ওয়াজ মাহফিল কেন হয়ে থাকে? নিশ্চয় মানুষের উপকারের জন্য। মানুষকে জাহান্নামের লেলিহান আগুন থেকে রক্ষা আর ইহলৌকিক শান্তি ও দীপময় জীবনের জন্য।
ইদানীং ওয়াজ মাহফিল শিক্ষিত ও দীক্ষিত মানুষের রুচির বিপরীত হয়ে উঠছে। কারণ স্পষ্ট, দীনের এই শুচি-নির্মল মজমায় এখন হক্কানি আলেমের বিপরীতে তথাকথিত নাহবেমির-পড়ুয়া ‘খতিবে বাঙাল’দের অত্যধিক উৎপাদন। এদের ইলমি দীনতা আর কাÐজ্ঞানহীন বয়ান ও কুরআনের অপব্যাখ্যার ফলে মানুষ যেমন দিনদিন গুনাহর অতল সমুদ্রে ডুবছে, সাথে প্রীতি ও স¤প্রীতিময় সোনালি পরিবেশ ভরে উঠছে এই সংঘ সেই সংঘের চাঁদাবাজির শিকারের সঙ্গে দ্ব›দ্ব ও অপছন্দে মুদ্রিত। এই মাহফিলগুলোতে ইসলাহ ও তারবিয়াতের বিপরীতে শিক্ষা দেয়া হচ্ছেÑএরা বেদাতি, ওরা কাফের, লা-মাযহাবি আর আহলে হাদিস। সমাজে শান্তির বদলে ছড়িয়ে পড়ছে পারস্পরিক ঘৃণা আর গালাগালির সংক্রামক-ভাইরাস। ইলমি এই মাজালিস অগ্নিতে অনূদিত হয়ে দিন-বদিন বিবেকবান মানুষকে দগ্ধ করছে।
ওয়াজ মাহফিলের এই নেতিবাচক দিক আমাদের চোখ এড়াতে পারে না। আমাদের মন ও মননও পরিত্যাগ করতে পারে না। ফলে এক দ্বিধা-দ্ব›দ্বময় পরিবেশে আমরা পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও স¤প্রীতি হারিয়ে নয়া-কেয়ামতের দুয়ার দেখছি। সিরিয়া আর ফিলিস্তিনের পথেই হাঁটছে শাহ জালালের সফরসঙ্গী ৩৬০ আউলিয়াসহ অসংখ্য উলামা-দরবেশের পদ-ছোঁয়ায় ধন্য প্রিয় বাংলাদেশ।
মানুষের উপকারের বদলে যে মাহফিল রাতের ঘুম নষ্ট করছে, সারা রাত ওয়াজ শোনার পর ফজরের নামাজের ফরজ বিধানকে শীতল করছে, সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে হিংসার দাবানল, পরিবেশকে করে তুলছে বিদঘুটে ও ঘোলাটে, যদিও গাঁও-গেরামের মানুষ দীনদার বিজ্ঞ আলেমের সুহবত থেকে কিছু শিখছেও বটে, তবে যেখানে তুচ্ছ উপকারের জন্যে উম্মাহর জাতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, চরমভাবে অবেহেলিত হচ্ছে বিবেক আর দীনে সালিমের লক্ষ্য, সেই মাহফিল আমরা চাই না।
মাহফিল চাই ইসলাহর জন্য। মাহফিল চাই গালাগালি ও দাতি-বিদআতি ভোলার জন্য। এবং মাহফিল চাই সমাজ, দেশ, দশ ও ইসলামের বৃহত্তর ফায়দার জন্য।
এপ্রিল ২০১৮