কোনো এক বিকেলে খুব চেনা পথ দিয়ে হাঁটছিলাম। একা একা। গন্তব্যহীন। গ্রামের মেঠোপথ। আঁকাবাঁকা। সুন্দর। পথের দু’ধারে বড় বড় গাছ। সারি সারি। লম্বা লম্বা। নারকেল। সুপারি। নাম না জানা আরও বহু জাতের গাছ। পাতার ফাঁক গলে চিকচিক করছে গোধ‚লির কোমল রোদ। সেই চিকচিক রোদে হাসছে সবুজ পাতারা। ওদিকে পাখিদের কিচিরমিচির। ঝিরঝির বাতাস। নীলাকাশে ছোপ ছোপ মেঘ। শাদা তুলোর ঘুড়ি যেন।
হাঁটতে হাঁটতে বহুদ‚র চলে এলাম। আরেকটু এগুলেই নদী। তীরের দিকটায় অল্প এগুতেই বিস্ময়ে থমকে গেলাম। আরে! কী আশ্চর্য সুন্দর ছড়িয়ে আছে এখানে! কল্পনাও করিনি। আমি দেখছিলাম মুগ্ধ চোখে। শাদা শাদা কাশফুল। মৃদু বাতাসে হালকা দুলছে। দোল খেয়ে খেয়ে মৃদু নড়ছে।
শুভ্র সফেদ কাশফুল। সৌন্দর্যের অনন্য পতাকা। এ দৃশ্য মনকাড়া, মনমুগ্ধকর; এ শুধুই গ্রাম বাংলার। কংক্রিটের শহরে এ দৃশ্যের ছিটেফোঁটাও নেই। ঋতুর রানি শরতেই কেবল চিত্রায়িত হয় এ দৃশ্য। প্রকৃতির বর্ষাস্নানের পর আসে শরত। ভাদ্র-আশ্বিন দু’মাস। এ সময়েই চোখে পড়ে কাশফুল। শারদের আরেক ফুল আছে শিউলি। জাফরানি বোঁটা। শাদা পাপড়ি। মিষ্টি গন্ধের আঁকর। ঘ্রাণে মৌ মৌ করে চারদিক। ব্যাকুল হয় ঘ্রাণপ্রেমীরা।
আমি আরেকটু এগুলাম। কাশবন ঘেঁষে দাঁড়ালাম। ইশ, কী অপরূপ! অপ‚র্ব সুন্দর! আলতো করে ছুঁলাম। বাতাসের পিঠে যেন শাদা মখমল বিছিয়ে রেখেছেন খোদা। মুগ্ধতার ঘোর তখনও কাটেনি, ভেসে এল মুয়াজ্জিনের সুর। আমি আবার হাঁটতে লাগলাম। ফেলে আসা পথে আমি আর একা নই। বাতাসে দুলতে লাগল সফেদ মখমল। মুগ্ধতার অন্যরকম আভা ছড়িয়ে পড়ল শেষ বিকেলের আকাশে।
নভেম্বর ২০১৮