সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ‘ছোটগল্প’। এর মাধ্যমে লেখক মানবজীবনের সেই অংশ তুলে ধরেন, যা শাশ্বত জীবন আর মানবতাবোধের মূর্ত কিংবা বিমূর্ত ছবি। ছোটগল্পকে কোনো সংজ্ঞার নিয়মকানুনে বাঁধা যায় না। এর বিচরণ বহুমাত্রিক। তারপরও এর একটি রূপ তুলে ধরার জন্য আমরা প্রায়ই রবি ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘বর্ষাযাপন’ কবিতার সেই পঙ্ক্তিগুলো স্মরণ করি, যেখানে বলা হয়েছে-
ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা, ছোট ছোট দুঃখকথা
নিতান্তই সহজ সরল-
সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি,
তারি দু-চারিটি অশ্রুজল।
নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা,
নাহি তত্ত্ব, নাহি উপদে-
অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হয়ে হইলো না শেষ।
রবি ঠাকুর কথাগুলো বলেছেন ১২৯৯ বঙ্গাব্দের ১৭ জ্যৈষ্ঠ। অথচ আজও ছোটগল্পের বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে আমাদের কবিতার এই পঙ্ক্তিগুলোর উল্লেখ করতে হয়। প্রকৃতপক্ষে ছোটগল্প জীবনের একটি খণ্ডিত অংশ হতে পারে। সেই অংশ দিয়ে জীবনের বিশাল রূপ দৃশ্যমান হয়। যেনো অনেকটা সেই ছোট জানালা, যা দিয়ে বিশাল আকাশটা দেখা যায়। আমাদের জীবনপ্রবাহে হাজার হাজার ঘটনার, উপলব্ধির সেই অংশটি ছোটগল্পের উপাদান, যা জীবন আর মানবতাবোধের পটভূমিকায় বিশেষত্ব লাভ করেছে। এখানেই এর মহত্ব এবং তাৎপর্য। এখানে কোনো তাত্ত্বিক কথা নেই, ঘটনার অতিরঞ্জিত বর্ণনা নেই এবং কোনো উপদেশবাণীও নেই। লেখক গল্পের ঘটনা, চরিত্র আর মার্জিত বিবরণের সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে চলেন যবনিকার শেষ প্রান্তে। তারপর যেনো মনে হবে, শেষ পরিণতিটা আরেকটুখানি জানা হলে ভালো হতো। বস্তুত লেখক সেটি পাঠকের জন্য ছেড়ে দেন। পাঠক ছোটগল্প পড়তে গিয়ে নিজের ভেতর যে ভুবন তৈরি করেন, সেখানে একটি সমাপ্তি বা উপসংহার টেনে নিতে পারেন, যেখানে তৃপ্তি-অতৃপ্তির একটা প্রভাব থেকে যায়।
ছোটগল্পে এক বা একাধিক সুনির্দিষ্ট এ্যাকশনের মাধ্যমে একটি ঘটনা বা কাহিনির বর্ণনা হয়ে থাকে। লেখক এই কাহিনি বা গল্প সেই সুনির্দিষ্ট এ্যাকশনের ধারাবাহিকতার ক্রমানুসার ধরে লেখেন। আর এটি বলতে গিয়ে এক বা ততোধিক ব্যক্তির সমাবেশ ঘটান এবং তাদের দ্বারা সেই ঘটনাক্রম ঘটে থাকে। এই ঘটনাক্রম যে এ্যাকশনের মাধ্যমে ঘটে থাকে আর পরিশেষে একটি কাহিনির সুবিন্যস্ত রূপ দেখা যায়, তাকে বলা হয় ‘প্লট’। ঘটনাগুলো কিছু ব্যক্তি বা চরিত্রের দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে ঘটে থাকে। এই ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের স্ব স্ব নিজস্বতা রয়েছে, যেমনভাবে রয়েছে তাদের পৃথক পৃথক ভূমিকা। তারা একেকজন একেকমতো কথা বলে। তাদের চেহারা আমাদের পরিচিত পরিবেশ থেকে তুলে নেওয়া অথবা কল্পনার জগৎ থেকে। তারপরও লেখকের লেখার স্টাইলে এই ব্যক্তিগুলো আমাদের চোখে স্বতন্ত্ররূপে মূর্ত হয়ে ওঠে। তাদের একেকটি চরিত্র পাঠকের চোখে পৃথকভাবে ভেসে ওঠে। এই চরিত্রগুলো গল্পের প্রাণ। তারা গল্পের মাঝে যেমন নির্দিষ্ট একটি ফ্রেমে বাঁধা থাকে, তেমনিভাবে সুনির্দিষ্ট এক বা একাধিক স্থানের মাঝেই তাদের বিচরণ। সুতরাং সময় এবং স্থানের ভূমিকা ও গুরুত্ব গল্পের কাহিনিকে জীবন্ত করে থাকে। যাকে আমরা বলতে পারি ছোটগল্পের ‘সেটিং’।
