নবধ্বনি
  • হোম
  • স্বাগত কলাম
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • মুক্তগদ্য
  • গল্প
  • রঙধনু
  • দিনলিপি
  • পুরানো সংখ্যা
No Result
View All Result
নবধ্বনি
  • হোম
  • স্বাগত কলাম
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • মুক্তগদ্য
  • গল্প
  • রঙধনু
  • দিনলিপি
  • পুরানো সংখ্যা
No Result
View All Result
নবধ্বনি

ছেলেটি, প্রলাপ কিবা সংলাপের শেষে ।। সালমান সাদ

ছেলেটি, প্রলাপ কিবা সংলাপের শেষে ।। সালমান সাদ
Share on FacebookShare on Twitter

এক.
পানি দেখেই নাকি বলে দেওয়া যায় পুকুরের গভীরতা। চারপাশের পাড়গুলো উঁচু উঁচু। তার ঢালে বিভিন্ন জাতের পরগাছা। ইংরেজিতে বলি যাকে অর্কিড। বাংলা পরগাছা কি একটু আনস্মার্ট শব্দ? এই পরগাছার ক্ষুদে জঙ্গলঝোপের ভেতর কত গুণ ও নির্গুণের ভেষজ ঔষধি লতাগুল্ম থাকে, কেবল হেকিমের চোখ ছাড়া আর কেইবা সেসবের ভেতর ঢুকে পড়ে, ঘাঁটে।
একটা আমগাছ। ঢালুতেই জন্মে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে। তার ডাল-পাতা সব পুকুরের ঘোলা জলের মুখে নোয়ানো। যেন পানির আয়নায় গাছ দেখছে তার শ্যামল রূপ। পুকুরটা বাঁধানো না। পশ্চিম পাড় দিয়ে পুকুর বেরিয়ে গেছে সোজা খালের মতো অন্যদিক বা অন্যবাড়ির পুকুরে। জল থমথম। এখানে কোনো ঢেউ জাগে না, কিছু আলোড়ন তোলে না। মরাচাঁদটির প্রতিবিম্ব সে জলে স্থির থাকে।
ইতিহাসে এই প্রথমÑপুকুরটির নিজস্ব ইতিহাসেÑএই নিস্তরঙ্গ পুকুরের বুকে তরঙ্গ তুলে নীরবে ভেসে উঠল দু’টো লাশ। ফোলাফাঁপা।
বাংলার কোনো প্রান্তিক অঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জ, তার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসীগণ সবিস্ময়ে দেখল, হাত ধরাধরি দু’টো মানুষের লাশ পদ্মফুলের মতো ভেসে রয়েছে। জনমে এদের একজন ছিল মানব, আরেকজন মানবী।

দুই.
তবলিগ জমাতটি গ্রামের মসজিদে তিনদিন অবস্থান করে চলে যাওয়ার পরÑচলে যাওয়ার দিন সকালের পর দুপুরবেলায় ঘটনা। গ্রামবাসী দেখল এই দৃশ্য। লাশদু’টি, মৃত মানব ও মানবীটি একেবারেই আজনবি নয় গ্রামবাসীর কাছে। লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, এই ছেলেটি, যে চিকন ও ছোট কালোচোখ যার, রূপসীরা যেই চোখের ভেতর ঢুলে পড়তে চায়, এই ছেলেটি, যার চেহারা মেটে ফরশা, খাঁড়া নাক, পরিষ্কার ও মসৃণ ঠোঁটের অনবদ্য মাংস। তলোয়ারের মতো বাঁকা ও তীব্র ভ্রæ, ঋজু দেহের সুন্দর ছেলেটি, যার দিকে মেয়েরা দুইবার ফিরে তাকায়, রূপসীগণ তাকান আড়চোখে, মন লালায়িতা হতে থাকে এর প্রেমপ্রস্তাব পাওয়ার জন্য, ছেলেটি তেমন।

তিন.
ছেলেটি স্থানীয় ছিল না। পথ চলতে পথে তার সঙ্গে একটু কথা হওয়া সন্দিগ্ধ চোখাচোখি করা দুইজন রিকশাওয়ালা, একজন অটোচালক, এলাকার দুই-পাঁচটি ভবঘুরে ছেলে ও মসজিদ-লাগোয়া বাসাটির তাগড়া দেহি পুরুষকর্তাটি, তাঁরা সকলে বললেন, ছেলেটি ঢাকাশহর থেকে আগন্তুক ছিল এখানকার। সচরাচর এই চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দেশের এক প্রান্তের এই গ্রামে বহিরাগত কেউ আসে না। গ্রামবাসী নিজেরা নিজেরা বাস করে, এক ঘরে বসবাসের মতো। আদুল গায়েই অনেক পুরুষ পথে বেড়িয়ে পড়ে, কোনো বাড়িরই কোনো সীমানা দেয়াল নেই, এক বাড়ির উঠান পারা দিয়ে আরেক বাড়ির দরজায় উঠতে হয়। হাতেগোণা কয়েক স্কুলকলেজ, ব্যাংক হাসপাতালÑসবই শহরে। সেই শহরটাও এক চিমটা। এই জায়গায় বহিরাগত আর কে কোন উদ্দেশ্যে আসবে, হ্যাঁ!
তাবলিগ জমাতের লোকজন কালেভদ্রে এসে যায়, ধর্মের শান্তিবাণীর দীক্ষা আদান ও প্রদানের কাজে। গ্রামের লোকেরা তাবলিগ বলে না, বলে পাবলিক এসেছে। ছেলেটি তাদের সঙ্গেই এল, তাদের সঙ্গে ছিল, কিন্তু ঠিক যেন তাদের সঙ্গে এল না, তাদের ভেতর ছিল না।

