নবধ্বনি
  • হোম
  • স্বাগত কলাম
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • মুক্তগদ্য
  • গল্প
  • রঙধনু
  • দিনলিপি
  • পুরানো সংখ্যা
No Result
View All Result
নবধ্বনি
  • হোম
  • স্বাগত কলাম
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • মুক্তগদ্য
  • গল্প
  • রঙধনু
  • দিনলিপি
  • পুরানো সংখ্যা
No Result
View All Result
নবধ্বনি

কে?

ফাহিম আবরার

কে?
Share on FacebookShare on Twitter

ঘটনাটা একবার ঘটলে কথা ছিল না। কিন্তু পরপর দুই রাতের একই ঘটনা ইমাম মোবারক আলীকে বেশ দুশ্চিন্তায় ফেলে দিল। তাঁর দৈনন্দিন আমলে নিশ্চয় বিরাট কোনো ভুল হচ্ছে। আর এই ভুলের কারণেই বোধহয় তাঁর রাতের এবাদত কবুল হচ্ছে না। কেবলার দিক বাদ দিয়ে দক্ষিণ দিকে মুখ করে নামাজ পড়লে সেই এবাদত কবুল হয় কী করে!

ইমাম মোবারক আলী গভীর রাতে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে গিয়ে দিক নির্ণয় করতে পারেন না। পশ্চিম দিক মনে করে নামাজে দাঁড়াতেই অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার পর তিনি টের পান যে তিনি দক্ষিণমুখী হয়ে আছেন।

ইমাম এশার নামাজ পড়িয়ে তওবা-ইস্তেগফার জপতে জপতে কাঁচা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। নিশুতি রাত। চারিদিকের গাঢ় অন্ধকার যেন জাপটে ধরেছে। চাঁদের দেখা নেই। বিশাল আকাশের এ-মোড় থেকে ও-মোড় পর্যন্ত অগুনতি তারা মিটিমিটি খেলায় মেতে উঠেছে। বর্ষার দিন প্রায় শেষের দিকে। বৃষ্টি-বাদলা কিছুটা ধরে এসেছে। এবড়ো-থেবড়ো রাস্তায় প্রায় হোঁচট খেতে খেতে চলতে হচ্ছে ইমাম মোবারক আলীকে।

শাহজাহান মিয়ার বাড়ি ঘেঁষে রাস্তাটা মোড় নিয়েছে। ওই বাঁকটা পেরিয়ে একটু সামনে এগুলেই বেত-ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ইমাম মোবারক আলীর দোচালা টিনের ঘরটা চোখে পড়বে। দিনের আলোতেও প্রথমবার কেউ এলে বাড়িটা ঠিক ঠিক চিনে বের করতে পারবে না।

বাড়ির উঠোনে পা রাখতেই কুপির কাঁপা কাঁপা আলো টের পেলেন ইমাম। তাঁর স্ত্রী রোখসানা স্বামীর জন্য ভাত বেড়ে শুয়ে পড়েছে। দরজার পাশেই বিরাট জলচৌকি পেতে রাখা আছে, সাথে পানিভর্তি গামলা। দুই পা সম্পূর্ণরূপে ঘঁষে-মেজে ধুয়ে তবেই ঘরে ঢুকতে পারবেন তিনি। বর্ষাকালে রোখসানার এটাই নিয়ম। আজ সারাদিন বৃষ্টি হয়নি, তবুও ইমামকে এই নিয়ম পালন করতে হবে।

রোখসানার বাতের ব্যামো আছে। রাতটা বড্ড জ্বালায়। সন্ধ্যার পরপরই সে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে ব্যথায় কাতর রোখসানা চিৎকার করতে থাকে। ইমাম মোবারক আলী কী করবেন ভেবে পান না। তাঁকে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় প্রাণী বলে মনে হয়।

ইমাম খেতে বসেছেন। ডালের মধ্যে লবণ কম দেয়া হয়েছে। কেমন বিস্বাদ ঠেকছে। তবে এটা নিয়ে ভাববার সময় তিনি পাচ্ছেন না। তাঁর ভেতর বিরাট অস্থিরতা। আজ রাতেও কি সেই অদ্ভুত ঘটনা ঘটবে?

ঘটলে তার করণীয় কী?