পরিশেষে যে কথাটি লেখক বলতে চান অথবা যা পাঠকমনে জেগে উঠতে পারে, তা গল্পের ‘মূল বক্তব্য বা থিম’। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যে বিভিন্ন রকমের, বিভিন্ন স্বাদের, বিভিন্ন গল্প রয়েছে, যেখানে লেখকগণ বিভিন্ন সময়ের হাজারও স্থানের ছোটগল্প লিখেছেন এবং লিখছেন। আর এসব ছোটগল্প যে বিচারেই বিশ্লেষণ করা যাক না কেনো, সেটা কখন, কোথায় কিংবা স্টাইল ও পরিধি ধরে বিচার করলেও উপর্যুক্ত উপাদানগুলো পাওয়া যাবে। মূলত এগুলো ছোটগল্পের ‘মৌলিক উপাদান’। বিষয়টি আরেকটুখানি পরিষ্কারের চেষ্টা করা যাক। একটি ছোটগল্পে, এমনকি বড়গল্পেও মূলত চারটি উপাদান থাকে। যেমন- ১. প্লট, ২. চরিত্র, ৩. সেটিং ও ৪. থিম। এগুলো ছোটগল্পকে জীবন্ত ও সুখপাঠ্য বৈশিষ্টমণ্ডিত করে।
১. প্লট : এটি হলো গল্পের মেরুদণ্ড। আভিধানিকভাবে ‘প্লট’ বলতে বোঝায়, যে ঘটনাসমূহ ধারাবাহিকতার ক্রমানুসার ধরে গল্পের মাঝে প্রকাশিত বা বিকশিত হয়, তা-ই ‘প্লট’। লেখক এখানে ঘটনাক্রমগুলো অত্যন্ত সুবিন্যস্তভাবে এক এক করে লেখেন। এটি কোনোক্রমেই এলোমেলো হয় না। এটি কাহিনির প্রয়োজনে কোনটি আগে কোনটি পরে, লেখক তা তার দক্ষতার গুণে সাজিয়ে থাকেন। এই সুবিন্যস্ত ধারাক্রম কাহিনিকে একটি পরিণতি বা সমাপ্তির দিকে নিয়ে যায়। তাই লেখককে গল্প লেখার সময় কাহিনির একটি ধারাক্রম সাজিয়ে নিতে হয়। তিনি গল্পের মূল থিমকে লক্ষ্য করে কোথায়, কখন ও কোন ঘটনার বিবরণ দেবেন, তা দক্ষতার সঙ্গে নির্ধারণ করেন। লেখকগণকে বেশিরভাগ ছোটগল্পে ‘প্লট’ সাজানোর জন্য পাঁচটি কাঠামো বা উপাদান অনুসরণ করতে দেখা যায়। যথা- ১. ভূমিকা বা শুরু, ২. ঘটনার আরোহণ, ৩. চরম পরিণতি বা ক্লাইমেক্স, ৪. ঘটনার অবরোহণ ও ৫. সমাপ্তি বা পরিশেষ।
১) ভূমিকা বা শুরু : ছোটগল্প শুরু করতে হয় একটি আকস্মিক ঘটনা বা ঘটনার কথা দিয়ে, যাতে পাঠক খুব সহজেই পরবর্তী লেখাগুলোয় আকর্ষিত হতে পারেন। এটি শুধু যে ঘটনার কথা হতে হবে, এমন কথা নেই; সেটি চরিত্র বর্ণনা, কাহিনির পরিস্থিতি, সংঘাতময় কোনো কথা, সামগ্রিক কাহিনির সেটিং অথবা গল্পের থিমের বক্তব্য দিয়েও শুরু করা যেতে পারে; যেখানে তা পাঠকের কাছে আকস্মিক বিস্ফোরণের মতো মনে হতে পারে এবং তিনি আগ্রহের সঙ্গে গল্প বা কাহিনির পরবর্তী অংশে সহজে প্রবেশ করতে পারেন।
