নিভৃতচারী একজন শিক্ষক ও মাদরাসা-পরিচালক ছিলেন, তারপর অনেকটা আকস্মিকভাবেই হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের ধর্মীয় অঙ্গনের অবিসংবাদিত রাহবার।
সুদীর্ঘ কর্মজীবনের শুরু থেকেই একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত ছিলেন, সাত-আট দশকে এখানে হাজার হাজার তালিবুল ইলম তাঁর কাছ থেকে হাদিসের সনদ গ্রহণ করে আলেম হয়েছেন। দেশের কওমি শিক্ষাধারার সকল মাদরাসার অভিভাবকতুল্য-প্রতিষ্ঠান হাটহাজারী মাদরাসা, আর তিনি সেই মাদরাসার মুহতামিম, পরবর্তীকালে এই পরিচয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হাটহাজারীর শায়খুল হাদিসের পদ এবং বেফাকের চেয়ারম্যান-এর দায়িত্ব—দেশের উলামায়ে কেরাম এই সুবাদে তাঁকে চিনতেন এবং সম্মান করতেন। এ ছাড়া দেশের আপামর জনসাধারণ, বিশেষত চট্টগ্রামের বাইরের জনগণের কাছে তাঁর তেমন কোনো প্রসিদ্ধি ছিল না।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে হাটহাজারী মাদরাসার দায়িত্বে থাকার সুবাদে একদিকে যেমন ছিলেন তিনি শ্রদ্ধার পাত্র, তেমনি ময়দানের আন্দোলন-রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকবার কারণে ছিলেন অবিতর্কিত এবং দল-মত নির্বিশেষে কওমি ঘরানার সকল আলেমের কাছে মান্যবর। ২০১৩ সালের একদম শুরুর দিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে রাজধানীর শাহবাগে যখন ইসলাম ও ধর্মীয় ঘরানাকে বাজেভাবে কটাক্ষ করা শুরু হলো, একই সঙ্গে অনলাইনে দীর্ঘদিন ধরে ইসলামের বিরুদ্ধে যারা বিষোদ্গার করে আসছিল তারা যখন সেখানে ঐক্যবদ্ধ হতে লাগল, স্রোতের টান লেগে ইসলামি ঘরানা তখন কোণঠাসা হয় হয় অবস্থা। অবস্থা এমন বেগতিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, শাহবাগিদের শ্লোগান ও আন্দোলনে কথিত দেশপ্রেমের লেভেল থাকার কারণে না এই জমায়েতের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাচ্ছিল আর না তাদের ধর্মীয় বিষোদ্গারের প্রতিবাদ করার মওকা মিলছিল। যারাই এই জমায়েতের বিরুদ্ধে কথা বলতে মনস্থ করছিলেন, তারাই রাজাকার ট্যাগ খাচ্ছিলেন। ময়দানের আন্দোলন ও রাজনীতিতে সক্রিয় শীর্ষস্থানীয় আলেম যাঁরা ছিলেন, তাঁরা অনুভব করতে পারছিলেন, সম্মিলিতভাবে একটা কিছু করা দরকার, কিন্তু নিজেদের আভ্যন্তরীণ অনৈক্যের কারণে তাঁরা সম্মিলিতও হতে পারছিলেন না, কিছু করতেও পারছিলেন না। এমনই দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে দেশের এক প্রান্ত থেকে আল্লামা আহমদ শফী অত্যন্ত সাহস ও হিম্মতের সঙ্গে শাহবাগিদের প্রতিরোধের ডাক দিলেন। ১৩ দফা দাবি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ময়দানে এল আঞ্চলিক কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ-থাকা ধর্মভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। আল্লামা আহমদ শফী যার আমির বা প্রধান। তাঁর এই উদ্যোগে দেশের সমস্ত উলামায়ে কেরাম অংশগ্রহণ করলেন, তাঁকে আমির মেনে সমবেত হলেন হেফাজতে ইসলামের পতাকাতলে। ফলে অভূতপূর্ব এক জোয়ার তৈরি হলো পুরো বাংলাদেশে। শাহবাগের যে জমায়েত দেশপ্রেমের মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছিল, হেফাজত এসে সেটাকে বিচূর্ণ করে দিল। দেশপ্রেমের ভাওতাবাজির আড়ালে ধর্মদ্রোহিতার কী ভয়ানক দাবানল সেখানে জ্বলছিল, হেফাজত তা দেশবাসীর কাছে পরিস্কার করে দিল। আর এর মধ্য দিয়ে বয়োবৃদ্ধ একজন গুমনাম মনীষী আলেম হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের ধর্মীয় ঘরানার অবিসংবাদিত রাহবার। জাতীয় গণমাধ্যম ছাড়িয়ে শিরোনাম হয়ে উঠলেন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের। সেসব সংবাদমাধ্যমের জরিপে তাঁর নাম উঠে এল বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের অন্যতম একজন হিসেবে।