নবধ্বনি
  • হোম
  • স্বাগত কলাম
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • মুক্তগদ্য
  • গল্প
  • রঙধনু
  • দিনলিপি
  • পুরানো সংখ্যা
No Result
View All Result
নবধ্বনি
  • হোম
  • স্বাগত কলাম
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • মুক্তগদ্য
  • গল্প
  • রঙধনু
  • দিনলিপি
  • পুরানো সংখ্যা
No Result
View All Result
নবধ্বনি

ট্রাভেলগ : এ জার্নি টু কাতার

নাবিলা আফরোজ জান্নাত

ট্রাভেলগ : এ জার্নি টু কাতার
Share on FacebookShare on Twitter

এক
ঘড়িতে সময় দেখাচ্ছে রাত ৩:১৪। অথচ এখানে এখন বাজে ১২:১৪। আসার পর বারবার লোকেশন আপডেট দেওয়ার পরও টাইমটা চেঞ্জ হচ্ছে না। থাক, প্রতিবার টাইম দেখে যদি তিনঘণ্টা বিয়োগ করতেই না পারি, তাহলে কীসের ম্যাথে পড়ি আমি?
ঢাকা থেকে ফ্লাইট ছিল সকাল ৮:২৫-এ। এখানে পৌঁছেছি কাতার সময় ১১:৪০-এ, সেখান থেকে ভাইয়ার বাসায় আসতে আসতে বেলা প্রায় একটা। ‘ভাইয়ার রুম’ বলে অভ্যস্ত আমি। ‘ভাইয়ার বাসা’ টার্মটা এই প্রথম ইউজ করছি, এখানে এটা আসলেও ভাইয়ার বাসাই, সময় কী দ্রুত দৌড়াচ্ছে!
জার্নিটা ভালো ছিল, ফুড বাদে, খাওন-দাওনে টেস্ট পাইনি আমি। পারস্য উপসাগরের সবুজ পানি, মাছ ধরার সারি সারি নৌকা দেখতে দেখতে আর ভাইয়া-বাবার গল্প শুনতে শুনতে এয়ারপোর্ট থেকে আসার পথে অল্পস্বল্প শহর দেখা হলো। ট্যুরের পেছনের কারিগর ভাইয়া।
ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম। দেখি, ভাইয়া-ভাবী আমার পছন্দের অ্যাপল জুস এনে রেখেছে। কোন ব্র্যান্ডের জুসটা পছন্দ করতাম, সেটা আমার মনে না থাকলেও ভাইয়ার মনে আছে! অজান্তেই প্রকাশ পেয়ে যাওয়া এইসব স্নেহে আমি আর্দ্র হই বারবার, বারবার…। তবে সেই ব্র্যান্ডের জুস কেনা যায়নি, কারণ অবরোধের জন্য সৌদি থেকে ওটা আর আসে না কাতারে।
এরপর আরও কিছুক্ষণ সময় গেল, বেরুলাম সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায়। হু, সন্ধ্যা-ই, পৌনে পাঁচটায় মাগরিবের আজান দিল।
ছন্নছাড়া এলোমেলো হাঁটার অভ্যাস আমার বেশ প্রিয়, বাংলাদেশে থাকলে সেটা রাতের বেলা সম্ভব হয় না। এখানে বেরুলামই সন্ধ্যায়। বাসা থেকে বের হয়ে ডানদিক থেকে শুরু করলাম, ঐ একবারই আমার দিক নির্দিষ্ট করা; তারপর কোথায় হাঁটি, কোথায় যাইÑকিছু জানি না।
আসার আগে নিকাব পরার স্টাইল চেঞ্জ করে এসেছি, এই নিকাবে আরামসে খাওয়া যায়, আইসক্রিম খাই আর হেঁটে বেড়াই।
রাস্তার দুইধারের বিল্ডিংয়ের ডিজাইন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা আমার পুরনো অভ্যেস, এখানেও রইলো সে। অধিকাংশ বাড়ির আর্কিটেকচার খুব সুন্দর, ফোর্টের মতো।
লাক্সারি ব্যাপারটা আজীবন আমার কাছে মজা নেওয়ার ব্যাপার, আর যা-ই হোক, লাক্সারি আমার সহ্য হয় না, এ আমাকে টানে না, আনন্দও দেয় না, শুধু ফান করার কিছু টপিক উপহার দেয়। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এই দেশের রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় লাক্সারি। আমি দেখি আর মজা নিই।
রাস্তার পাশের দোকানে সাজিয়ে রাখা জামার দাম ছয় হাজার রিয়াল। এর চেয়ে আকাশ দেখতে দেখতে হাঁটা আনন্দের, মনে হলো এই প্রথম যেন চিকন চাঁদ দেখলাম। আচ্ছা, চিকন চাঁদকে কীসের সঙ্গে যেন তুলনা করে? মনে পড়ছে না… কাস্তে?
মাঝে মাঝে তারা দেখা যাচ্ছে, খালি রাস্তার ফুটপাতে সোডিয়াম বাতির আলোর মতো আলোয় হাঁটতে হাঁটতে আমি বিষণœ হয়ে যাই, কোনো কারণ ছাড়াই। একে বলে অভিজাত বিষণœতা, এই লাক্সারিতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
আমার বারবার সৌদি আরবের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। সেই ছোট্টবেলার বিড়ালকাহিনি এখনো ভুলে যাইনি। সৌদির প্রতিবেশী এই আরবের বিড়ালগুলো দেখে আমি এদিক-সেদিক পালাই। এরা দেখতে আমাদের দেশি বিড়ালের মতো না একদম। ওখানেই সহ্য হয় না, আর ইনারা তো আরবের বিড়াল।
দু’টো মার্কেটের এ-মাথা ও-মাথা ঘুরে ফেললাম। লাক্সারি দেখি আর মজা পাই। উইন্ডো শপিং জিনিসটা আমার ধাতে নেই, কাজের জিনিস কিনতেই অন্যদের ঠেলি। তা-ও ভেবেছিলাম, যদি শপিং মলে গেলে অকারণ কেনাকাটা শুরু করি, সেটা নিজের কাছেই বিরক্তিকর হবে! নিজের মধ্যে দুইটা ক্যারেক্টার ঝগড়া শুরু করে দেবে। এর প্রতিকার দেশ থেকেই করে এসেছি। হ্যান্ডব্যাগে একটামাত্র বই ঢুকিয়েছি, বইয়ের নাম, ‘রাসুলের চোখে দুনিয়া’।
একটা সিটি এক্সপ্লোর করতে পায়ের জোর লাগে খুব, আমার পায়ে আজ খুব জোর নেই। তা-ও হেঁটেছি, প্ল্যান ছিল ১২টা পর্যন্ত ঘুরব। মক্কার কথা মনে পড়ে, একা একা ঘুরে রাত দুইটায় হোটেলে ফিরেছিলাম, তখন আমি আরও ছোট, ২০১৪-এ। কী নিরাপদ এই শহরগুলো!
আজ পারছি না, পা ব্যথা করছে ভীষণ। আড়াই ঘণ্টায় এনার্জিতে লালবাতি জ্বলে গেল। আগের রাতে দেশে ঘুমিয়েছি তিনটারও পরে, সাড়ে চারটায় ঘুম ভেঙে গেছে। প্লেনে পাখার ওপর সিটে শো শো শব্দে ঘুমাইনি বেশিক্ষণ, দেড়-দুই ঘণ্টা। ভাইয়ার বাসায় এসেও ঘুমাইনি, আড়াই ঘণ্টা হেঁটে এসেছি, রাত ১২টা ক্রস করেছে, আমার ক্ষুধা লাগে না, ঘুমও আসছে না। ক্ষুধা না লাগলেও খাওয়া যায়, কিন্তু ঘুম না এলে কীভাবে ঘুমানো যায়, সেই পন্থা আমার জানা নেই।