২) ঘটনার আরোহণ : গল্পে ঘটনা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ অংশে এটির সূত্রপাত ও তার এগিয়ে যাওয়া দেখতে পাওয়া যায়। পাঠক লেখকের সঙ্গে সঙ্গে ঘটনার ভেতর সংশ্লিষ্ট হয়ে যান। তার চোখের সামনে ঘটতে থাকে একেকটি ঘটনা। এই ঘটনাগুলো হতে হয় আকর্ষণীয়, প্রয়োজনানুগ, বাহুল্যমুক্ত, কাহিনির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা সামঞ্জস্যপূর্ণ। এসব ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটতে ঘটতে একটি পরিণতির দিকে অগ্রসরমান থাকে। লেখক মূলত ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে এখানে সেই ঘটনাগুলোর জন্য চরিত্র নির্মাণ করেন অথবা সৃজিত সেই চরিত্রগুলো ঘটনা ঘটিয়ে চলে। এ ঘটনাগুলোর মাঝে পারস্পরিক মিল-অমিল ও দ্বন্দ-সংঘাত গল্পের কাহিনিকে একটি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। লেখক যা বলতে চেয়েছেন, গল্প শেষে পাঠক তা সহজে আবিষ্কার করেন।
৩) চরম পরিণতি বা ক্লাইমেক্স : ছোটগল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। এখানে লেখক ঘটনার যে ধারানুক্রম বর্ণনা দেন এবং যেখানে ঘটনা ও চরিত্রগুলোর মাঝে মিল-অমিল ও দ্বন্দ-সংঘাত, চরিত্রগুলোর নিজ নিজ স্বকীয়তা ও তাদের স্বতন্ত্র ভূমিকা গল্প বা কহিনিকে পাঠকের মনন জগতে চাক্ষুস বা জীবন্ত করে চলে, তার চূড়ান্ত ও আবেগময় এক পরিণতি আবহ তৈরি হয়। পাঠক এখানে গল্পের ও চরিত্রের মাঝে সমস্যা বা বর্ণিত ঘটনার একটি চরম রূপ দেখতে পান। ঘটনা ও চরিত্রগুলোর মাঝে সংঘটিত বিভিন্ন এ্যাকশনের এই চরম রূপ পরবর্তীতে কাহিনির পরিণতি বা শেষ নির্ধারণ করতে সহায়ক হয়।
৪) ঘটনার অবরোহণ : ছোটগল্পে বর্ণিত কাহিনির চরম পরিণতি নির্ধারণ করে দেয়, ঘটনাগুলোর শেষ কিভাবে হতে যাচ্ছে। এখানে বর্ণিত কাহিনি এবং তার মাঝে ঘটনা ও চরিত্রগুলোর মিল-অমিল ও দ্বন্দ-সংঘাত নিম্নমুখী বা সমাধানমূলক হতে থাকে। পাঠককে একটি চূড়ান্ত পরিণতি (তা স্বস্তিদায়ক বা আনন্দের বা বিষাদের হতে পারে) সেদিকে ধাবিত করে। তিনি বুঝে নিতে পারেন, গল্পের শেষ কোথায় ও কিভাবে হতে যাচ্ছে!
৫) সমাপ্তি বা পরিশেষ : ছোটগল্প শেষ হয়েও শেষ হয় না। পাঠকের মনে একটি অশেষের জিজ্ঞেস বা অতৃপ্তি রেখে দেয়। প্রকৃতপক্ষে এখানেই ছোটগল্পের স্বার্থকতা। কাহিনির সূত্রপাত, ঘটনা ও চরিত্রগুলোর মাঝে বিভিন্ন এ্যাকশন, সেসবের দ্বন্দ-সংঘাত-সামঞ্জস্য ছোটগল্পকে যে পরিণতির দিকে নিয়ে যায়, মূলত এটিই সেই কাহিনির বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত। লেখককে নির্ধারণ করতে হয়, তিনি আসলে এই কাহিনির দ্বারা কী বলতে আগ্রহী এবং তিনি কোথায় কোন অবস্থানে থেকে সেই সিদ্ধান্ত বা বক্তব্য বলবেন। এটিকে সমগ্র কাহিনির ‘মূল প্রতিপাদ্য’ বলা যেতে পারে।
একটি ভালো প্লটের বৈশিষ্ট্য
ছোটগল্পে ‘সংঘাত’ প্লটের জীবন হিসেবে অভিহিত। গল্পের কাহিনির মাঝে যে ঘটনা বলা হয় ও যেসব চরিত্র সৃজন করা হয়, সেগুলোর ভেতর একটির সঙ্গে আরেকটির সংঘাত গল্পের মূল পরিণতির জন্য অবশ্যম্ভাবী। এই এ্যাকশনগুলো না হলে কাহিনি অগ্রসর হতে পারে না। এই সংঘাতগুলোর কী পরিণতি হচ্ছে, চরিত্রগুলো তাদের অবস্থান থেকে আর কোথায় যাচ্ছে অথবা সমস্যা থেকে মুক্তি পাচ্ছে কিনা, তা জানতে পাঠক আগ্রহ নিয়ে থাকেন। লেখক সেগুলোকে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করেন। গল্পের প্লট সমস্যা বা ঘটনার ভেতর আবর্তিত হয়। ঘটনার আরোহণ সংঘাতের ওপর ভিত্তি করে চলে ও কাহিনিকে গতিশীলতা এনে দেয়। এখানে চরিত্রগুলোর জীবনে নানান সংঘাত অথবা গল্পে বর্ণিত কাহিনির সংঘাত প্রধান উপজীব্য।
