ঘড়ির কাটা বেলা এগারোটা ছুঁইছুঁই । আবিদ কোত্থেকে যেন দৌঁড়ে এসে সোজা বাসায় ঢুকলো। আবিদের মা রান্না ঘড়ে রান্না করছে। জানালা দিয়ে আবিদের ছুটে আসা দেখতে পেলেন। এখন বাথরুমে জরে ট্যাপ ছাড়ার শব্দ। আবিদের মা বিরক্ত ভঙিতে ভাবছেন; ছেলেটা এখন পানি দিয়ে তলিয়ে ঘরটা নষ্ট করবে। ছেলেটাকে নিয়ে ইদানিং খুব বিপদে আছি। কী যে করি! , আবিদের উশৃংখল সব কাজ-কর্মে আবিদের মা খুব বিরক্ত। বকতে বকতে ক্লান্ত। আবিদও যেন দিন দিন বকা শুনে আরো বেশি দুষ্টু হচ্ছে।
ছোটদের এই এক অভ্যাস- যতই বকা দেওয়া হয় ততই দুষ্টুমি একটু বেশি করে। এতো বকে কী আর হবে কিছুতেই ছেলেটা কথা শোনে না। বয়স সবে মাত্র পাঁচ হতে চললো। কবে যে ছেলেটা বড় হবে আর ওর দুষ্টুমিটা একটু কমবে তা কে জানে! আনমনে এসব চিন্তা করতে করতে আবিদের মায়ের দৃষ্টি পড়লো আবিদের দিকে, আবিদের মা অবাক। আবিদকে দেখেই ‘থ’ মেরে গেলেন। কৌতূহল ভরা চোখে তাকিয়ে রইলেন। আসলে কী হচ্ছে বুঝে উঠতে পারলেন না । শুধু চেয়ে রইলেন আবিদের দিকে।
আবিদ দাঁড়িয়ে আছে তার সাইজের ছোট্ট একটি জায়নামাযে। নামায পড়ছে। মাঝে মাঝে নামাযের সময় হলে জন্মদিনে বাবার দেওয়া জায়নামাযটিতে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে। কিন্তু আজকে এই বেলা দুপুরে! তাও আবার খেলা বাদ দিয়ে। অন্যদিন তো যোহরের আযান হয়ে যায় তবু আবিদের কোনো খোঁজ থাকে না। সারা পাড়া খোঁজ করেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এসব ভাবতে ভাবতে আবিদের মা রান্না রেখে ঘরে এলেন। আবিদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। নামায শেষে আবিদ দু’হাত উঁচু করে ফিস ফিস করে কী যেন দোয়া করলো।। দোয়া শেষে…
০বাবা কী হয়েছে?
০০কই মা?
০এই যে এখনো তো নামাযের সময় হয়নি। তারপর আজকে এতো আগে বাসায় ফিরলে। নামায পড়লে। কী যেন দোয়া করলে।
০০তুমিই তো বলেছো!
০কী বলেছি?
০০আমি যদি অন্য কারো জন্য দোয়া করি তাহলে ফেরেশতারাও আমার জন্য দোয়া করবে।
০হুম বলেছি তো। তা কার জন্য দোয়া করলে? মায়ের কথার উত্তর না দিয়েই আবিদ বলতে লাগলো, বাবা বলেছে না, আমি পরীক্ষায় ফাস্ট হলে আমাকে সাইকেল কিনে দিবে!
০হুম বলেছে তো!
০০এ জন্য আমি দোয়া করেছি আমার বন্ধু রাশেদের জন্য।
০ওর জন্য আবার কী দোয়া করেছো?
০০ও যেনো এবার পরীক্ষায় ফাস্ট হয়, এই দোয়া করেছি। খুব করে দোয়া করেছি। আবিদের মা হালকা মুচকি হেসে বললো, উমমমম, কিন্তু ওর জন্য কেন এই দোয়া করলে? আবিদ এবার ভাঙা ভাঙা ভাষায় বলতে লাগলো, আমার দোয়া কবুল হবে কিনা তা তো জানিনা মা, কিন্তু ফেরেশতারা তো আ মার জন্য দোয়া করবে কারণ আমি অন্যের জন্য দোয়া করেছি। আর ফেরেশতাদের দোয়া তো আল্লাহ কবুল করবেন। তখন আমি ফাস্ট হয়ে যাবো- বলে আবিদ দুহাত মুট করে হেসে দিলো। আর যদি আমার দোয়া কবুল হয়ে যায় তাহলে হোক না! তখন আমার বন্ধু রাশেদও ফাস্ট হবে আর আমিও হবো কারণ ফেরেশতারা তো আমার জন্য দোয়া করেছে। আবিদের কথা শুনে আবিদের মা হতবাক হয়ে গেলেন। বুকে টেনে নিলেন আবিদকে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। আবিদের মানবিক সীমাবদ্ধতা আবিদকে এতোটা উদার হতে দিয়েছে এটা ভেবেই তার মায়ের বুক প্রশান্তির বাতাসে শীতল হয়ে উঠলো। এটা কোনো রুপকথা নয়। বরং বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা। আজকের ছোট্ট আবিদ এতোটা উদার হতে পারলে আমরা কেন পারি না! অথচ রাসূল স.ই আমাদের উদার হতে বলেছেন। বলেছেন অন্যের জন্য দোয়া করতে। আমাদের দেখিয়ে গিয়েছেন কীভাবে অন্যের জন্য উত্তমকে প্রাধান্য দিতে হয়। রাসুল স. বলেন, আবু দারদা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি, যখন কেউ তার ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করে তখন ফেরেশতারাও বলতে থাকে; আমীন! তোমার জন্যও অনুরূপ হোক। সুতরাং আসুন অন্যের জন্য দোয়া করি। নিজের সত্ত্বাকে উদার করে দিই সকলের জন্য। পৃথিবীর জন্য। আমাদের প্রার্থনায় ভালো থাকুক পৃথিবীর মানুষ।