দুই
বেলা ১১টার দিকে আজকে বৃষ্টি নামল। এখানে সচরাচর বৃষ্টি হয় না, আজ হলো। অনেক বাতাস, তার সঙ্গে ঝুম। বৃষ্টি আমার ভীষণ পছন্দ, তবুও এই বৃষ্টিতে কী যেন নেই, কী যেন নেই মনে হলো! যেটা বাংলাদেশের বৃষ্টিতে আছে। এই বৃষ্টি মোটেও দেশের বৃষ্টির মতো মনকাড়া না। মনকাড়া শব্দটা ঠিক মানাচ্ছে না, আবার রোমান্টিক শব্দটাও ব্যবহার করতে পারছি না, রোমান্টিকের বাংলাটা দরকার, অভিধান দেখালো, ‘ভাবোদ্রেককারী’। থাক, ‘মনকাড়া’ই ভালো।
লাবান খাওয়া হলো আজ। দেশেরগুলো অনেক মিষ্টি আর তেমন ঘনও না। আরবেরগুলো মিস করতাম খুব। আমার পছন্দ।
বিকেলে বের হলাম। একটু দূরে যাওয়া হলো। একটা ছোটোখাটো পার্কমতন জায়গায় নামলাম। ওখানে কিছুক্ষণ ঘুরলাম, বেড়ালাম, দোলনায় দুললাম। বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে আছে, বৃষ্টির, ঘাসগুলো ভেজা। একটা বিড়ালের ছবি তুলতে গেলাম, কিটকিট করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
এরপর রাস্তার অন্য পারে কর্নিশে যাওয়ার পালা। সমুদ্রের পাশে একটু ঘোরাফেরার জায়গা, ওখানটার নামই কর্নিশ। রাস্তা পার হব বলে আন্ডারগ্রাউন্ডে নামছিলাম, নামছি তো নামছিই। মাটির নীচে তিনতলা পর্যন্ত নেমে একটা দরজা পাওয়া গেল। খুলে ঢুকতেই বিশাল কার পার্কিং লট এবং সেখানে কোনো গাড়ি দেখলাম না। মাইনাস তিনতলা, গমগম শব্দ হচ্ছে, বের হওয়ার রাস্তা আর খুঁজে পাই না। কোনো মানুষও নেই যে জিজ্ঞেস করব।
বিন্দাস লাগছিল কেমন যেন, অ্যারো সাইনগুলো ধরে এগুনো শুরু করলাম। লিফট দেখে এগোলাম, লেখা, ‘আউট অফ সার্ভিস’। এবারে একটু ভয় ভয় লাগছে। আরও কিছুক্ষণ ঘোরার পর একজন লেবার আরবি-ইংলিশ মিলিয়ে রাস্তা দেখালেন, সেই মতো হেঁটেও খুঁজে পাই না, ঘুরতেই থাকলাম, তার আরও কিছুক্ষণ পর আরেক জনের ডিরেকশন অনুযায়ী রাস্তায় উঠে দেখি, যে পাশ থেকে নেমেছিলাম, সেই পাশেই উঠে এসেছি। বাহ!
এখন এখানের ওয়েদারটা বেশ আরামদায়ক, অল্প ঠা-া, অথচ ওখান থেকে বের হয়ে আবিষ্কার করলাম আমি ঘেমে গেছি।
এরপর রাস্তা পেরুতে গিয়ে মনে হলো এখনই মাগরিবের আজান দেবে, চলে গেলাম ফানারে। কাতার ইসলামিক কালচারাল সেন্টারকে ফানার বলে। ফানারের বিল্ডিংটা অনেক দূর থেকে দেখা যায়, ডিজাইনটা বেশ ইউনিক। অনেক কিছু আছে এখানে, লাইব্রেরি, মসজিদ, বিদেশিদের জন্য অ্যারাবিক স্পিকিং কোর্স, রিলিজিয়াস পাবলিকেশন্স। আজান দিচ্ছে আর আমি ইতিউতি তাকিয়ে মেয়েদের মসজিদ খুঁজছি দেখে সিকিউরিটি গার্ড ডেকে নিয়ে গেল ভেতরে। নামাজ শেষে বের হয়ে আসার সময় যতটুকু দেখা যায় দেখলাম।ভেতরে সুন্দর সুন্দর কাঠের বক্সে ফ্রি বুকস লেখা, বেশ কিছু ল্যাংগুয়েজের আছে, এর মধ্যে বাংলাও দেখলাম। ছবি তুলে এনেছি। গ্রাউন্ড ফ্লোরের দেয়ালগুলোয় অনেক কিছু লেখা, মাঝখানে কাঁচের বাক্সে কিছু মডেল রাখা, একটা বাক্সে ক্যালিগ্রাফি করার জিনিসপত্র সাজানো; সেগুলোর ছবিও তোলা হলো। ও হ্যাঁ, মসজিদে ছোটো বাচ্চার অ্যাঁ অ্যাঁ হি হি শুনে ভালো লাগল, তুরস্কের মসজিদের লেখাটার কথা মনে করে।
এরপর গেলাম কর্নিশে, হাঁটলাম অনেকক্ষণ, আমার পায়ে শক্তি নাই, তা-ও ২ ঘণ্টা কেটে গেল। ঝিনুকের আদলে বানানো ফোয়ারাটা সুন্দর লাগল আমার, ঠিকঠাকমতো ছবি তুলতে পারলাম না, মানুষজন নানানরকম পোজে ছবি তুলছে নিজেদের। এখানটায় অনেকেই বেড়াতে আসে, বসে থাকে, আমিও থাকলাম। বসে থাকলে একটা শব্দ একটু পর পর শোনা যায়, ইমোর রিংটোন।
আকাশে অনেক মেঘ জমে আছে, দেখতে ভালো লাগছে, মাঝে মাঝে তারাদের দেখা যায়, একটা চিকন চাঁদ তো আছেই। আমি হাঁটি আর কী যেন একটা মিস করি, কী মিস করি, তা জানি না, কেন মিস করি, তারও কোনো লজিক খুঁজে পাই না।