ইমাম হাত-মুখ ধুয়ে দ্রুত বিছানায় গেলেন। তাঁর ভেতর দলা-পাকানো ভাতের মতো ভয়টা ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করেছে। তিনি মনে মনে ঠিক করলেন, আজ রাতে এবাদতের জন্যে ঘুম থেকে উঠবেন না। তাহাজ্জুদ নফল এবাদত। এক রাত ছেড়ে দিলে অসুবিধার কিছু নেই। তবুও দীর্ঘদিনের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেল।

শেষ-রাতের দিকে হঠাৎ ঘুম চটে গেল ইমামের। চব্বিশ বছরের পুরনো অভ্যাস। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম ত্যাগ হতে বাধ্য। ইমাম চোখ মেলে সিলিংয়ের দিকে চেয়ে রইলেন। যদিও সিলিং দেখা যাওয়ার কোনো উপায় নেই, মিশমিশে অন্ধকারে নিজের হাতটা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। ইমাম সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন, তিনি নামাজে দাঁড়াবেন। সমস্যা হলো অজুর জন্য যেতে হবে কলপাড়ে। টিউবওয়েলটার অদূরেই বিরাট বেলগাছ। গাছটার ব্যাপারে লোকমুখে নানা কথা শোনা যায়। ইমাম সেগুলো বিশ্বাস না করলেও জায়গাটা ভয় পান। ভুল হয়েছে, সন্ধ্যা রাতেই এক বদনা পানির ব্যবস্থা করে রাখলে ভালো হতো। রোখসানা চিৎ হয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। ইমাম হারিকেনের আলোটা চড়িয়ে দিয়ে রোখসানার গায়ে ফেললেন। ওর মুখটায় মায়া মায়া একটা ভাব লেগে আছে। ঘুমন্ত অবস্থায় কঠিন হৃদয়ের মানুষকেও কোমল বলে মনে হয়।

রোখসানা কিন্তু তাঁর সাথে মোটেও মায়াবী আচরণ করে না। সকাল-বিকাল তাঁর একটাই কাজ, অযথা চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তোলা আর তার বাপ কেন এই গেঁয়ো লোকটার কাছে তাকে বিয়ে দিল এটা নিয়ে বাপকে শাপ-শাপান্ত করা। রাতে তার দুটি কাজ, মরার মতো ঘুমানো আর মাঝে মাঝে বাতের ব্যথায় কঁকানো। শেষবার কবে রোখসানার হাসিভরা মুখ দেখেছিলেন মনেই করতে পারলেন না ইমাম মোবারক আলী।

তিনি আয়াতুল কুরসি পড়তে পড়তে টিউবওয়েল চাপছেন। টিউবওয়েলের বিশ্রী ক্যাচ ক্যাচ শব্দ রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে দিয়ে বিরাট জঙ্গলের ভেতর হারিয়ে যাচ্ছে। চারপাশটা যেন কোনোকিছুতে হঠাৎ আটকে গেছে। বাতাস থেমে আছে। লম্বা লম্বা বাঁশগাছগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে। ইমামের হঠাৎ মনে হলো বেলগাছের পাতলা ডালগুলো যেন একটু নড়ছে। বাতাস নেই মোটেও। গাছের ডাল নড়ার প্রশ্নই আসে না। প্রচণ্ড ভয়ে ইমাম আয়তুল কুরসি ভুলে গেলেন। তাঁর মনে হলো, আড়াল থেকে কেউ তাঁকে গভীর দৃষ্টিতে দেখছে। বিরাট বিপদ। কোনোরকম পা ভিজিয়ে ঘরে এসে খিল দিলেন।

পশ্চিম দিকের আলমারিটা ভালোভাবে দেখে নিয়ে ওই বরাবর জায়নামাজ বিছালেন ইমাম। কতক্ষণ নামাজে দাঁড়িয়ে ছিলেন জানেন না, হঠাৎ রোখসানার গলার স্বর পেলেন।

‘এ্যাই, এ্যাই…’

ইমামের শরীরের সমস্ত লোম দাঁড়িয়ে গেল। গত দুইরাতের ঘটনা আবার ঘটতে যাচ্ছে। রোখসানা আবার বলে উঠল, ‘এ্যাই, তুমি…তুমি…’

এবার সে খিলখিল করে হাসছে। হাসির দমকে মুখ থেকে আওয়াজ বেরোচ্ছে না।

শীতল, ঠান্ডা একটা স্রোত ইমামের শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল। তাঁর প্রচুর পিপাসা, তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে।

রোখসানা এবার পেছন থেকে রীতিমতো ধাক্কা দিতে শুরু করেছে। ‘এ্যাই, তুমি দক্ষিণ দিকে মুখ কইরা নামাজ পড়তাছ কেন?’