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা : আল্লামা শাহ আহমদ শফী’র এই যে উত্থান এবং প্রসিদ্ধি, এটা তাঁর একদম বয়োবৃদ্ধ কালে হয়েছিল, বয়সের ভারে যখন তিনি হুইল চেয়ারের যাত্রী। ফলে শতবর্ষী নেতা হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। কিন্তু তাঁর বয়স বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৩ সালে হেফাজতের উত্থানের সময় তাঁর বয়সের কাঁটা নব্বইয়ের কোটা পেরোয়নি। কোনো কোনো তথ্যমতে তাঁর জন্মসাল ১৯১৬ আর কোনো তথ্যমতে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ লেখা হলেও নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে। হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরীসহ তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর জীবনী যাঁরা সংকলন করেছেন, ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দকেই তাঁরা জন্মসাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তাঁর জীবনী সংকলনে তাঁর অনুমতি বা নির্দেশপ্রাপ্ত লেখক, তাঁর দীর্ঘদিনের খাদেম মাওলানা হাসান আনহারও জন্মসাল হিসেবে ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলক ইউনিয়নের পাখিয়ারটিলা গ্রামে তাঁর জন্ম। জন্মসালের ব্যাপারে জানা গেলেও জন্মের দিন-তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। পিতা বরকত আলী, মাতা মেহেরুন্নেসা খাতুন। পিতা আলেম ছিলেন না, তবে দীনদার ছিলেন। মাতাও খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। দাদার নাম মতিউল্লাহ। তাঁর জীবনীকার মাওলানা হাসান আনহারের তথ্যঅনুযায়ী তাঁর ঊর্ধ্বতন পুরুষ পাঞ্জাব থেকে এসে এখানে আবাস গেড়েছিলেন।
পড়াশোনা : প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাঁর পড়াশোনা শুরু হয় শিলক ডাউনিং স্কুলে। পরে স্থানীয় সরফভাটা মুআবিনুল ইসলাম মাদরাসায় কিছুদিন পড়েন। এরপর জিরি মাদরাসায় আরও কিছুদিন পড়েন। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জিরি মাদরাসা বন্ধ হয়ে যায়, তখন তিনি বাড়িতে ফিরে যান। এর অল্প কিছুদিন পর, তাঁর বয়স তখন ১০ ছুঁইছুঁই, হাটহাজারী মাদরাসায় ভর্তি হন। হাটহাজারীতে মিশকাত জামাত পর্যন্ত পড়েন। এরপর ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে পাড়ি জমান। তাঁর দেওবন্দগমনের সাল ১৯৫০ বা ৫১ খ্রিষ্টাব্দ। তারমানে তখন তাঁর বয়স ছিল ২০ বা ২১ বছর। দেওবন্দে তিনি দাওরা সম্পন্ন করেন এবং তাফসির বিষয়ে তাখাসসুস পড়েন। সবমিলিয়ে দেওবন্দে তিনি ৫ বছরের মতো সময় শিক্ষাগ্রহণ করেন। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে লাভ করেন শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানি রহমতুল্লাহি আলায়হি’র খেলাফত। আল্লামা আহমদ শফী সেবছর দেওবন্দের তাফসির বিভাগে অধ্যয়নরত ছিলেন। তাঁকে-সহ মোট ৬ জনকে একসঙ্গে খেলাফত দান করেন মাদানি।
কর্মজীবন : কর্মজীবনের পুরো সময়টাই হাটহাজারী মাদরাসায় কাটিয়েছেন। দেওবন্দ থেকে ফেরার পরপরই ১৯৫৬ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে হাটহাজারীতে নিয়োগ পান। তারপর থেকে ইন্তেকালের আগের দিন পর্যন্ত—সাত দশকেরও বেশি সময় হাটহাজারী মাদরাসাই ছিল তাঁর একমাত্র কর্মস্থল। আরও সহজ করে বললে, সেই যে ১০ বছর বয়সে তিনি হাটহাজারী এসেছিলেন, দেওবন্দে পড়াশোনার কয়েকবছর বাদ দিলে, বাকি পুরো জীবনটাই হাটহাজারী মাদরাসায় কাটিয়েছেন।