তিন
আজকে খুব বেশি কিছু লেখার নেই। প্রতিদিনই অনেক লিখতে হবে এমন কোনো কথাও হয়তো নেই।
খুব বেশি ঘোরাঘুরি হয়নি আজ। সন্ধ্যায় বের হয়ে জারির বুকস্টোরে গেলাম। দু’টো ভাউচার ছিল ওখানকার। স্টোরটা দুইতলা। বাংলাদেশের চর্চা, বাতিঘর, বেঙ্গল বইয়ের সঙ্গে পার্থক্য হলো, ওসব জায়গায় শুধু বই-ই পাওয়া যায়। আর জারিরের নামের সঙ্গেই লেখা আছে, নট জাস্ট অ্যা বুকস্টোর। নিচতলা পুরোটা জুড়ে ইলেকট্রনিকস, ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ, নোটবুক, প্রিন্টার, হাবিজাবি, ব্যাগ, ব্যাকপ্যাক, ক্যালিগ্রাফি টুলস, ড্রয়িং টুলস, সিউইং টুলস, ক্রাফটিং টুলস, কী নাই! কিছু বইও ছিল, স্টেশনারি আইটেমও।
এই জিনিসগুলো যাঁর লাগবে, সে খুব সহজেই, অল্প সময়ে কিনে ফেলতে পারে এখান থেকে। অথচ নীলক্ষেতে এইসব কিনতে গেলে কী ঘুরা ঘুরতে হবে আল্লাহ মালুম!
এরপর দোতলায়, দুই ভাগে ভাগ করা, এক পাশে সব আরবি, আরেকপাশে সব ইংলিশ। আর মাঝখানে অন্যান্য জিনিসপত্র, খাতা, পেন্সিল, কলম, রঙ, ব্যাগ, স্টিকার, বাচ্চাদের জিনিসপত্র ইত্যাদি। এগুলো চোখের দেখা দেখে আমি ঢুকে গেলাম বইয়ের রাজ্যে। আহা, বই আর বই আর বই! ক্যাটাগরি করে করে রাখা। সব বই-ই অরিজিনাল কপি, একেকটার দামও একদম অরিজিনাল!
ফিকশন, নন-ফিকশন, ক্ল্যাসিক, অ্যাকাডেমিক, লার্নিং ফরেইন ল্যাংগুয়েজ, পাজলস, সুডোকো, ফটোগ্রাফি, কুকিং, বেস্ট সেলার, সেল্ফ ডেভেলপমেন্টÑসব আছে। থরে থরে সাজানো বই, পরিপাটি।
হাঁটতে হাঁটতে একদম শেষ মাথায় গিয়ে দেখি ইসলামিক বুকস সেকশন, সেলফগুলোর সামনে বসার টেবিল-চেয়ার রাখা, ঠিকমতো দেখাও যাচ্ছে না বইগুলো, একপাশের সেল্ফ খালি, এলোমেলো পলিথিন পড়ে আছে, বইগুলোও ঠিকঠাক নেই, নিচের তাকগুলোয় অযতেœ পড়ে আছে এবং সেই বইগুলোর দাম অন্যসব বইয়ের চেয়ে কম। তার থেকে আরও দূরে কোনো ক্যাটাগরি লেখা ছাড়াই সারি সারি বই মাটিতে রাখা, একটার উপর আরেকটা, সব ইসলামিক বই। কুরআন রাখা সেলফটা একটু গোছানো, তা-ও একদম শেষে। পুরো ব্যাপারটা এতোটাই অযতেœ, অবহেলায় অগোছালো হয়ে আছে যে আমি সেটুকু গুছিয়ে লিখতে পারছি না।
খুঁজে দেখলাম, আর কোনোকিছুই এরকমভাবে পড়ে নেই। কিছু বই নিলাম, ভাউচারের দাম ক্রস করলো। কী বই কিনেছি তা বলবো না, বইয়ের নাম বলার ক্ষেত্রে আমি খুবই কৃপণ।
তারপর আর কী! চলে আসলাম বাসায়। নাহ, আজকেরটাকে পুরোপুরি ট্রাভেলগ বলা যায় না হয়তো, জারিরের রিভিউ বলা যায়। ও হ্যাঁ, বিকেলে একটা সুন্দর ব্যাপার চোখে পড়ল। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। একজন মহিলা ড্রাইভ করছিলেন, কিন্তু সম্ভবত তিনি গাড়ি পেছনের দিকে নিয়ে কীভাবে পার্ক করতে হয় তা জানেন না অথবা এই বিষয়ে অদক্ষ। রাস্তার মাঝখানে তিনি দরজা খুলে নেমে গেলেন আর অন্যপাশ থেকে একজন লোক, হয়তো তাঁর স্বামী, বের হয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলেন আর গাড়ি পার্ক করলেন। এটুকু সময়ের মধ্যে রাস্তায় বেশ কিছু গাড়ি জমে গেল। কিন্তু কেউই চিৎকার করল না, ‘ঐ মিয়া, রাস্তার মাঝখানে গাড়ি থামাইসেন কেন? এ্যাহ, মাইয়া মানুষ হয়ে গাড়ি চালাইতে আইছে, জানে না কিছু!’ উলটো আরও পার্ক করার সময় জায়গা করে দিল। এখানকার ট্রাফিক সিস্টেম সবসময়ই ভালো লেগেছে আমার।
আমার শিওর হয়ে বলতে ইচ্ছে করছে, এই লোক কখনোই তাঁর স্ত্রীকে একথা বলবে না, ‘এ্যাঁহ, গাড়িটাও তো পার্ক করতে পার না ঠিকমতো’, বরং হাতে ধরে তাঁকে শিখিয়ে দেবে, যেমন করে সে প্রয়োজনে রান্নাটা অথবা বাচ্চা সামলানোটা স্ত্রীর কাছ থেকে শিখে নেয়।
এরকম বাংলাদেশেও হোক, জগতের সমস্ত পুরুষ এইভাবে অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে স্ত্রীদের ট্রিট করুক।

চার
আজ সবচেয়ে বেশি ঘোরা হয়েছে আর আজই মাথা ব্ল্যাংক লাগছে একদম। এর কারণ আছে, গত তিনদিন যেসব জায়গায় ঘুরেছি, সেসব খুব মনোযোগ দিয়ে দেখেছি, অবজার্ভেশন এবং অ্যাবজোর্পশন, দু’টোই বেশ ভালোমতো হয়েছে। আসার আগে দিয়ে কিছু ছবি তুলে নিয়েছি। এটাই আমার পছন্দ। আজ ক্যামেরা নিয়ে বের হয়েছিলাম, তারপর ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে রইলাম, কোথায় গেল মনোযোগ দিয়ে জগত দেখা! সব মনোযোগ ছবির কম্পোজিশান ঠিক আছে কি-না সেইদিকে। ছবি তুলতে তুলতেই ব্যাপারটা খেয়াল করছিলাম আর ভাবছিলাম আজকের ট্রাভেলগে লিখবটা কী!
যাই হোক, কাল থেকে আর ক্যামেরা নিয়ে বের হওয়ার ইচ্ছে নেই। ছবি তোলার ট্রেন্ড আমাকে দিয়ে হবে না। আর এত ছবির কী-ইবা দরকার! গুগল চাচ্চু থাকতে আবার ছবি কীসের! আমি বরং শব্দ দিয়ে অন্যের মনে ছবি আঁকার চেষ্টা চালাই…।
ফজরের পর ঘুম হয়নি আজ আর! বের হয়ে গেলাম, ভোরের দোহা দেখতে দেখতে আগানো শুরু। আল-জাজিরার অফিস দেখা হলো, বিশাল এলাকা জুড়ে। সেখান থেকে যাওয়ার সময় গাড়িতেই ব্রেকফাস্ট হলো, কেরালা দোকান থেকে কফি আর স্যান্ডউইচ।
এরপর প্রায় ৫০ কি.মি. লম্বা রাস্তা…।
যাওয়ার সময় ২০২২ ওয়ার্ল্ডকাপের জন্য বানাতে থাকা আল-ওয়াকরাহ স্ট্যাডিয়াম দেখা হলো, ডিজাইনটা বেশ বোঝা যাচ্ছে এখন। ছবি তুলেছি, তবে এর চেয়ে অনেক ভালো ছবি গুগলেই পাওয়া যায়, ভিডিও-ও।
এরপর দে ছুট আল-ওয়াকরাহ সি-বিচে…।
তখন খুব সম্ভবত সকাল ৭টা। পুরো বিচ খাঁ খাঁ করছে, অনেক রোদ, তবে গরম লাগছে না, ওয়েদারটা বেশ ভালো। সমুদ্রের পাড়ে নামলাম, কিন্তু খুব একটা আগাতে পারছিলাম না, কারণ পায়ে কেডস, আর বালুটাও পরিষ্কার লাগছিল না আমার কাছে। কক্সবাজারের সঙ্গে পার্থক্য হলো ওখানে বিচে খেজুর গাছ নেই আর এখানে আছে, এখানে বেশ পাখিও দেখলাম; আবার এখানকার পানিটা সবুজ লাগে, কক্সবাজারেরটা একটু অন্য রংয়ের। তবে তুলনা করতে হলে আমি কক্সবাজারকেই এগিয়ে রাখব। হ্যাঁ, কলাতলি পয়েন্ট একটু গিজগিজ করে, তবুও অনেক সুন্দর, পেছনের ঝাউবনের তো তুলনাই হয় না। আর আমাদের ইনানী বিচ তো প্রিন্সেসÑকী অদ্ভূত সুন্দর!
সমুদ্র ভালো লাগছিল। এই বিশালত্বের সামনে নিজের ক্ষুদ্রতা উপলব্ধি করা হয়তো ভালো ব্যাপার, কিন্তু যে জানে যে সে ইনফিরিয়র, সমুদ্র তার ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তখন মনে হয় এত বিশাল, সীমাহীন এই দুনিয়ায় আমি থাকলেই কী, না থাকলেই কী! আমার থাকার দরকারটাই-বা কী! আমি ভেসে গেলেই তো পারি, ৫ মিনিট পর পাড় থেকে আমাকে একটা বোতলের চেয়েও হয়তো ক্ষুদ্র দেখাবে, তারপর আর দেখাই যাবে না। এটাকেই কি কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া বলে?
একজন আরব মহিলাকে দেখলাম পা ভিজিয়ে হাঁটছেন, একটু দূরে তাঁর গাড়ি দাঁড় করানো, তার পাশে একজন, ছোট একটা বাচ্চা। একটু দূর থেকে খেজুর গাছসহ ভিউটা দেখতে বেশ লাগে!
বিচের পাশেই একটা ফ্যামিলি পার্ক আছে, কিন্তু এত সকালে সেটা বন্ধ। সেখান থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে যাওয়া হলো আল-ওয়াকরা এলাকার কর্নিশে। রাস্তার দুই পাশে সমুদ্র, বড় বড় পাথর দেওয়া (অনেকটা ইনানীর মতো, কিন্তু ইনানীর পাথরগুলো চারকোণা, আর এখানের গুলো গোলটাইপের), কাঠের বড় বড় নৌকা সারি বাঁধা, এগুলোয় মাছ ধরা হয়। ট্রাক থেকে মাছ ধরার নেট নামাচ্ছে, নানান রকমের নেট; বাঙালি শ্রমিকদেরও দেখা গেল। আর দেখা গেল ফিলিপিনোদের, ওরা ব্যক্তিগতভাবে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে।
পাথরগুলো মসৃণ না, উঁচুনিচু, সেইসব ফাঁকায় চিংড়ির মাথা পড়ে আছে। আমি সমুদ্র পছন্দ করি, আবার ভয়ও পাই। পানি আছড়ে পড়ছে, এমন একটা পাথরের কাছে গিয়ে বসলাম, যতদূরে তাকানো যায়, সবুজ পানি, জাহাজ আর মাথার ওপর বিস্তীর্ণ একটা উজ্জ্বল আকাশ। মনে হচ্ছিল, এভাবেই বসে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আমার সঙ্গ আমার খুব পছন্দ।
কর্নিশ থেকে যাওয়া হলো কাতারের কবরস্থানে। বিশাল এলাকাজুড়ে কবরস্থান, পাথুরে বালু আর বালু, কবরগুলোর মাথায় খুঁটিমতন দিয়ে চিহ্নিত করা। পাকিস্তানি শ্রমিকরা কবরগুলো সমান করছে কোদাল দিয়ে। এসবের মাঝখান দিয়ে যেতে যেতে দেখলাম বেশ কিছু কবর খুঁড়ে রেখেছে আগে থেকেই। জিজ্ঞেস করে জানলাম, এখানে মানুষের মৃত্যুর খবর আসার জন্য অপেক্ষা করে না কেউ, আগে থেকেই খুঁড়ে রাখা হয়।
মনে হলো, ঠিক এইভাবেই, মরে যাওয়ার আগেই ভালো যা করার, করে নেওয়া ভালো। এটাই কাতারের একমাত্র কবরস্থান, এর পাশে একটা মসজিদ আছে, শুধু এই মসজিদেই শেষ গোসল এবং জানাজার ব্যবস্থা।
বাই দ্য ওয়ে, কাতার ঢাকার চেয়েও ছোটো। কবরস্থানের উল্টোদিকেই ১১ মাইল লম্বা একটা মার্কেট। কাতারে রেল চালুর কাজ চলছে, আসার পথে দেখলাম ঝকঝকে তকতকে ট্রেন চালিয়ে টেস্টিং করছে।
এরপর আমি বাসায়। তবে আসা-যাওয়ার পথে অলিতে গলিতে অনেক পুরনো ছোটো ছোটো বাসা দেখতে ভালো লেগেছে, ভীষণ ভালো লেগেছে। খুব সম্ভবত এইসবে আমি আমার শৈশব খুঁজে পাই। কী সুন্দর মরুভূমির বালুর রঙের একেকটা বাড়ি, সাদা সাদা গেইট, সেইসব দোকান! ধুর এসব আমি লিখে কীভাবে বুঝাব!
দুপুরে অ্যারাবিয়ান রাইস খাওয়া হলো। আহা! সাড়ে চার বছর পর আবার সেই চেনা ঘ্রাণ! আলহামদুলিল্লাহ্!
৪টার দিকে আশেপাশে হাঁটতে বের হলাম, আবার সেইসব অলিতে গলিতে ঘুরি, শৈশব খুঁজি, এগুলো লিখে বুঝানো যায় না। ওই রকম বাড়িঘর দেখলে আমার মনটাই অন্যরকম হয়ে যায়।
এরপর গাড়িতে যাওয়া হলো ভিলাজিও মলে। ততোক্ষণে সন্ধ্যা নেমে আকাশ কালো। মলে ঢুকতেই চমকে গেলাম। পুরো মলের ছাদটা উজ্জ্বল আকাশের মতো! ঠরষষধমমরড় গধষষ, ছধঃধৎ লিখে গুগলে সার্চ করে দেখতে পারেন। মাঝখানে লম্বা এলাকায় আর্টিফিশিয়াল লেক, সেই লেকে বোটে চড়ারও ব্যবস্থা আছে। তারপর মলের ভেতর হেঁটে হেঁটে লাক্সারি দেখি। ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডগুলোর দোকানে একটু ঢুঁ মারি, এইচ অ্যান্ড এম, ম্যাক, সেফোরা, হলমার্ক ইত্যাদি ইত্যাদি। মলের ভেতরে বাচ্চাদের একটা থিম পার্ক আছে, অনেক বড়, অনেক! আর আছে এড়হফড়ষধহরধ ওপব অৎবহধ, একটা বিশাল এরিয়ার টেম্পারেচার কট্রাল করে বরফ রাখা, ওখানে বাচ্চারা স্কেটিং করছে। এইত্তো, এইসব ঘুরলাম, ছবি তুললাম। বাটারস্কচ আইসক্রিম খেলাম, বেস্ট ছিল!
একটা ড্রেস দেখলাম, ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ওটাকে ভেংচিয়ে ছবি তুললাম। এরপর কিছু প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে সাড়ে নয়টার মধ্যে আবার বাসায়।

পাঁচ
পঞ্চম দিন গিয়েছিলাম সুক ওয়াকিফে। এটা একটা ঐতিহ্যবাহী জায়গা। সুক শব্দটার মানে হলো বাজার। তবে এই বাজারটা একদম অন্যরকম। লোকাল মার্কেট। এখানে পশুপাখির বাজারটা বেশ লেগেছে আমার। সুক ফ্যালকন নামে বাজপাখির একটা বাজার আছে, তারপাশেই ফ্যালকন হসপিটালও। বাজপাখির পায়ে শিকল বেঁধে ছেড়ে রেখেছে। ঘুরে ঘুরে দেখা হলো সেসব। বিড়াল, কুকুর, ইঁদুর, কচ্ছপ, মাছ, খরগোশও আছে। হ্যামস্টার নামে একটা প্রাণী দেখলাম প্রথম, সাইজে ছোট্ট। আমি খাঁচায় আটকানো পশুপাখি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটছিলাম, আর একটা সম্ভবত ইউরোপিয়ান ফ্যামিলিকে দেখলাম ট্রলিতে বসা ছোট্টো বাচ্চাটার কোলে বিড়াল দিচ্ছে আদর করতে। বাচ্চাও মহানন্দে আদর করছে। ব্যাপারটা কমন, তা-ও লিখতে মন চাইল।
সুক ওয়াকিফের বিল্ডিংগুলো মাটি দিয়ে তৈরি, দোতলা। সেগুলোর জানালার ফাঁকে ফাঁকে কবুতর বসে আছে। বিকেলের দিকে এখানে অনেক অনেক কবুতর ছাড়া থাকে। আমি গিয়েছিলাম সন্ধ্যায়। এখানে ঢুকেই আমার মাথাটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল, সামনে আগালেই ডানে, বামে, সোজা রাস্তা। কোনদিকে যাই! কী মিস করে ফেলি! সেজন্য আগে বাইরের দিকটা ঘুরে দেখলাম, কোথায় কী কী আছে! ভেতরে অবশ্য জায়গায় জায়গায় ম্যাপও আছে। সীমানার বাইরে হাঁটতে গিয়ে উটের খামার দেখা হয়ে গেল। রাতের বেলা, তাই দূর থেকে বোঝা যাচ্ছিল না খুব। কাছে গিয়ে দেখতে হলো।
ওখানে ঘুরতে ঘুরতেই আমার মনে হচ্ছিল এই বিশাল বর্ণনা গুছিয়ে লেখা আমার পক্ষে সম্ভব না। সত্যিই লিখতে পারলাম না।
একটা আরব ঐতিহ্যবাহী পিঠা খাওয়া হলো, স্ট্রিট ফুড, ডিম, চিজ, হানি, চকোলেট দিয়ে আর এক ধরনের রুটির মতো খাবার। নামটা জিজ্ঞেস করেছিলাম, খুব সম্ভবত খরবুজগার বলেছিল। ভুলে গেছি এখন।
টার্কিশ কফি ছিল অনেক রকমের, সেখানে টার্কিশ আইসক্রিমও ছিল। আইসক্রিম-বিক্রেতা বেশ মজা করে বিক্রি করছিলেন সেটা। আইসক্রিমের কোনটা ক্রেতার হাতে ধরিয়ে দিতে গিয়ে বারবার সরিয়ে ফেলেন, হা হা হো হো করে হঠাৎ হেসে উঠেন, মানুষ চমকে যায়। অনেকটা ‘ধরতে গেলে নাই’ টাইপের।
এরপর মার্কেটের ভেতরটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম, সত্যিকারের মুক্তার দোকান। অনেক আগে দোহার অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত সাগর থেকে মুক্তা আহরণ করে। এই স্মৃতিতে দোহায় একটা পার্ল মনুমেন্ট আছে।
মার্কেটের ভেতরে বাঙালি বিক্রেতা আছে বেশ। পশুপাখির দোকানের ওখানেও একজনকে দেখেছিলাম। ভেতরে একজন বাঙালি বিক্রেতার কাছ থেকে কাজল কিনলাম। এই কাজলটা আমি লাস্টটাইম সৌদি আরবে দেখেও কিনি নাই, সেই কথা এখনো মনে আছে। এবার তাই সামনে দেখে কিনে ফেলেছি। অথচ ওইটা প্যাকেটসুদ্ধ ব্যাগে পড়ে আছে, আরো কতোদিন পড়ে থাকবে তার কোনো হিসাব নেই।
এখানের খাবারের মার্কেট রমরমা। কেজিদরের মজার মজার চকোলেটস, বাদাম, আরো অনেক কিছু, আমি নাম জানি না। মার্কেটের ভেতরটা অদ্ভুত লাগে। পুরনো বাড়ি, তার সঙ্গে হলুদ লাইট, কেমন যেন একটা নেশা নেশা ভাব! প্রাঙ্গণটা বেশ লেগেছে, অনেক বড় জায়গা, বসার বেঞ্চ আছে। নানান কিসিমের মানুষ দেখেই লম্বা সময় পার করে দেওয়া যায়।
স্ট্রিটফুড আরো ছিলো, স্ট্রিটের হলেও সেগুলো বেশ পরিচ্ছন্ন, লাইন ধরে টেবিলের ওপর হটবক্সে ফয়েল পেপার দিয়ে ঢাকা বিরিয়ানী, হারিস, আরো অনেক কিছু। হারিস ঐতিহ্যবাহী একটা খাবার, গম আর গোশত দিয়ে রান্না করা।
আর আছে লাইন ধরা রেস্টুরেন্ট। এই দেশে যেখানেই যাই, সেখানেই খালি রেস্টুরেন্ট আর রেস্টুরেন্ট। এতো কেন! কী গিজগিজ করে!
এইতো, ঘুরে ঘুরে ওসব দেখে একটা ট্যাক্সি নিয়ে বাসায় চলে এলাম।