চার.
থেকে থেকে ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ। এক নিঃসঙ্গ জোনাকির জ্বলো-নিভু আলোকবিন্দু। নিশীথে জোসনা হলে, চরাচর চাঁদের আলোর স্নিগ্ধ তাপে পুড়তে শুরু করলে ছেলেটিকে দেখা যেত আকাশের দিকে মুখ করে আছে। চাঁদের চোখে কীভাবে চোখ রেখে আছে। গ্রাম্য মসজিদের ছাদে, অসমাপ্ত পিলারের ওপর বসে পা দোলাতে দোলাতে এই চন্দ্রগ্রস্ত রহস্যবান মানবটিকে দেখতে পেত তারা, যারা তার পার্শ্বস্থ রাস্তা দিয়ে চলে যেত দ‚রে।
গ্রামের কেউ কেউ নাকি আরো দেখতে পেত নামাজ শেষে ফিরে আসতে যেতে, মসজিদঘরের চাতালে বসে, বা পুকুরটির ঘাটলাতে বসে সাদা এক ডায়েরিতে ডুবে থেকে ভেসে ভেসে কী যেন লিখছে। কলম টেনে টেনে কালিতে কালো গোটা গোটা অক্ষরে ভাসত, ডুবত।
গ্রামের এরা নিরক্ষর। অর্ধশিক্ষাপ্রাপ্ত। খাতা কলম শুধুই কি খাতা কলম, না মূলত কী এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগতি থাকার কথা না তাদের। তাই তারা অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে পাশ কাটিয়ে যেত এই চাঁদের আলোয় মাথা ঝুঁকিত নিবিষ্ট খাতাকলমওয়ালার দিকে। একজন প্রায় শিক্ষিত লোক সন্দেহে বললেন, তরুণটি নাকি ওইরকম করে কবিতা লিখত। এ তবে কবি?

পাঁচ
কবিয়াল এসেছিলেন এক, তাদের গ্রামে। গ্রাম্যেরা আকাশ থেকে মাটিতে উড়ে গেল, গৌরবিত বিস্ময়ের আনন্দে। গ্রামকেন্দ্রিক বাজারের মাছুয়া বলল, ছেলেটা খুব সোন্দর পিন্ধন পরতো। তবুও কীরাম বাউÐুলে ছিল হাঁটার, হাঁটতে গিয়ে গা দোলানো ও পা বাড়ানোর শৈলী। পাঞ্জাবির দুই বোতাম খোলা। কলার দুই পাশে ছড়িয়ে, ভেতরের গেঞ্জিঢাকা বুক চিতিয়ে থাকত।
মাথায় ছিল খাড়া খাড়া লম্বা চুল। মুখ গম্ভীর কেমন, কথা কাটাকাটা, মাপাজোকা।
পুকুরের ছয় সিঁড়িতে বাঁধানো ধাপে কাপড় কাচতে গিয়ে মালতী দুই মিনিট তাকিয়ে ছিল সাবানমাখানো কাপড় আছড়ানোর জন্য উঠিয়ে ওইরকম করে, ঝুলন্ত। থির হয়ে। লাশ হওয়া মেয়েটির কথা কী আর বলবে গ্রামবাসী, সে তো পরিচিতই। গ্রামেরই মেয়ে। একে নিয়ে কারও কোনো রহস্য নেই তাই। কোনো বর্ণনা নেই। শুধু এইটুক বলছি গল্পকথক, তার মৃতদেহটি ভেসে ওঠার খবর বাতাসে ছড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের উঠতি বয়সি ছেলের দলে হাহাকার পড়ে গেল।

ছয়.
গ্রামীণ নারীসুন্দরদের রূপের মধ্যে থাকে একপ্রকার বুনো বুনো ঘ্রাণ, একাকার থাকে কেমন আদিম চিত্রকলা। কবিমন সেই রূপবনের মৌ মৌতে কেন মৌয়াল হবে না? কবি তো তার অন্তর পোড়ানো গভীর আকুল চোখে সেই চিত্রকলা খুঁটবেই! গ্রাম্য সেই মানবীটি তার নরম প্রেমে সুফিকবি প্রেমিকটিকে নিগূঢ়তম ডাক পাড়লে সে তো সাড়া দেবে, দেবেই। দু’জন দু’জনায় অন্তরনগরে কেন হারাবে না? হারাল, হারালই।