ভালো প্লট নির্মাণের দক্ষতা
সংঘাতগুলো সাজানোর ওপর নির্ভর করে বিষয়টি। এই সংঘাত দু’ভাবে হতে পারে : ১) কাহিনির মূল ঘটনা বা কেন্দ্রীয় চরিত্রকে আবর্তিত করে অথবা ২) কাহিনির মূল ঘটনা বা কেন্দ্রীয় চরিত্রকে যা বিরোধিতা করছে, তাকে ঘিরে। তবে এই সংঘাতের মাঝে কেন্দ্রীয় চরিত্র সবসময় পাঠকের সহানুভূতি পেয়ে থাকে। এটি অনেকটা গল্পে বর্ণিত নায়ক ও ভিলেনের মধ্যকার সম্পর্কের মতো। আবার সংঘাত দু’ধরনের হতে পারে।
১) বাইরে থেকে সংঘাত : যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র বা অন্যান্য চরিত্রগুলোর নিজেদের কোনো হাত নেই এবং তা ঘটনা বা বিপরীত চরিত্র কর্তৃক আরোপিত। এখানে এই চরিত্রগুলো বাইরে থেকে আরোপিত সংঘাত থেকে মুক্তির পথ খোঁজে। সেজন্য সংগ্রাম করে।
২) অভ্যন্তরীণ সংঘাত : যেখানে কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্র বা চরিত্রগুলো নিজেদের মাঝে এই সংঘাত তৈরি করে ও ঘটনাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এখানে চরিত্রগুলোর ভালোমন্দ লাগার অনুভূতি, বিশ্বাস, আশা-হতাশা, স্বপ্ন-স্বপ্নভঙ্গ, ইত্যাদির বর্ণনা হতে পারে।
সফল প্লট নির্মাণের কৌশল
একটি ভালো গল্পের মূল ভিত্তি প্লটের সফলতার ওপর নির্ভর করে। বলা যায়, পাঠক একটি জমজমাট গল্প পড়ে যখন অভিভূত হন, তখন এটিই প্রমাণিত হয়, লেখক খুব সফলভাবে কাজ করে স্বার্থক প্লট নির্মাণে দক্ষতা দেখিয়েছেন। সফল প্লট নির্মাণের কয়েকটি কৌশল আছে। যেমনÑ ক) সাসপেন্স বা অনিশ্চয়তা, খ) পরিণতির পূর্বাভাস, গ) অতীতের কথা বা স্মৃতিচারণ, ঘ) গল্পের কাঠামো, ঙ) অবাক করা সমাপ্তি।
ক) সাসপেন্স বা অনিশ্চয়তা : ছোটগল্প শুরু করতে হবে আকস্মিক একটি কথা বা ঘটনার সূত্রপাত দিয়ে, যা পড়ে প্রথমে পাঠক চমৎকৃত হবেন ও গল্পের ভেতরে অজানা-অনিশ্চিত কী আছে, তা জানার জন্য আগ্রহী হবেন। তার ভেতর গল্পের সম্পূর্ণ কাহিনি জানার জন্য একধরনের তাগিদ তৈরি হবে।
খ) পরিণতির পূর্বাভাস : পাঠককে এমন অনিশ্চিত, জটিল বা রহস্য আচ্ছন্ন কাহিনিতে নিয়ে যাওয়া যাবে না, যা থেকে তিনি বিরক্ত হন। গল্প হতে হবে তার চেনাজানা মানুষজন ও পরিবেশ থেকে। এ কথার অর্থ এই নয়, কল্পনা ও রহস্যের জগৎ থেকে কিছু লেখা যাবে না। বস্তুত লেখক গল্পের কাহিনিতে অতিরিক্ত ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একই কথা ও বর্ণনা দেবেন না। গল্পের কাহিনিতে পাঠককে ধীরে ধীরে নিয়ে যেতে যেতে লেখক গল্পের একটি পরিণতির আভাস দেবেন। এটি ভালো গল্পের জন্য জরুরি এবং তা পাঠকের মনের আকাঙ্খাকে পরিপূর্ণ করে তোলে। লেখক গল্পের মাঝে মাঝে এমন কিছু ক্লু ছড়িয়ে দেবেন, যা থেকে পাঠকের এই উপলব্ধি হবে, এটি তার পরিচিত ভুবনের গল্প। তিনি অনুমান করতে পারবেন, কাহিনির পরবর্তী ধাপগুলো কী হতে যাচ্ছে!
গ) অতীতের কথা বা স্মৃতিচারণ : ছোটগল্পে এই কৌশলটি খুব স্বার্থকভাবে প্রয়োগ করা যায়। এখানে লেখক গল্পের সেই অংশটুকু বলতে পারেন, যা কাহিনির শুরুতে বলা হয়নি, কিন্তু কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুরোনো কথা বা ঘটনাগুলো বলা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকাল অনেক লেখক এই কৌশলটির সফল প্রয়োগ করেন, যাতে পাঠকের মনে সেই পরিচিত মানুষজন আর ঘটনার বাস্তবতা দেখা যায়। এটি মূলত গল্পের প্লটের সেই পরিচিত অংশ, যা পুরো কাহিনির গতিময়তা দিয়ে থাকে।
ঘ) গল্পের কাঠামো : এটি হলো গল্পের ভেতরের গল্প; অর্থাৎ লেখক যে গল্প বলতে শুরু করেছেন এবং সেজন্য নানান চরিত্র নির্মাণ করেছেন, সেই চরিত্রগুলোর নিজস্ব গল্প আছে, আর সেসবের সুবিন্যস্ত উপস্থাপনা হলো গল্পের কাঠামো। ভালো প্লট একটি গল্পের কাঠামো ছাড়া তৈরি করা যায় না। এখানে লেখক গল্পের চরিত্র নির্মাণ ছাড়াও কল্পনাশক্তি, আশা-আকাঙ্খা-স্বপ্ন-ব্যর্থতা, পরিবেশ ও আমেজ নির্মাণ করে গল্পকে এগিয়ে নিয়ে থাকেন।
ঙ) অবাক করা সমাপ্তি : লেখক যে আকস্মিক ও আকর্ষণীয় বাক্য নিয়ে গল্পের সূত্রপাত করেছেন, তার সমাপ্তিও টেনে দেবেন এক আকস্মিক সমাপ্তি দিয়ে; যা হয়তো পাঠকের কাছে বিস্মিত এক পরিণতির মতো লাগে। সতর্ক পাঠক এমন একটি সমাপ্তির প্রত্যাশা করেন।
২. চরিত্র : ছোটগল্পে যে কেন্দ্রীয় চরিত্র থাকে, তা অন্যান্য পার্শ্ব চরিত্রগুলো অপেক্ষা অনেক পরিস্ফুট ও স্বচ্ছ। মূলত গল্পের কাহিনি ও বর্ণনা তাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এখানে লেখক সেই চরিত্রের পেছনের কথা ও বর্তমানের কথা বলেন। তার ভাবনা, উপলব্ধি, স্বপ্ন-সাধ, আশা-হতাশা, অভ্যেস, মনমানসিকতা, ব্যক্তিত্ব, ইত্যাদি বিষয়গুলো গল্পের নিরীখে যেমন প্রযোজ্য তেমনিভাবে লিখে থাকেন। এক-দুটি কথাতে বা ঘটনাতে লেখক এই চরিত্রটির সার্বিক প্রতিচ্ছবি আঁকতে পারেন। অন্যান্য পার্শ্ব ও লঘু চরিত্রগুলোর কথা বাদ দেওয়া যায় না। তবে তা কেন্দ্রীয় চরিত্রের মতো বিশদ নাও হতে পারে। লেখক যে চরিত্র সৃজন করেন, ছোটগল্পের ক্ষেত্রে তাকে ‘চরিত্রায়ন’ বলা যায়। লেখক সাধারণত দুটি মৌলিক কৌশল অনুসরণের দ্বারা ‘চরিত্রায়ন বা চরিত্র সৃজন’ করে থাকেন। যথা-
১) সরাসরি চরিত্রের কথা বলা, ২) ঘটনা বা চরিত্রের ভাবনা, উপলব্ধি, স্বপ্ন-সাধ, আশা-হতাশা, অভ্যেস, মনমানসিকতা, ইত্যাদির মাধ্যমে পাঠকের কাছে চরিত্রটির মূর্ত রূপ তুলে ধরা। গল্পের চরিত্র কাহিনির প্রয়োজনে নানারকমের হতে পারে। লেখক নিজেই সৃষ্টি করেন তার কাহিনির নায়ক-নায়িকা-ভিলেন-সহযোগীগণ কেমন মানুষ হবে। তারা কি পরিচিত ভূবনের নাকি কল্পনার জগতের? মূলত সফল গল্পের প্রয়োজনে পরিচিত ও বাস্তব বা বাস্তবের মতো চরিত্র সৃজন করা জরুরি। এই চরিত্রগুলোর মাঝে নানান ঘটনা, সংঘাত, মিল-অমিল গল্পের কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যায় ও একটি পরিণতি দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে লেখকের অভিজ্ঞতা ও কল্পনাশক্তি অনেক কাজ করে থাকে। লেখক তার কাহিনির প্লট অনুসারে চরিত্রের প্রতিচ্ছবিকে নানাভাবে মূর্ত করে তোলেন। যেমন-