ছয়
আসার পর থেকে ১১টা দিন যেন টুক করে চলে গেছে।
এই দেশের অধিকাংশ সৌন্দর্যই মানুষের বানানো, কিন্তু অতি যতেœ গোছানো। সেজন্য ঘুরে ঘুরে দেখতে ভালো লাগে, অথচ কথা ছিল এইসব চোখধাঁধানো আলো চোখ ধাঁধিয়েই দেবে কেবল। সৌন্দর্যের অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারবে না। এখানেই জিতে গেছে স্থপতিরা আর এখানকার মিউনিসিপালিটি। এই সৌন্দর্য ওদের প্রতি একটা শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি করে আর জাগায় নিজেদের দৈন্যের অনুভূতি।
আজ ঘুম থেকে উঠেই দেখি অন্যান্য দিনের মতো রোদ নেই। তুলোর মতো সাদা সাদা মেঘ। ঠা-া ঠা-া একটা আবহাওয়া। বেশ খানিকক্ষণ পরে দেখলাম বাসার সামনের ফুটপাতে ফোঁটা ফোঁটা পানির ছাপ। বুঝলুম, বৃষ্টি হয়েছে। আরো শুনলাম, ভোরেও নাকি বৃষ্টি হয়েছে, আমি তখন ঘুমে।
কাতারে এসেই গুগল করে লিস্ট করে ফেলেছিলাম কোথায় কোথায় যেতে চাই। এই তালিকার শুরুর দিকেই ছিল মিয়া পার্ক (গওঅ ঢ়ধৎশ) আর মিউজিয়াম অফ ইসলামিক আর্ট (গওঅ)। আজ সাড়ে তিনটার দিকে বেরিয়ে পড়লাম সেই উদ্দেশ্যে।
সাগরের পাড়ে জায়গাটা। মিউজিয়ামের প্রবেশপথ দেখেই আমি হতভম্ব! এত সুন্দর! সোজা গাড়ি ওঠার জায়গা, তার মাঝখানে মাঝখানে ফোয়ারা। তার দুইপাশে মানুষের যাওয়ার রাস্তা, একটু চিকন, দুইপাশে সারি সারি খেজুর গাছ। একটা গাছের ডাল আরেকটার ডালের সঙ্গে আটকে আছে। ছায়াঘেরা এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে উপরে উঠলাম। নিচে সমুদ্র। মিউজিয়ামের মূলগেটের বাইরের প্রাঙ্গণটাই এত সুন্দর যে, আমি ওখানেই থাকলাম কিছুক্ষণ। জায়গাটা উঁচু, একদিকে থৈ থৈ করছে সাগর আর আরেকদিকে মিয়া পার্ক। পার্কটা অনেক গোছানো, পরিষ্কার ঘাস, হাঁটার রাস্তা, সাগরের পাড়ে বসার জায়গা, বিশাল এলাকা, প্রাণ জুড়াবে তাতে।
এরপর ঢুকলাম মিউজিয়ামে। ভেবেছিলাম এন্ট্রি ফি আছে, আসলে নেই। বাইরে থেকে বিল্ডিংটাকে দেখতে অনেকটা ট্রায়াঙ্গেলের মতো দেখায়। ভেতরে কয়েকটা ফ্লোর। আমি শুরুতেই ম্যাপের দিকে গেলাম। ঢুকতেই বাম দিকে ম্যাপ। তার বামে ক্যাফেটেরিয়া। ম্যাপ থেকে নামাজের জায়গা দেখে নিলাম, কোন ফ্লোরে কী আছে তা-ও। তারপর গেলাম ডানে, উপরে পরে যাব, তাই।
নভেম্বরের ২২ তারিখ থেকে এখানে একটা প্রদর্শনী হবে, নাম ঝুৎরধ গধঃঃবৎং। সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধ, সেখানকার ক্ষয়ক্ষতি, জীবনযাপনÑএসব নিয়ে। সেজন্য দেয়ালে সাইনবোর্ডে সেখানকার ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্থাপত্যগুলোর বর্ণনা আর ধ্বংসের আগের-পরের ছবি দেওয়া। সেগুলো পড়লাম। যেন সাজানো-গোছানো কিছু বাগানে দৈত্য এসে হামলে পড়েছিলো।
আরও ডানে এগিয়ে তো আমার চক্ষু ছানাবড়া! এতো সুন্দর একটা ভিউ! বিশাল চওড়া একটা ব্যালকনির মতো, দুইপাশেই সমুদ্র। আর কী বাতাস! নিচ থেকে সাগরের পানি এসে গা ভেজাতে পারছিল না ঠিকই, কিন্তু এই বাতাস যেন মন ভিজিয়ে গেল। ব্যালকনির বাম পাশ থেকে সাগরের ঐ পাড়ে দাফনা এলাকাটা দেখা যাচ্ছে। আমি আসলে লিখে বুঝাতে পারছি না ব্যাপারটা। সেখান থেকে আরো এগুলে লাইব্রেরি। ঢুকলাম, ঝকঝকে, তকতকে গোছানো সব। কিন্তু ভিজিটর দেখলাম একজন মাত্র। বইগুলোর বেশিরভাগই আর্টের উপর, এই আর্ট শুধু চিত্রশিল্প না, জুয়েলারি, সিরামিক, টেক্সটাইল, টাইলস, ক্যালিগ্রাফি ইত্যাদি ইত্যাদি। ইন্ডিয়ান আর্টের উপর বিশাল একটা বই দেখলাম, বাংলাদেশেরও আছে। অনেক পুরনো কিছু বই কাঁচের বাক্সের ভেতর রাখা।