সাত.
ঐ যে চাঁদ না, আকাশে, কত দূর সুদূর, রাতের ঘুমন্ত পঙ্কিল পৃথিবীকে দেখতে থাকে, সে গল্পটা বলল পরের। তারা দু’জন পুকুরঘাটটায় বসত এসে, বসে থাকত। একজন এই পাশে। আরেকজন ওই পাশে। মাঝখানে দূরত্ব, এই দূরত্বকে আরও নিকট মনে হয়। বসেই থাকত। আশ্চর্য বোধ হত চাঁদের, তারা দুজনে কেউ কোনো কথা বলত না। একটা কথাও না। কু শব্দটিও না। এই কবি প্রেমালাপ পাড়ত না, প্রেয়সীকে নিয়ে উপমা তুলত না পূন্নিমার মগ্ন চাঁদের সাথে। এই রকমই? ভাবের কোনো কি আদানপ্রদান হতো না দু’জনায়? প্রেমের গঞ্জে মন বিকিকিনির কারবার তারা কীভাবে চালাতো কাছে না এসে, কখনো কথা না বলে! চুপচাপ গম্ভীর থম মেরে কেন বসে থাকত তারা, দু’জন দুইদিক চেহারা ঘুরিয়ে? এভাবে কিছু হয় ওসব?
চাঁদ উঠতি বয়সের ছেলেপিলের এইসব কৌতূহলের সদুত্তর দিল না কোনো। মলিন হয়ে এল, তার পরের পনেরো দিন আকাশে অমাবস্যা ছিল।

সাত.
নদী খলবল করে উঠল। জীয়ল মাছে ঘাই দেয়ার মতো একটু ঢেউ উথলালে গ্রামবাসীরা চাইল নদীর দিকে। নদী কিছু জানে? জানে নাকি? সেই তো তার বুকেÑযদিও অগভীরÑপ্রেমের তরলকে ধারণ করার মতো গভীরতা রাখে সে সাধ্য কার! একমাত্র মানবহৃদয়, তবুও সবটুকু নিতে কি পারে? নদীকে জিজ্ঞেস করা যায়, সেই তো তার অগভীরে দুজনাকে ডুবতে দিল, প্রেমবাঁশরী রাখতে দিল। নদী কথা বলে। নদী গল্প বলে ওদের। নদী শেষের সংলাপ বলে।
‘এত কথা আমি পারি না। আমি যে আপনাকে ভালোবাসি, সেটা ভেতরে আটকে রাখছি।’ দুজনেই এই বাক্যটা হুবহু বলে উঠল আকস্মিক, অবিকল একই কন্ঠে, একই সাথে। প্রথম বর্ণটির উচ্চারণ একসাথে শুরু হয়ে শেষ বর্ণ। নদী ঘুমিয়ে ছিল তখন। এই কথার কোরাসে সে চমকাল, তার কান সজাগ হলো। দুই তরফেই বলবার কথাটি এইভাবে বেজে উঠল, পূর্বে কোনো কথা, সম্ভাবন-সম্ভাষণ ছাড়াই, আমরা শুনে অবাক, তারা কিন্তু অবাক হলো না। যেন আবর্তমান সময়ের গায়ে এমন দৃশ্যই লেখা।
‘ভালোবাসি কিন্ত পাব না তো কখনো।’
এবারও বাজল সেই দ্বৈত কণ্ঠ। ‘আমি তো চলে যাব, আমার দেশে, সেই সুদূর, তোমার কাছে রূপকথার শহর, ঢাকায়। ফিরে আসবার পথ নেই।’
‘আর আমি! কখনো এই আমার গ্রাম, আমার বাড়ি, নাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়া হবে না কখনো, পথ যে নেই যাবার। আপনি সুফি, আমি মালতী। মনে হচ্ছে, আপনি বিনা জীবন তো নয় এ, নরক। চলেন, উড়ে যাই। জিন্দেগির পায়রাকে মুক্ত বিহঙ্গ করে দিই। সে উড়ে উড়ে চলে যাক তার ঠিকানায়।’
‘আসেন মরে যাই।’ আগে কে বলল বাক্যটা, আর কে পরে, বোঝা গেল না। কিন্ত দু’জনেই ভেতর থেকে বলেছে, বোঝা গেলো।
এবার তারা কাছে এল। আরো কাছে এল। কৃষ্ণগহŸরে তারকা যেমন মিশে যেতে মিলে যেতে চায়, তারাও দু’জন দু’জনে, পরস্পর পরস্পরের গভীরে নামল…
এরপর নদীর বুকে ঝপ করে একটা শব্দ হলো।

জুন ২০১৮

ShareTweetShare

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১১ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১১ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মার্চ ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মার্চ ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি এপ্রিল ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি এপ্রিল ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মে ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মে ২০১৭ সংখ্যা

আমাদের সম্পর্কে

যোগাযোগ

সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা

© 2021 নবধ্বনি - Developed by Shabaka IT

No Result
View All Result
  • স্বাগত কলাম
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • মুক্তগদ্য
  • গল্প
  • রঙধনু
  • দিনলিপি
  • পুরোনো সংখ্যা

© 2020 নবধ্বনি - Developed by Shabaka IT.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Create New Account!

Fill the forms below to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist