ছেলেটার প্রচণ্ড জ্বর। তারপরও সে কাঁথা গায়ে দিতে পারছে না গরমে। অথচ পাশেই কাঁথা মুড়ি দিয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে আছে মেয়েটা। কী আজীব!
মেয়েটার কেবল মুখটাই বাইরে। বাকি পুরো শরীর কাঁথা মুড়ানো। নকশা করা পাতলা কাঁথা। ডিম লাইটের অস্পষ্ট আলোয় অদ্ভুত সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। কেমন গুটিসুটি শুয়ে আছে! খাটের রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে আছে ছেলেটা। জ্বরের কারণে ঘুম আসছে না। তীব্র মাথাব্যথাও। ছেলেটার একটা হাত মেয়েটার কপোলে রাখা। মেয়েটাই নিয়ে রেখেছে ওখানে। হাতটা আবার মেয়ের দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরা। ছেলেটা একটুও নড়াচড়া করতে পারছে না। করলে হাতে নাড়া পড়ে মেয়েটার ঘুম ভেঙে যাবে। ছেলেটা ঘুম ভাঙাতে চায় না মেয়েটার।
জ্বর ক্রমশ বাড়ছেই। গরমে আগুন হয়ে যাচ্ছে ছেলেটার শরীর। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো মেয়েটার। ছেলেটার হাতের উত্তাপেই সম্ভবত ঘুম ভাঙলো। ধড়মড়িয়ে উঠলো সে। ছেলেটার কপালে হাত রেখে প্রায় আঁৎকে উঠলো–‘এ কী, তোমার এত্তো জ্বর!’
হাত বাড়িয়ে বেড সুইচটা অন করলো মেয়েটা। আলোয় ভরে গেলো পুরো রুম। অগোছালো চুলে মেয়েটাকে কেমন পাগলিনীর মতো লাগছে। এই বেশেও অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে। ছেলেটা মৃদু হাসে। বলে, ‘ও কিছু না। তুমি পেরেশান হয়ো না।’
‘তুমি জানো কিছু না? দাঁড়াও, আমি পানি নিয়ে আসি। মাথায় পানি দেবে।’
বাথরুম থেকে বালতিতে করে ঝটপট পানি নিয়ে আসে মেয়েটা। খাটের পাশে মেঝেতে রাখে বালতিটা। তারপর খাটের কিনারে সে আসন পেতে বসে। কোলে একটা পলিথিন-কাগজ বিছায়। ছেলেটার মাথা রাখে পলিথিনের উপর। ধীরে ধীরে পানি ঢালে ছেলেটার মাথায়।
ছেলেটা অপলক চেয়ে থাকে মেয়েটার ঘুমজড়ানো পেরেশান চেহারার দিকে। আন্দাজ করার চেষ্টা করে, নারীদেরকে আল্লাহ তাআলা কী পরিমাণ প্রেম দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সুরা রুমের একুশ নম্বর আয়াতটা মনে পড়ে যায় ছেলেটার–‘তার নিদর্শনাবলি থেকে এটাও একটা নিদর্শন যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন; যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করো। আর উভয়ের মধ্যে তৈরি করে দিয়েছেন পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া।’ কী বাস্তব ও চিরসত্য দাবি আল্লাহ তাআলার!
অনাবিল আনন্দের জোয়ার উঠেছে ছেলেটার ভেতরে-বাইরে। মেয়েটার কণ্ঠ অসম্ভব সুন্দর। চমৎকার গাইতে পারে। ছেলেটার এই মুহূর্তে গান শুনতে ইচ্ছে করছে। আর আর সময় অনেক তেল-মালিশ করে গান শুনতে হয়। সহজে গায় না। কিন্তু এখন বলা মাত্রই মেয়েটা একটা নাশিদে সুর তুলে দিলো। জুনায়েদ জামশেদের চমৎকার সেই নাশিদ–
মেরা দিল বদল দে…
মেরা গাফলত মে ডুবা দিল বদল দে…
বদল দে দিল কি দুনিয়া দিল বদল দে…
মৃদু আওয়াজে মেয়েটার চিকন মিহি কণ্ঠে অবিরাম সুর বাজছে। ভেঙে ভেঙে পড়ছে নিঝুম রাতের অখণ্ড নিস্তব্ধতা। সুখে-আনন্দে ছেলেটার দু’চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। তার বারবার মনে হচ্ছে, জান্নাতি আনন্দের ফল্গুধারা যেন প্রবাহিত হচ্ছে তার ছোট্ট এই ঘরে।
নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১৭ সংখ্যায় প্রকাশিত
সবগুলো গল্প দেয়া হোক
সবগুলো গল্পই দেয়া হোক