আবারও হাসি।

ইমাম মোবারক আলীর পরিষ্কার মনে আছে তিনি কাঁঠাল-কাঠের পুরনো আলমারি বরাবর জায়নামাজ বিছিয়েছিলেন। গত চব্বিশ বছর ধরে আলমারিটার পিঠ পশ্চিম দিক করে রাখা। তিনি যে পশ্চিম দিকে ফিরেই নামাজে দাঁড়িয়েছেন এ ব্যাপারে তাঁর কোনো সন্দেহ নেই। পেছন থেকে রোখসানা ঠেলেই যাচ্ছে, সাথে দাঁত বের-করা ভয়ানক খিলখিল হাসি। এত বছরের সংসারে রোখসানাকে কখনো এভাবে হাসতে দেখেননি তিনি।

ইমাম সেজদার দিক থেকে চোখ তুলে কাঁধ না ঘুরিয়েই ভয়ে ভয়ে চারপাশটা দেখে নিলেন। কয়েক মুহূর্তের জন্য যেন তাঁর হার্টবিট থেমে গেল। তিনি আবিষ্কার করলেন তাঁর জায়নামাজ দক্ষিণ দিকের খোলা জানালা বরাবর হয়ে আছে। মরচে-পড়া শিকের ফাঁক গলে হু হু করে পাগলা বাতাস ঢুকে পড়ছে ঘরে। বাতাসে তাঁর জায়নামাজের এক কোণ উল্টে আছে। না, এ হতে পারে না। এটা অসম্ভব। তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না দক্ষিণমুখী তিনি হলেন কী করে!

তাঁর কি নামাজ ছেড়ে দেয়া উচিত? সূরা ফাতিহাতেও ভুল হচ্ছে। এভাবে নামাজ পড়লে সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হওয়ার কথা।

ইমাম নামাজ ছেড়ে দিয়ে পেছনে তাকালেন। রোখসানা উধাও। দূরে শোবার ঘরে ঢিমেতালে জ্বলতে-থাকা হারিকেনের আবছা আলোয় তিনি দেখলেন, একটা কায়া যেন দ্রুত সরে গেল। তিনি সোজা শোবার ঘরে এসে দাঁড়ালেন। রোখসানা চিৎ হয়ে ঘুমোচ্ছে। ঠিক যেমনটি তিনি অজু করতে যাওয়ার আগে দেখে গিয়েছিলেন। সজোরে একটা ধাক্কা দিতেই ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসল রোখসানা। চেহারায় ঘুমের ছাপ স্পষ্ট। চোখমুখ কুঁচকে আছে। বোঝাই যাচ্ছে হঠাৎ ঘুম থেকে ডেকে তোলায় সে বেশ বিরক্ত।

‘কী হইল, ডাকছেন কেন?’

‘ভাত তো বাইড়া রান্ধাঘরে থুয়া দিছি, সেখানে গিয়া খায়া লন।’

‘তুমি আমারে নামাজের পেছনে আইসা ধাক্কা দিলা কেন? আবার জোরে জোরে হাসলাও!’

‘আফনার মাথা-টাথা কি খারাপ হইছে নি? কী কন এইসব আবুল-তাবুল? আমি আমার পায়ের বেদনায় বাঁচি না। মাইঝরাইতে উইঠা আফনার সাথে রঙ-তামাশা করতে যামু কোন দুক্কে?’

‘তাইলে পিছন থাইকা আমার সাথে কথা বলল কে?’

রোখসানা ততক্ষণে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে। কাঁথার ভেতর থেকেই অস্ফুট আওয়াজ এলো—‘আমি জানি না, কে।’


অক্টোবর ২০২০

ShareTweetShare

পুরোনো সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১১ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১১ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মার্চ ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মার্চ ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি এপ্রিল ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি এপ্রিল ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মে ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মে ২০১৭ সংখ্যা

আমাদের সম্পর্কে

যোগাযোগ

সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা

© 2021 নবধ্বনি - Developed by Shabaka IT

No Result
View All Result
  • স্বাগত কলাম
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • মুক্তগদ্য
  • গল্প
  • রঙধনু
  • দিনলিপি
  • পুরোনো সংখ্যা

© 2020 নবধ্বনি - Developed by Shabaka IT.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Create New Account!

Fill the forms below to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist