রাত তখন বেশ গভীর হয়ে গেছে। মাঘ মাসের ঝুম শীতের রাত।হুজুরের রুমের পাশের সিটটাই আমার। শুয়ে আছি। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কেন যেন হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেছে। আজকের পড়াগুলো কি কি, কোন কিতাব হলো, কোন কিতাব হলো না—শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছি।
হঠাৎ মনে পড়ল—আরে, আজ তো আমার ডায়েরি লেখা হয়নি! কী করি এখন! ডায়েরি তো সেল্ফে রাখা। রাতও অনেক গভীর হয়ে গেছে। সাথিরা ঘুমিয়ে পড়েছে সেই কখন! কিন্তু ডায়েরি লেখা তো মিস করা যাবে না। দুলাইন হলেও লিখতে হবে। ভেবে পাচ্ছি না—এত রাতে কীভাবে যে কী করি! তাছাড়া এখন ডায়েরি আনতে গেলে যে কারো ঘুম ভেঙে যাবে। কিন্তু আমাকে যে লিখতেই হবে! দুমাস আগে ডায়েরি লেখার যে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম নিজের কাছে, প্রতিজ্ঞা তো ভাঙা যাবে না।
সাথি ভাইদের উঠে পড়ার যাবতীয় আশংকা নিয়ে সন্তর্পণে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। খুব সতর্কতার সাথে ডায়েরিটার বুকে হাত রাখলাম। না,কেউ জাগেনি। দরজাটা অল্প খানিক ফাঁকা করে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে। যাই হোক, বারান্দায় গ্রিলের কোণ বেয়ে চুইয়ে পড়া চাঁদের আলোয় চার-পাঁচ লাইনের রোজনামচা লিখেছিলাম সেদিন। শুধু ধারাবাহিকতা রক্ষা করা; যেন নিয়মিত ডায়েরি লেখায় কোনো ছেদ না পড়ে।
এই কাহিনিটা যখন মিযান পড়ি, তখনকার। খুব সম্ভব আদিব হুজুরের ‘এসো কলম মেরামত করি’র কোনো এক জায়গায় পড়েছিলাম—লেখক হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে নিয়মিত রোজনামচা লেখা। আদীব হুজুর এও বলেছিলেন, তিনি নিয়মিত রোজনামচা লিখতেন। এক দিনও মিস দিতেন না। আর এ থেকেই তাঁর লেখালেখির শুরুটা হয়েছিল।
এ-ধরনের কিছু কথা থেকে আমি অনুপ্রাণিত হয়ে মিযানের বছর প্রতিজ্ঞা করি—এখন থেকে নিয়মিত রোজনামচা লিখব। চোখে তখন লেখক হওয়ার দুর্দমনীয় স্বপ্ন। ভালো লেখক হওয়ার জন্য যে-কোনো ধরনের কসরত করতে সবসময় প্রস্তুত থাকতাম। আজও প্রস্তুত আছি। এবং সারা জীবন প্রস্তুত থাকব। আমি আজও লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখি…
জামিয়া বাইতুল আমান মিনার মসজিদ ও ইসলামী কেন্দ্র, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
জানুয়ারি ২০২২