১) প্রধান বা কেন্দ্রীয় চরিত্র। এই চরিত্রটি সমগ্র গল্পে একটি বিশেষ ও স্বতন্ত্র ভূমিকা নিয়ে এগোবে। তার কথাবার্তা ঘটনা, সংঘটন, ইত্যাদিতে একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাবে। এই চরিত্রটি গল্পের কাহিনির উদ্দেশ্য ও পরিণতিতে বড় ও মূল ভূমিকা রাখে। ২) পারিপার্শ্বিক চরিত্র। এই চরিত্র বা চরিত্রগুলো গল্পের কাহিনির বিস্তৃতির জন্য প্রয়োজনীয়; কিন্তু তার বা তাদের অবস্থান ও ঘটনাপ্রবাহ গল্পে অনেকটা অতিথির মতো। তাদের ভূমিকা গোলাপ প্রস্ফুটিত হওয়ার পেছনে গাছকে মাটির রসে সঞ্জীবিত করার মতো নেপথ্য শক্তি। পাঠক তাদের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে ‘কম’ পরিচিত হন, তাদের সীমিতভাবে দেখেন ও শোনেন; কিন্তু কাহিনির এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের ভূমিকা অনেক বেশি ও জরুরি। ৩) সরল ও অপরিবর্তনীয় চরিত্র। গল্পে এ চরিত্রগুলোর অবস্থান এক মতো। অর্থাৎ পাঠকের মনে তাদের একই ধাঁচ ও ছবি ফুটে ওঠে। ৪) পরিবর্তনশীল চরিত্র। এই চরিত্রগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে একক ব্যক্তিত্ব বা চরিত্ররূপ লাভ করে থাকে। ৫) নিশ্চল বা স্থির চরিত্র। এ চরিত্রটির বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো গল্পের ভেতর পরিবর্তিত হয় না। নিশ্চল একটি ভূমিকা নিয়ে থাকে। ৬) গতিময় চরিত্র। এ চরিত্রটি গল্পের কাহিনির মাঝে বিভিন্ন ঘটনার সূত্রপাত করে গল্পকে গতিশীল করে থাকে। ৭) স্টিরিওটাইপড্ বা ছাঁচে ঢালা চরিত্র। এ চরিত্রগুলো আমাদের অতি জানাশোনা ও পরিচিত ব্যক্তি, যাদের আগমন, আচরণ খুব চেনা ও আগাম বলে দেওয়া যায়, তারা কী করবে!
লেখক তার গল্পের কাহিনির প্রয়োজনানুসারে চরিত্রগুলোর সমাবেশ করেন। তাদের দ্বারা নানান কথা বলান, ঘটনা ঘটান এবং গল্পকে সমাপ্তির দিকে নিয়ে যান। এই চরিত্রগুলো কখনও সরাসরি বা প্রত্যক্ষ, আবার কখনও প্রচ্ছন্ন বা পরোক্ষভাবে উপস্থাপিত হয়। যেমন- আমরা যদি একজন শিক্ষকের একটি চরিত্র উপস্থাপন করতে চাই, তখন সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে বলতে পারি, তিনি একজন শিক্ষক, স্কুলে শিক্ষকতা করেন। আবার পরোক্ষভাবে যদি দেখানো যায়, তিনি স্কুলের শ্রেণিকক্ষে পড়াচ্ছেন, তাহলে সহজে বোঝা যায়, চরিত্রটি স্কুলের শিক্ষক।
৩. সেটিং : গল্পের কাহিনিতে যে সময় ও স্থানের কথা বলা হয় অর্থাৎ ঘটনাটি কোন জায়গার এবং সময়ের, সেটিকে গল্পের সেটিং বলা যায়। স্পষ্টভাবে বলতে গেলে গল্পের কাহিনি অমুক জায়গায় অমুক সময়ে ঘটেছে বা ঘটছে, এমন একটি প্রেক্ষাপটকে গল্পের সেটিং বলে। সাধারণত লেখক কাহিনির বাস্তবতার আবহ তৈরি করতে জায়গা ও সময়ের বর্ণনা করে থাকেন। গল্পের ভেতর যদি বলা হয়, ফুটবল খেলার মাঠ, সময় বিকেলবেলা এবং ঝিপঝিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে, তাহলে পাঠকের মনে ঠিক অনুরূপ একটি ছবি ভেসে ওঠে। এই সেটিং-এর ওপর চরিত্রগুলোর নানান ভূমিকা, ঘটনাপ্রবাহ, ধারণা, দ্বন্দ-সংঘাত, ইত্যাদি বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে; তেমনিভাবে বাস্তবানুগ মনে হয় এবং গল্প এগিয়ে চলে। পাঠক প্রথমেই এই সেটিংকে ধরে গল্পের ভেতরে প্রবেশ করেন এবং ধীরে ধীরে মিশে যান। মূলত সেটিং-এর মাধ্যমে লেখক তার কাহিনিকে দৃশ্যমান করার সুযোগ লাভ করেন। কোনো কোনো লেখক সেটিংকে ক্রমানুসারে ধীরে ধীরে উপস্থাপন করেন, প্রয়োজনমতো জমিয়ে বিবরণ দেন; আবার কোনো কোনো লেখক খুব বেশি প্রাধান্য না দিয়ে চরিত্রগুলোর মাধ্যমে গল্পের সেটিংস কাহিনিতে তুলে ধরেন। তবে যেভাবেই হোক না কেনো, গল্পে সেটিং আবশ্যক।
