন্দর শৈলী ছিল বইটির। ছয় বছর বয়সে এক দিনেই পড়ে ফেলেছিলাম বইটি। একটুও বুঝতে অসুবিধা হয়নি বইটির। এছাড়া এই লেখকের আক্বীদা সিরিজ ও সীরাত সিরিজ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। বই দুটি আমাদের সামনে খুলে দিয়েছিল অবারিত জ্ঞানের দ্বার। সেই শৈশবেই তাজা ঈমানের বীজ বুনে দিয়েছিল আমাদের কচি হৃদয়ে। বইদুটি বাংলাভাষী মুসলিম শিশুর অবশ্য পাঠ্য হওয়া উচিত।
এই সময়ে আরেকটি বই প্রিয় হয়েছিল আমার। নাম সোনালী শাহজাদা। মনকারা প্রচ্ছদের এই বইটি পড়ে কত যে দুপুর কেটেছে। কতবার পড়েছি হিসাব নেই। বইটির লেখক সাজজাদ হোসাইন খান। তার আরও কিছু বই চোখে পড়েছে। পড়া হয়নি। তবে এই একবই দিয়েই তিনি গভীর দাগ কেটেছিলেন আমার কচিমনে।
মাঝে দীর্ঘ সময় বইপড়া হত অনেক কম। মাদরাসার পাঠাগারই ছিল একমাত্র ভরসা। মালিবাগ মাদরাসায় পেয়েছিলাম বিরাট এক পাঠাগার। সাধ্যমত কিছু বই পড়েছিলাম সেখান থেকে।
অধ্যাপক একিউ এম বদরুদ্দেজার দুটি বই পড়েছি। তার লিখনশৈলী অনেক আকর্ষণ করেছে আমাকে। প্রথম পড়া বইটি ছিল ইন্দোনেশিয়ার ভ্রমণকাহিনী। বইটির নাম স্মৃতিতে নেই। দ্বিতীয় বইটির নাম নাম বলা নিষেধ।
একজন রাজনৈতিক এত সুন্দর লিখতে পারেন তাঁর লেখা না পড়লে বুঝতাম না। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ের কাছে লেখক পরিচয় যদিও ফিকে তবু তার লেখক সত্ত¡া স্বমহিমায় ভাস্বর।
বাংলাদেশের কোটি পাঠকের মত আমিও হূমায়ুন আহমেদের একজন ভক্ত পাঠক। তাঁর বই অল্প অল্প করে পড়ি। কারণ তিনি তো আর লিখবেন না। খুব সাধারণ বিষয় দিয়ে তিনি যে ঘোর লাগা আবহ তৈরি করতে পারেন তা শুধু বাংলাভাষার লেখক কেন বিশ্বের অনেক বিখ্যাত লেখকদের লেখায়ও অনুপস্থিত।
হুমায়ূন আহমদের অন্ধকারের গান বইটি কেন যেন অনেক ভালো লেগেছিল। মধ্যানহ আর বাদশাহ নামদার তো কয়েকবার পড়েছি আর প্রতিবার মুগ্ধ হয়েছি নতুন করে।
শুধু বাংলা বইয়ের কথা বললাম। সামান্য যা কিছু আরবি র ইংরেজি বই পড়া হয়েছে তার তালিকায়ও কিছু প্রিয় বই আছে। তার কথা আজ থাক। না হয় অন্যদিন বলব।