১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে হাটহাজারীর তৎকালীন মুহতামিম হজরত হামেদ রহমতুল্লাহি আলায়হি ইন্তেকাল করলে মজলিসে শুরার সিদ্ধান্ত মুতাবেক আল্লামা শাহ আহমদ শফী মুহতামিম হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে ইহতেমামি’র পাশাপাশি শায়খুল হাদিস হিসেবেও নিযুক্তি লাভ করেন। তারপর থেকে হাটহাজারীর ফারেগিনগণ বুখারি শরিফের মূল সনদ তাঁর থেকেই গ্রহণ করছেন।
২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে কওমি ঘরানার সর্ববৃহৎ শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা নুরউদ্দীন গহরপুরী’র ইন্তেকালে পদটি শূন্য ঘোষিত হবার পর আল্লামা আহমদ শফীকে বেফাকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়।
২০১০ সালে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে গঠিত হয় ধর্মভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। আল্লামা আহমদ শফীকে এর প্রধান বা আমির নিযুক্ত করা হয়। প্রথমদিকে এই সংগঠনের কার্যক্রম কেবল বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকলেও ২০১৩ সালে শাহবাগে নাস্তিক-মুরতাদদের গণজমায়েত প্রতিরোধের লক্ষ্যে আল্লামা আহমদ শফী যখন বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিলেন, তখন তা জাতীয় পর্যায়ের ধর্মীয় সংগঠনের রূপ পরিগ্রহ করে। আর আল্লামা শাহ আহমদ শফী হয়ে ওঠেন ধর্মীয় অঙ্গনের অবিসংবাদিত রাহবার।
২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে সরকার কর্তৃক মাস্টার্স সমমান দেওয়ার প্রাক্কালে কওমি মাদরাসাগুলোর সম্মিলিত শিক্ষা-সংস্থা আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আল্লামা শাহ আহমদ শফী সকলের নিরঙ্কুশ সমর্থনে সংস্থাটির প্রধান হিসেবে মনোনীত হন। কওমি মাদরাসাশিক্ষার সরকারি স্বীকৃতির জন্য ইতিপূর্বে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, খতিব আল্লামা উবায়দুল হক, চরমোনাই’র মরহুম পীর মাওলানা ফজলুল করিম-সহ শীর্ষস্থানীয় অনেক আলেমই নানা প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু চারদলীয় ঐক্যজোটের আমলে তাঁরা সফলতার মুখ দেখতে পারেননি। পরে তাঁদের প্রায় সকলেই একে একে ইন্তেকাল করলে দাবিটা স্তিমিত হয়ে পড়ে।
১৪ দলীয় জোট সরকারের প্রথম আমলে—২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের উত্থান এবং শাপলা ট্রাজেডি’র পর সময়ের পরিক্রমায় সরকারের সঙ্গে অনেকটা নাটকীয়ভাবেই উলামায়ে কেরামের দূরত্ব কমতে থাকে। এরই মধ্যে স্বীকৃতির বিষয়টাও আবার আলোচনায় আসে। স্বীকৃতি প্রদানে সরকারের স্বেচ্ছা আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। অবশেষে ২০১৭ সালে আল্লামা আহমদ শফী’র নেতৃত্বে উলামায়ে কেরামের একটি দলকে বঙ্গভবনে দাওয়াত করে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি শিক্ষাধারার সরকারি স্বীকৃতির ঘোষণা দেন। পুরো প্রক্রিয়ায়ই আল্লামা আহমদ শফী ছিলেন মূল নেতৃত্বে।
উল্লেখিত সবগুলো দায়িত্বেই আল্লামা শাহ আহমদ শফী মৃত্যুর আগ অবধি বহাল তবিয়তে ছিলেন। তবে তাঁর মৃত্যুর আগের দিন হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্রদের দাবি’র মুখে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মাদরাসার মুহতামিম তথা মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। পরে শুরা কমিটি তাঁকে ‘সদরে মুহতামিম’ তথা মাদরাসার মুরব্বি-অভিভাবক হিসেবে সম্মানিত করে।