একপাশে একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস দেখলাম। জাদুঘরের জিনিসপত্র কেনো হাত দিয়ে টাচ না করার জন্য সবসময় বলা হয়, তার কারণ বুঝাতে কপার, ব্রাস, নরমাল পেপার, কালারড পেপার, কটন ইত্যাদির টুকরোর অর্ধেক একটা গ্লাস দিয়ে চাপা, বাকি অর্ধেক বাইরে রাখা, এটুকু মানুষ হাত দিয়ে টাচ করতে পারবে। খুব সহজেই পার্থক্যটা বোঝা যাচ্ছে, টাচ করা অংশগুলো মলিন হয়ে গেছে বা ছিঁড়ে গেছে। এর উপরে কাগজে সব লেখা ছিলো। খুব শীঘ্রই নাকি পুরো ব্যাপারটা নিয়ে একটা টাইম-ল্যাপস ভিডিও বানানোর প্ল্যান আছে। এগুলো যখন দেখছি, তখন লাইব্রেরিয়ান এসে ওয়েলকাম করলো। এরপর কমেন্টবুকে কমেন্ট লিখে অন্যদিকে পা বাড়ালাম। লাইব্রেরির আরেক কর্নারে বাচ্চাদের জন্য নানান ধরনের বই, ছবি আঁকার সরঞ্জামসহ অনেককিছু রাখা। সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর!
লাইব্রেরি থেকে বেরুতে বেরুতে মাগরিবের সময় হয়ে গেলো। ভেতরেই ছেলে-মেয়েদের আলাদা প্রেয়ার রুম আছে, সেখানে নামাজের পর গেলাম গিফটশপে। এটাও ফার্স্ট ফ্লোরেই। এখানে স্যুভেনির টাইপের বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনার ব্যবস্থা আছে। সেখান থেকে ইচ্ছে হলো আবার ঐ ব্যালকনি মতোন জায়গাটায় যেতে।
সন্ধেবেলা, আকাশে সাদা মেঘ, তার সঙ্গে একটা প্রায় পূর্ণ হওয়া চাঁদ, বাতাস। দুইপাশে সমুদ্র। নিজেকে হারিয়ে ফেলতে আরো কিছু লাগে? কী অদ্ভুত! কী অদ্ভুত!
আমার তখন মনে হলো, আমার একলা আকাশ সত্যিই থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে। সাগরের পানি টলমল করছে, মুগ্ধতায় ভেসে যাচ্ছি আমি।
এ-মাথা ও-মাথা ঘুরে বেড়ালাম, সারারাত কাটিয়ে দেওয়া যায় এমন একটা জায়গায়। কাতারের যেসব জায়গায় আমার একবার গিয়ে পোষায়নি, তার মধ্যে একটা হলো এই মিউজিয়াম আর তার পার্ক। এগুলো আমার বেশি ভালো লেগেছে, তার কারণ হলো এখানে প্রকৃতির ছোঁয়া ছিলো, আর ছিলো আমার খুব প্রিয় চাঁদ।
উপরের ফ্লোরগুলো না দেখেই এরপর গেলাম পার্কে। হাঁটলাম, মানুষ দেখলাম, সমুদ্রের পাশে গিয়ে বসলাম, জিজ্ঞাসিলাম, ‘আচ্ছা সমুদ্র, তোমার সঙ্গে আমাকে ভাসিয়ে নেবে, যাতে আর কোনোদিন ফিরে আসা না যায়?’
সে যেন বললো, ‘খুব নেব, খুব। একটা ডুব দিয়েই দেখো না, নাবিলা!’
একজনকে বলতে শুনেছিলাম, বউ নিয়ে ঘুরতে বের হলে নাকি ভ্যানিটি ব্যাগ টানতে হয়। সে অবিবাহিত বলে তাঁর কথায় গুরুত্ব দিইনি, আর আমিও কখনো দেখিনি কোনো লোক তাঁর বউয়ের ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে ঘুরছে। আমি নিজেও তো বিন্দাস, ফোন নিয়ে বের হয়ে যাই, ফোনের ব্যাককাভারের মাঝখানে টাকা ঢুকিয়ে রাখি। ব্যাগ তো ঝামেলা!
আজ মিয়া পার্কে দেখি একটা ছেলে সত্যিই তাঁর পাশের মেয়েটার ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে হাঁটছে। আমার সঙ্গে সঙ্গে সেই একজনের কথা মনে পড়ে গেল, আরে! ঠিকই তো বলেছিল! কিন্তু এই দৃশ্য খুবই বিরল। হে নারীজাতি, বহন করতে শেখো!
পার্ক থেকে গেলাম সুক ওয়াকিফে। কারণ আমার প্ল্যান, আরেকদিন অনেক সময় নিয়ে এসে ঘুরে বেড়াবো পুরো মিউজিয়ামটা। ইনশাআল্লাহ। সেদিন ক্যামেরা নিয়ে যেতে হবে।
সুক ওয়াকিফের বর্ণনা দিয়ে তো লিখেছিই আগে। এখানেও আবার আসার ইচ্ছা আছে।
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় নয়টা। বেশ ঠা-া পড়েছে। আসার আগে ভেবেছিলাম গরম থাকবে। একটা শালও আনিনি, একটু পরপর কেঁপে উঠছি শীতে, এটাও মজার।

