কোনো কাজকে অপরাধ জানার পর সেটা নিয়মিত রাখার ভালো কোনো দিক নেই। সবচেয়ে খারাপ দিক হলো আপনি নিজেকে একটা অপরাধে অভ্যস্ত করে নিচ্ছেন, যেটাতে যথেষ্ট অমঙ্গল অপেক্ষমান। আপনি যদি ধারণা করেন বা বুঝতে পারেন যে এইটা অপরাধ, এইটা গোনাহ… তাহলে ধীরে ধীরে এটা থেকে সরে আসুন। যদি এই ভেবে স্থির থাকেন যে এতে কোনো সমস্যা হবে না, বা পরে ‘তাওবা’ করে নেবো, তাহলে মোটের ওপর মাঝারি সাইজের একটি ধেঁ^াকা আপনি হজম করে চলেছেন। কারণ, বাস্তবে হোক বা না হোক, আপনি কোনো বিষয়কে অপরাধ ধারণা করার পরও এর ওপর অটল থাকার কারণে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আপনার চিন্তায়-কর্মে। পরবর্তী সময়ে এ রকম বা এর চেয়ে নিম্নমানের কাজও আপনি খারাপ জানার পরেও করতে থাকবেন। কোনো প্রতিক্রিয়া ছাড়াই। কারণ, আপনার ধারণায় যা খারাপ, এমন কাজও আপনি নিয়মিত করে অভ্যস্ত।
আর যদি সেটা বাস্তবিক অর্থেই পাপকর্ম হয়, আপনি বুঝতেও পারেন যে এইটা গোনাহের কাজ, তারপরেও এটা জারি রাখেন, তাহলে আপনি প্রকৃত অর্থেই একটা নিষিদ্ধ-হারাম কাজে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলছেন। যার ফলে অনেক নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হবেন। আপনার মন থেকে খোদাভীতি-শাস্তিভীতি ও হারামভীতি দূর হয়ে যাবে। যেটা আপনার চারিত্রিক স্খলন ও নৈতিক অধঃপতনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রভাবশালী। হোক ছোট গোনাহ, আজ যদি একটা মেয়ের প্রেমের প্রস্তাবে আপনি রাজি হয়ে যান, কাল তার ব্যভিচারের আহŸানেও রাজি হবেন! ভিন্ন দর্শন থাকতে পারে, কিন্তু কথা বা যুক্তিটা স্বাভাবিক এবং বাস্তব। (এখানে পরামর্শ হলো, বর্তমানে এইটা বেশি হচ্ছে, আসলে মনের দুর্বলতাটা বলতে গেলে অনিয়ন্ত্রিতই! খুব কম মানুষই এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে নিজের প্রবৃত্তিকে সামলে রাখতে পারেন। তাই কারও প্রতি দুর্বলতা অনুভব করলে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক উদ্যোগে আপাতত রাখঢাক ছাড়াই বিয়ে করে ফেলুন!)
বলছিলাম ছোট গোনাহর কথা, এটা থেকেও বেঁচে থাকা। কারণ হতেও পারে ক্ষুদ্রতার চূড়ান্তরূপে আপনি হয়ে যাবেন কোনো এক খোদাদ্রোহী, ধর্মবিমুখ ধ্বংসমুখী! (আল্লাহ হেফাজত করুন।)
নামাজ কাযা করছেন? হয়তো ভাবছেন এক ওয়াক্ত ছাড়া তো বাকি চার ওয়াক্ত পড়ছিই… তাহলে ভুল করছেন, আজ এক ওয়াক্ত ছাড়া মানে কাল দুই ওয়াক্ত ছাড়ার জন্যে প্রস্তুত হওয়া। এভাবে কখন যে বেনামাজি হয়ে আল্লাহর ঘৃণার পাত্র হয়ে যাবেন টেরই পাবেন না। পাপের প্রভাব কিন্তু বাড়তে থাকে। এক গোনাহ অন্য গোনাহের প্রতি ধাবিত করে।
মনে করুন, কোনো কারণে আপনি জেলে গেলেন, পাঁচ বছর দুর্ভোগ শেষে প্রমাণিত হলো আপনি নির্দোষ, খালাস পেয়ে বের হয়ে এলেন। এই যে মুক্ত হওয়া, এতে আপনার কপাল থেকে অপরাধীর কালিমাটা মুছে গেলেও জীবন থেকে কিন্তু আপনার পাঁচটা বছর হারিয়ে গেল। যেটা আর ফিরে পাবেন না। জেনে-বুঝে গোনাহ করে একদিন হয়তো তাওবা করে গোনাহ মাফ করিয়ে নেবেন, কিন্তু আপনার ততদিনে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। শারীরিক-মানসিক দিক থেকে অনেকভাবে জরাগ্রস্ত হবেন, যা থেকে মুক্তি দুঃসাধ্য। এ জন্যে কোনো কাজকে মন্দ জানার পরও সেটাতে লিপ্ত না থাকা চাই। অল্প অল্প করে হলেও এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা, হারামে অভ্যস্ত না হওয়া। ইসলামি আইনশাস্ত্রবিদরা বলেন, সমাজে প্রচলিত এমন কোনো কাজ যদি থাকে, যেটা অধিকাংশ মানুষ চর্চা করে, কিন্তু সেটা আলেম-উলামার কাছে হারাম প্রমাণিত হয়, তাহলে এর বিকল্প তেরি না করে প্রকাশ্যে এটাকে হারাম না বলা। কারণ, যদি বিকল্প থাকত তাহলে বলা যেত, উদাহরণত : যে, গান শুনবেন না, এটা নিষিদ্ধ; বিকল্প হিসেবে ইসলামি সঙ্গীত শুনুন। কিন্তু যেটার বিকল্প তৈরি হয়নি, দেখা যাবে সেটা আপনি হারাম বলার পরও মানুষ বিকল্প না পেয়ে দেদারসে এটাই করে চলেছে। এতে একে তো সে হারামের গোনাহে লিপ্ত, দ্বিতীয়ত জেনে-বুঝে করার কারণে ভাগিদার হবে আরও বেশি পাপের।
সবচেয়ে আশঙ্কার কথা, স্বেচ্ছায়-সজ্ঞানে সে নিজেকে হারাম কাজে অভ্যস্ত করে নিচ্ছে, যার পরিণাম ভয়াবহ। প্রিয় উসতাদ সফিউল্লাহ ফুআদ প্রায়ই বলতেন, ‘কী কী ভালো কাজ করছ সেই হিসেব না করে কী কী মন্দ কাজে লিপ্ত রয়েছ এখনও, সেই হিসেব করো। আর সেই সংখ্যাটা আস্তে আস্তে কমিয়ে নাও।’ তাহলে একদিন দেখবেন সকল প্রকার পাপ কাজ থেকেই মুক্ত আছেন। চেষ্টা শুরু করুন আজ থেকেই। তওবায় অতীত মুছে যাবে এটা আল্লাহর ওয়াদা। তা যতই কলুষিতই হোক। ক্ষমার সুসংবাদ রয়েছে। ভবিষ্যতের ব্যাপারে মনে মনে ইচ্ছা করুন, আমল করুন। আল্লাহ তাআলা কারও চেষ্টাই বিফল হতে দেন না। আজ হন, কাল হন, একদিন আলোকিত হবেনই, ইনশাআল্লাহ!
লেখক : কো-অর্ডিনেটর, দারুন নাশাত স্কুল অ্যান্ড মাদরাসা, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ
নভেম্বর ২০১৮