কয়েকটি পদ্ধতিতে সেটিং গড়ে তোলা বা উপস্থাপন করা যায়। যেমন- ১) ডায়লগ। গল্পের চরিত্র বা চরিত্রগুলোর কথার মাধ্যমে সেটিং তুলে ধরা যায়। যেমন- একটি চরিত্র আরেক চরিত্রকে উদ্বেগের সঙ্গে বলছে-‘এতো রাতে না গেলেই কি নয়?’ ২) শব্দের মাধ্যমে সেটিং তুলে ধরা যায়। যেমন- দূর হতে ভেসে আসা ট্রেনের হুইসেলের শব্দে বোঝা যায়, একটি ট্রেন কিছুক্ষণ পর চলে যাবে এবং জায়গাটা রেলস্টেশন বা রেললাইনের কাছাকাছি। ৩) গন্ধের বর্ণনা দিয়ে। যেমন- তরকারি পোড়ার গন্ধের কথা দিয়ে লেখক রান্নাঘরের ছবি আঁকতে পারেন।
পাঠক গল্পের কাহিনিতে সেটিংকে ধরে এগিয়ে যান। কেননা মানুষের স্বভাব, ভিন্নতা, বসবাস, ভাবনা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, ঐতিহ্য, পেশা, পরিবেশ-পরিস্থিতি, জীবনপ্রবাহ ও জটিলতা, ইত্যাদির সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তারা গল্পের ভেতর সেটিকে দেখতে পছন্দ করেন। গল্পের মাঝে চরিত্রগুলোর ভাবনা ও এ্যাকশন সেটিং-এর দ্বারা প্রভাবিত হয় অথবা উল্টোটিও হতে পারে। তাদের ঐ সমস্ত ভাবনা ও এ্যাকশন সেটিং তৈরি করছে। এটি কিভাবে সাধিত হয়, একটু দেখা যাক। ১) সময়। গল্পের কাহিনিতে বর্ণিত সময় গল্পের পুরো প্লটকে প্রভাবিত করে। যেমন- গভীর রাতে গল্পের চরিত্র এক ভূতুড়ে বাড়িতে এসেছে। এখানে পাঠকের মনে ভয়মিশ্রিত এক কৌতূহলের সৃষ্টি করে। ২) জায়গা বা স্থান। গল্পের কাহিনিকে এটিও প্রভাবিত করে। যেমন- যানজটপূর্ণ সড়কের উল্লেখ করলে আমরা খুব সহজেই সেই দৃশ্যটি চোখে ভেসে উঠতে দেখি। ৩) ঘটনা। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ঘটনার সংঘটন সেটিং বুঝতে সহায়তা করে। যেমন- চলন্ত বাস থেকে এক যাত্রী লাফ দিয়ে নেমে গেলো।
৪. থিম : একটি স্বার্থক ছোটগল্প (তা সিরিয়াস বা সাধারণভাবে ভালো লেখা হলেও) অবশ্যই সুখপাঠ্য। কেননা এটি মানুষের জীবন ও জগতের কথা বলে। পাঠক গল্পের কাহিনিতে বিধৃত ঘটনা, ঘটনার পেছনের ঘটনা, চরিত্র ও চরিত্রগুলোর বিভিন্ন এ্যাকশন পড়েন এবং তার নিজের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ, বিচার-বিবেচনা, জানাশোনা, দেখা বা অভিজ্ঞতার সঙ্গে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে মিলিয়ে নেন। মূলত জীবনের এই বিষয়টি যা গল্পে লেখা হয়, সেটিই ‘গল্পের থিম’। পাঠক গল্প শেষ করার পর এটি বুঝতে পারেন, মূলত এই বক্তব্য বা আমেজ সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই গল্পটি। তবে অধিকাংশ ছোটগল্পে ‘গল্পের থিম’ সরাসরি বলা হয় না। এখানে পাঠক পড়া শেষে নিজেই সেটি তৈরি করে নেন। তিনি তার ধী-শক্তি বলে বক্তব্যটির একটি ছবি এঁকে নেন এবং সাধারণভাবে একটি উপসংহার বা সমাপ্তিতে আসেন। লেখক তার ‘গল্পের থিম’ বেশকিছু পদ্ধতিতে প্রকাশ করতে পারেন। যথা- ১) সরাসরি গল্পের শিরোনাম বা পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণের মাধ্যমে মূল বক্তব্য সম্পর্কে আভাস দিয়ে। ২) গল্পের ভেতর কোনো একটি অংশে চরিত্রের অভিজ্ঞতা বর্ণনার মধ্য দিয়ে। ৩) গল্পের চরিত্রের কোনো উক্তি দিয়ে। এ বিষয়গুলো ছাড়াও ছোটগল্পের ক্ষেত্রে আরও কিছু বিষয় যথেষ্ট মনোযোগের দাবি রাখে। যেমন- ১) গল্পের একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম একটি সম্পদ। এ কথাকে সামনে রেখে গল্পের শিরোনাম ঠিক করতে হয়। এটি হবে ছোট, আকর্ষণীয়, বিষয় ও থিম সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ গল্পটি যদি মঙ্গলগ্রহে অভিযান সম্পর্কিত হয়, তাহলে ‘মঙ্গলগ্রহে অভিযান’ হতে পারে। যদি কোনো চরিত্রের বধূ খোঁজা নিয়ে কৌতুক বা রম্যগল্প হয়, তাহলে ‘বধূ অন্বেষণ’ ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। তবে শিরোনাম দেওয়ার ক্ষেত্রে লেখকের দক্ষতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এমন শিরোনাম দেওয়া উচিৎ, যা শুধু আকর্ষণীয় হবে না, উপযুক্ত শব্দচয়ন ও বিন্যাসনির্ভর। যা পাঠকের মনে কৌতূহল জাগাবে। শিরোনাম কখনোই দীর্ঘ ও অপ্রাসঙ্গিক হবে না। বলা হয়ে থাকে, একটি ভালো শিরোনাম গল্পকে মূল্যবান করে তোলে। ২) লেখার বিষয়ে নির্ভুল বানান, সঠিক শব্দচয়ন ও মার্জিত বাক্যের ধারাবাহিকতা সুসামঞ্জস্যপূর্ণ করা শ্রেয়। খাপছাড়া ও অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্যের বাহুল্য বর্জন করতে হবে। অনুরূপভাবে রিপিটেশন করাও বর্জনীয়। ৩) গল্পের আকার হতে হবে সহনীয় পর্যায়ের। তবে এক্ষেত্রে নানাজনের ভিন্ন ভিন্ন কথা রয়েছে। কেউ ছোটগল্পকে ১৫০০ থেকে ৩০০০ শব্দের ভেতর সীমাবদ্ধ করতে চান। কেউ কেউ আবার বলে থাকেন, ‘ছোটগল্প আকারে হবে ৩০০০ থেকে ৪০০০ শব্দের ভেতর, কিন্তু কোনোক্রমেই ৩৬০০ থেকে ৪৩০০ শব্দের অতিরিক্তি হবে না।’ আবার এটাও দেখা যায়, কোনো কোনো ছোটগল্প মলাটবদ্ধ বইয়ের পৌনে একপৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে। কেউ কেউ এগুলোকে ‘অণুগল্প’ বলে থাকেন। দেখা যায়, লেখক ছোটগল্প রচনায় তার পরিধির বিষয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা আদায় করে নেন। তবে যারা সংবাদপত্রে ছোটগল্প লিখতে আগ্রহী, তাদের উচিৎ হবে একটি ছোটগল্পের আকার ১৫০০ থেকে ১৮০০ শব্দের ভেতর সীমিত রাখতে। ৪) গল্পে বর্ণিত বিভিন্ন প্রেক্ষাপট, চরিত্রগুলোর বাস্তবতা যুক্তিযুক্ত করা উচিৎ। যে তথ্য ও তত্ত্ব গল্পে এসে যায়, তা সঠিক হতে হবে। কেননা পাঠক আজগুবি বা ভুল তথ্য দ্বারা বিরক্ত হন। তেমনিভাবে কোনো জ্ঞান দেখানো ও সেকেন্ড হ্যান্ড ইনফরমেশন দেওয়ার চেষ্টা করা যাবে না। ৫) গল্পের কাহিনিতে নানান মিশ্র থিমের সমাবেশ না ঘটানোই শ্রেয়। একটি বক্তব্য একটি গল্পের জন্য যথেষ্ট। প্রয়োজনে ভিন্ন থিমের জন্য ভিন্ন গল্প লেখা যেতে পারে। গল্পে মূল বক্তব্যের বারবার উল্লেখ পরিহার করা দরকার। আবার ভাষার নানান কারুকাজ দেখাতে গিয়ে যেনো দুর্বোধ্য বা প্রবন্ধের মতো কঠোর না হয়, সেটি লক্ষ্য রাখতে হবে।