মৃত্যু : দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। অবস্থার অবনতি ঘটলে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে তাঁকে এয়ার এম্বুলেন্সে করে রাজধানীর আজগর আলী হসপিটালে নিয়ে আসা হয়। ওই দিনই সন্ধ্যার সময় তিনি ইন্তেকাল করেন।
হাটহাজারীর ছাত্র আন্দোলন : বার্ধক্যের কারণে আল্লামা আহমদ শফী দীর্ঘদিন ধরে অনেকটা শয্যাশায়ী ছিলেন। তাঁর সবগুলো দায়িত্বই কার্যত দেখাশোনা করতেন তাঁর ছোটছেলে মাওলানা আনাস মাদানী। তিনি হাটহাজারী মাদরাসার সহকারী শিক্ষাপরিচালক ছিলেন। ব্যাপকভাবে অভিযোগ আছে, গত কবছর ধরে আল্লামা আহমদ শফী স্বাক্ষরিত সবগুলো সিদ্ধান্তই আনাস মাদানীর মর্জিমাফিক হয়। তিনি তাঁর মনমতো সিদ্ধান্তই আল্লামা আহমদ শফীর নামে চালিয়ে দেন। চলতি বছর হাটহাজারী মাদরাসায় ছাত্র ভর্তি বিষয়ে স্বেচ্ছাচারিতা, অনেক উসতাদকে বিনা কারণে বের করে দেওয়া, পরীক্ষার্থী অনেক ছাত্রের প্রবেশপত্র অন্যায়ভাবে আটকে রাখা-সহ বেশ কিছু অভিযোগে হাটহাজারীর ছাত্ররা আনাস মাদানি’র ওপর সংক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাঁদের দাবি, আল্লামা আহমদ শফী বার্ধক্যের কারণে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে অক্ষম হয়ে পড়েছেন, এবং তাঁকে তাঁর পুত্রসহ একটি চক্র ব্যবহার করছে। তাই তাঁরা হাটহাজারীর মহাপরিচালকের পদ থেকে আল্লামা আহমদ শফীর সম্মানজনক অব্যাহতি এবং আনাস মাদানীকে মাদরাসা থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারসহ ৫ দফা দাবি নিয়ে চলতি বছর তথা ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আন্দোলন শুরু করে। দুপুর থেকে এ আন্দোলন শুরু হয়, আন্দোলনের মুখে রাতে জরুরি ভিত্তিতে মজলিসে শুরার বৈঠক বসে এবং আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয়। পরদিন আবারও মজলিসে শুরার মিটিং বসলে মিটিংয়ে আল্লামা আহমদ শফী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। মজলিসে শুরা তখন তাঁকে মাদরাসার মুরব্বি তথা সদরে মুহতামিম হিসেবে সম্মানিত করে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের কারণ দেখিয়ে সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য হাটহাজারী মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করে। ছাত্ররা সরকারের এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু মিটিং শেষ হবার পরপরই ওই দিন রাতে আল্লামা আহমদ শফী’র স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় পরদিন বিকালে নিয়ে আসা হয় রাজধানীতে। ওই দিন সন্ধ্যায় রাজধানীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
অন্তিম শয্যা : পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর বাদ জোহর হাটহাজারী মাদরাসায় তাঁর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফের ইমামতিতে জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। দেশের লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। তাঁর অসিয়ত অনুযায়ী হাটহাজারী মাদরাসার অভ্যন্তরে অবস্থিত কবরস্তানে তাঁকে দাফন করা হয়।
তথ্যসূত্র : আল্লামা আহমদ শফীর জীবনী সংকলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত লেখক ও তাঁর দীর্ঘদিনের খাদেম মাওলানা হাসান আনহারের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত। এবং তাঁর ইন্তেকালের আগপরে জাতীয় গণমাধ্যম-পরিবেশিত বিভিন্ন সংবাদ।
অক্টোবর ২০২০