পৌষ-মাঘ, এ-দুই মাস শীতকাল৷ পৌষের শৈত্যপ্রবাহ আর মাঘের ‘বাঘ পালানো’ ঠাণ্ডা—শীতকালকে বেশ জমজমাট করে তোলে৷ যদিও ঋতুচক্রে বাংলাদেশের শীতকালটা খুবই ক্ষণস্থায়ী, তীব্রতা নেই বললেই চলে, তবুও গ্রীষ্ম ও বর্ষার পর শীতের কামড়টা বেশি জখম করে৷
পৌষে মায়েদের কাজ বেড়ে যায়৷ ছেলে-মেয়েরা বায়না ধরে শীতের রকমারি পিঠা খাওয়ার৷ এ-সময় মায়েরা নতুন ধান সিদ্ধ করেন৷ ধানের গন্ধে মৌ মৌ করে চারদিক৷ এরপর ধান ভাঙিয়ে চাউল বের করা হয়৷ এই নতুন চাউল দ্বারা তৈরি হয় নানান ধরনের পিঠা৷ চিতই, ভাপা, পাটিসাপটা, কুলি আরো কত কি! চমৎকার নামের মজাদার স্বাদের সব পিঠা! পৌষের এই পিঠাপুলির কারণে পৌষকে পিঠাপুলির মাসও বলা হয়৷ যদিও পিঠাপুলির এই আয়োজন চলে শীতকালের প্রায় পুরোটা জুড়েই৷
শীতকালের আরেকটি আনন্দমাখা ও তৃপ্তিদায়ক খাবার হলো ‘খেজুরের রস’৷ শীতের সকালে খেজুরের রস পানে কী যে তৃপ্তি, ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়৷ সন্ধ্যায় যখন রস জ্বাল দেওয়া হয়, তখন বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে রসের মিষ্টি গন্ধ৷ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে সেই গন্ধে৷
পৌষের মাঝামাঝি থেকেই শুরু হয় ঠাণ্ডা কনকনে বাতাস৷ এরপর আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে শীতের প্রকোপ৷ মাঘে এসে শুরু হয় ‘বাঘ পালানো’র মতো শীতের কামড়৷ এ-সময় উপযুক্ত গরম জামাকাপড় না থাকলে ঠাণ্ডাজনিত অসুখ-বিসুখ সবাইকে কাবু করে ফেলে৷
শীতে গ্রামাঞ্চলে কুয়াশার শাদা পর্দা ভোর হওয়ার পরও অনেকক্ষণ পর্যন্ত পথে ঘাটে নদীতে নৌকায় ঝুলতে থাকে৷ কোনো কোনো দিন কুয়াশার এই পর্দা এতোটাই ভারী হয় যে, দুই হাত দূরের বস্তু দেখাটাও সম্ভব হয়ে উঠে না৷ এসব দিনে সূর্যের দেখা মেলে না৷
শীতের গরম পোশাক পরিধানেও রয়েছে একপ্রকার আনন্দ-মজা৷ গরম পোশাকগুলো একদিকে যেমন আমাদেরকে শীতের কামড় থেকে রক্ষা করে, একইসাথে তা আনন্দের উপকরণ৷ আবার এই পোশাকগুলোও হয়ে থাকে ভিন্নজনদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রকম৷ শিশুরা পরিধান করে উলের তৈরি রঙবেরঙের রকমারি ডিজাইনের সোয়েটার৷ কিশোর যুবকদের পছন্দ মখমলের তৈরি আকর্ষণীয় জ্যাকেট৷ আর বৃদ্ধরা চাদর নিয়েই সন্তুষ্ট৷ শীতের প্রকোপ বৃদ্ধদেরকে যেন একটু বেশিই কাবু করে৷ তাই তারা প্রায় সারাদিনই তাদের প্রিয় সঙ্গী চাদর জড়িয়ে রাখেন গায়ে৷ যেন তাদের শীতকালটাই চাদরে মোড়ানো!
শীতকালের এই আনন্দমাখা খুশিভরা পিঠাপুলির আয়োজন, খেজুরের রস পানের পরিতৃপ্ততা, উপভোগ্য মনোরম আবহাওয়া কেবল গ্রামবাংলায়ই পাওয়া যায়৷ শহরে বসে এগুলো খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করাটাই বৃথা৷ তাই শীতকালের এই আনন্দঘন মুহূর্তগুলোর সন্ধান পেতে হলে, প্রিয় পাঠক! আপনাকে ফিরে যেতে হবে মাটির কাছাকাছি, গ্রামবাংলায়৷
শিক্ষার্থী, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
জানুয়ারি ২০২২