শীত! কেমন যেন শীতল প্রকৃতির এক নাম।
যার কথা শুনলেই শরীরটা বুঝি হিমশীতল বর্ণ ধারণ করে।
শীত-মৌসুমে প্রকৃতি অপূর্ব সাজে সজ্জিত হয়। শিউলি, বকুল, চন্দ্রমল্লিকাসহ হরেক রকম ফুলের সমারোহ হয় দিনে। কুয়াশাচ্ছন্নতা আর শিশিরভেজা গাছ ও ঘাসপাতার সজীবতায় তৈরি হয় এক উৎফুল্লকর পরিবেশ। মনের অকপটে ভাসতে লাগে অগনিত স্মৃতি। কল্পনার পেখম মেলে উড়ে যাই দূর সুদূরের গ্রামে। দেখতে পাই জরাবার্ধক্যে উপনীত বৃদ্ধদের চাদর মুড়ি দিয়ে আগুন পোহানোর দৃশ্য। কিশোর-কিশোরীদের আনন্দে মেতে ওঠার মনোহর চিত্র। ছেলে-মেয়েদের আনন্দ বৃদ্ধি পায় দ্বিগুণ। বিকেল হলে খেলাধুলা, হইচই করে মাতিয়ে তোলে গোটা গ্রাম। বাড়ি বাড়ি থেকে স্বজনভোজ উপলক্ষে ছুটে আসে হরেক রঙের পিঠাপুলির ঘ্রাণ। স্বজনদের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো বাড়ি।
শীত-সকালে কেউ বের না হলেও থেমে থাকে না কৃষকরা। দুধ-সাদা কুয়াশা উপেক্ষা করে ছুটে চলে মাঠের পানে।
সূর্যের রোদ এ-দিনে বড্ড মিষ্টি হয়। কুয়াশার পরত ভেঙে মুখে এসে লাগা রোদের ঝলকানিতে মন রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে। এ-মিঠা রোদ্দুরের অকল্পনীয় মজাটা যেন আর কোথাও পাওয়া যায় না।
সূর্যি মামা দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই ঝকঝক করে ওঠে শিশিরসিক্ত ঘাসের ডগা। ঠিক যেন হীরা! বৃক্ষ পাতা চুয়ে টপ করে পানির ফোঁটা নেমে আসে মাটির বুকে। ফুল-কলিরা কুয়াশা বর্ষণে অলংকারসজ্জিত হয়ে ওঠে। ক্ষণে ক্ষণেই আজ মনে পড়ে গ্রামের মাঝের ছোট্ট হাটের কথা। যেখানে রোজ বিহানে জমত ভাঁপা পিঠার আড্ডা। শীত-মজার সাথে ভাঁপা পিঠাকে যুক্ত না করলে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। ভাঁপা পিঠার মজা শীতের সকালকে দারুণ আমোদিত করে তোলে। হঠাৎ কোথাও থেকে আবার ভেসে আসে রস-বিক্রেতার হাঁক। খেজুরের রস অন্যরকম এক তৃপ্তি মেটায়। এ-সবই মিলিয়ে শীত যেন মানুষের জীবনে এক অন্যরকম স্মৃতি হয়ে লেপ্টে থাকে। যা কখনো ভুলবার নয়।
জানুয়ারি ২০২২