সাত
সোয়া ১০টা বাজে। হামাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন লাউঞ্জে বসে আছি, ঢাকার পথে ফ্লাইট ছিলো ১১টায়। সোয়া একঘণ্টা ডিলে হবে, তো অপেক্ষার সময়টা আরো কিছুক্ষণ বাড়লো।
ট্রাভেলগের শুরুতে কয়েকদিন নিয়মিত লিখেছিলাম, তারপর হয়নি আর। অথচ ঘুরেছি অনেক, সুন্দর স্মৃতিও হয়েছে। দেশে ফিরে যাচ্ছি, এখন তো লিখতেই হবে।
ষষ্ঠ দিন গিয়েছিলাম দোহা স্ট্রিট ফুড ফেস্টিভালে, শেরাটন পার্কে হচ্ছিলো। হোটেল শেরাটনের পাশেই। সেদিন সন্ধ্যায় বের হয়েছিলাম, মাগরিব পড়ি শেরাটনে, তারপর ফেস্টিভালে ঘোরাঘুরি। একটা ফাইভ স্টার হোটেলে ঢুকে নামাজ পড়তে কোনো সিকিউরিটি চেকের মুখোমুখি তো হতে হয়ইনি, উলটো ওয়েলকাম করে রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছিল। ঠিক এই কাজটা বাংলাদেশে সম্ভব কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। সিকিউরিটি চেকের নামে জেরা হতো বলে মনে হচ্ছে। অথচ এদেশে অপরাধের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম।
যাই হোক, ফুড ফেস্টিভাল উপলক্ষে পার্কের একটা কর্নারে লাইটিং ছিলো, দুই পাশজুড়ে বেশকিছু স্টল, ৪০-৫০টার মতো হবে। ফিলিপিনোদের বেশকিছু স্টল চোখে পড়লো। স্ট্রিট ফুড হলেও অপরিচ্ছন্নতার কোনো বালাই নেই, ব্যাপারটা ভালো লাগার। স্টলগুলোর মাঝখানে একটা স্টেজ, বাচ্চারা উঠে নাচানাচি করছে, ইয়াং বাবারা তাঁদের ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলোকে কোলে তুলে লাফাচ্ছে, বাবাগুলোর হাসি দেখার মতো। আমি খুব ভালোমতো খেয়াল করলাম, ওই হাসিতে কোনো কৃত্রিমতা নেই, কী অদ্ভুত সুন্দর সম্পর্কগুলো! অথচ এই মা-বাবাগুলোর বয়স খুব বেশিও না! টু বি ভেরি অনেস্ট, ওইদিনের সেই হাসিমুখগুলো ফ্যামিলি লাইফ সম্বন্ধে আমার ধারণা বেশ খানিকটা বদলে দিয়েছে।
ফুড ফেস্টিভাল থেকে বেরিয়ে পার্কের অন্যান্য অংশ ঘুরে দেখলাম, পিচ্চিগুলোকে অবজার্ভ করলাম, এখানেও অকৃত্রিম সব হাসিমুখ। তবে হাসিমুখের ভিড়ে বেশকিছু ক্লান্ত, মলিন মুখও দেখা যায়, এঁরা এই ফ্যামিলিগুলোর বিদেশি বেবিসিটার/মেইড, ড্রেসকোড দেখেই চেনা যায়।
তারপর বাণিজ্যিক এলাকা দাফনা ঘুরে বেড়ালাম, সমুদ্রের পাশে বসে থাকলাম। অনেক দিন হয়ে গেছে, অনুভূতি সব মনে পড়ছে না, তাই লিখতেও পারছি না।
সপ্তম দিন গিয়েছিলাম কাতারায়, একটা কালচারাল ভিলেজ, সমুদ্রের পাশে একটা জায়গায় অনেকগুলো মাটির বিল্ডিং, ভেতরে বিভিন্ন এক্সিবিশান চলে, জায়গাটা বেশ সুন্দর।
ওখানে পৌঁছেছিলাম মাগরিবের সময়, গিয়ে দেখি মসজিদে মেয়েদের সেকশানে দাঁড়ানোরও জায়গা নেই, একদল বের হওয়ার পর ঢুকতে হয়েছে। দিনশেষে নামাজের প্রতি সব ধরনের মানুষের এই সিনসিয়ারিটি দেখার মতো। সিটি সেন্টারেও দেখা গেলো, ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা একটা মেয়ে প্রেয়ার রুমে ঢুকে লং ড্রেস পরে নামাজ পড়ে নিলো। লং ড্রেসগুলো সব প্রেয়ার রুমেই রাখা থাকে। অথচ…।
অষ্টম দিন যাই আল-শামাল বিচে। এটা কাতারের একদম শেষপ্রান্তে। সেদিন প্রায় ২৩০ কি.মি. লং ড্রাইভ হয়েছিলো। আসা-যাওয়ার পথে ওয়ার্ল্ড কাপের একটা স্টেডিয়াম দেখা হলো, এর পর অন্যান্য দিনে অন্য স্টেডিয়ামও দেখা হয়েছে।
আল-শামাল বিচের পাশেই ছিলো আবু-ধালুফ পার্ক, ভীষণ সুন্দর! নির্জন দেখেই হয়তো আমার বেশি ভালো লেগেছে। আর বিচটা ছিলো অসাধারণ। অনেক দূর পর্যন্ত কোনো মানুষ নেই, পরিষ্কার পানি, অল্প অল্প ঢেউ, বাতাস, কী নির্মল!
নবম দিন কোথাও যাইনি। দশম দিন কোথায় গিয়েছিলাম মনে করতে পারছি না।
এরপরের দিনগুলোকে লুলু হাইপার মার্কেট, সিটি সেন্টার, মিউজিয়াম, সুক ওয়াকিফÑএসব জায়গায় অনেক ঘোরা হয়েছে। একদিন ইউনিভার্সিটি এক্সপোতে যাওয়া হয়েছে। খোঁজখবর নেওয়া আর কী! আর একদিন গিয়েছিলাম কাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে। উফ! পাগল পাগল অবস্থা! এতো বিশাল! এতো সুন্দর!
কাতার ভালো লেগেছে আমার, সব মিলিয়েই। ঢাকাকে ভালোবাসি, আর দোহা হলো প্রেম। সমস্ত ঘোরাঘুরি শেষে অবশেষে ঢাকার পথ ধরলাম। বছরশেষের এই ট্যুরটা আমার খুব দরকার ছিলো। আলহামদুলিল্লাহ। সবার জীবন সুন্দর হোক। আমার ট্রাভেলগ অ্যালবাম বন্ধ হলো এখানেই।

 

ShareTweetShare

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১১ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১১ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মার্চ ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মার্চ ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি এপ্রিল ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি এপ্রিল ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মে ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মে ২০১৭ সংখ্যা

আমাদের সম্পর্কে

যোগাযোগ

সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা

© 2021 নবধ্বনি - Developed by Shabaka IT

No Result
View All Result
  • স্বাগত কলাম
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • মুক্তগদ্য
  • গল্প
  • রঙধনু
  • দিনলিপি
  • পুরোনো সংখ্যা

© 2020 নবধ্বনি - Developed by Shabaka IT.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Create New Account!

Fill the forms below to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist