আদালতের কাঠগড়ায় ওঠানো হয়েছে সাদ্দাম হোসাইনকে। নিয়ম অনুযায়ী বিচারক তাঁর পরিচয় জানতে চাইলেন, ‘নাম কী আপনার? নাম বলুন!’ সাদ্দাম হোসাইন খানিকটা বিস্মিত হবার ভান করে উল্টো প্রশ্ন ছুড়লেন বিচারকের দিকে, ‘আপনি আমার নাম জানেন না! আমার নাম তো সমস্ত ইরাকি এমনকি বিশ্ববাসীর কাছে সুপরিচিত।’
বিচারক ইরাকি সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন, ‘জানি, কিন্তু কানুন অনুযায়ী আসামি যখন কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন, বিচারক তাঁর কাছে তাঁর পরিচয় জানতে চাইবেন এবং আসামি নিজের পরিচয় দিতে বাধ্য থাকবেন। আপনি কি সংবিধানের কানুনকে সম্মান করেন না?’
সাদ্দাম এবার কথার মারপ্যাঁচে ফেলে দেন বিচারককে। বলেন, ‘সংবিধানের কানুনকে অবশ্যই সম্মান করি। কিন্তু এ কানুন কোনো প্রহসনমূলক বিচারে প্রয়োগ করার জন্য না। আপনারা যে বিচার শুরু করেছেন (বা যে বিচার আপনাদের দ্বারা শুরু করানো হয়েছে), তা আমেরিকার পাতানো একটা প্রহসন।’ বিচারক শেষমেষ নিজেই প্রদান করতে শুরু করেন সাদ্দাম হোসাইনের পরিচয়, ‘যাই হোক, আপনি সাদ্দাম হোসাইন…’
সাদ্দাম হোসাইন তাঁকে কথা শেষ করতে দেন না, খানিকটা প্রতিবাদী কণ্ঠে কথা শুধরে দেন, ‘ইরাক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট, ইরাকিদের জাতীয় নেতা, সেনাবাহিনীর মহাধিনায়ক সাদ্দাম হোসাইন আবদুল মজিদ।’
তারপর শুরু হয় আদালতের বিচার প্রক্রিয়া। প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসাইনের বিচার। একাধারে দুই যুগ প্রতাপের সঙ্গে শাসন করে গেছেন যে ইরাকে, সে ইরাকেরই সর্বোচ্চ আদালত বিচার করছে তাঁর। ইরাকের দুজাইল শহরে শিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযানে মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে তাঁর ওপর।
দুই
২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার হন সাদ্দাম হোসাইন। গণবিধ্বংসী অস্ত্র মজুদের অভিযোগে মার্কিনিরা ইরাকে আক্রমণ করার কয়েক মাস পর। এ কয়েক মাস তারা হণ্যে হয়ে খুঁজেছে তাঁকে, কিন্তু তাঁর টিকিটিরও সন্ধান পায়নি। সাদ্দাম হোসাইনের কাছের অফিসাররা বিশ্বাসঘাতকতা না করলে কোনোদিনই হয়তো নিজের মুঠোতে ওভাবে তাঁকে পুরতে পারত না মার্কিন বাহিনী।
যে অভিযোগে আমেরিকা হামলা করেছে ইরাকে, গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অভিযোগ, তার সামান্যতম কোনো প্রমাণও তারা বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করতে পারছে না, অথচ আক্রমণের মাস কয়েক পেরিয়ে গেছে। ততদিনে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে ইরাক। মার্কিন প্রশাসনের ওপর তাই চাপ আসছে চতুর্দিক থেকে। নিজেদের হামলাকে জায়েজ করার জন্য মার্কিনিরা পাগলপ্রায়। প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসাইনকে গ্রেফতারের পর তাদের ভেতরে যেন খানিকটা প্রাণ ফিরে এল। সাদ্দামের কাছ থেকে এবার উদ্ধার করা যাবে যাবতীয় তথ্য। আমেরিকার বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা সেন্টার ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) শুরু করে তাঁকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ। এক মাসের ভেতর পঁচিশ বার তারা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু কাক্সিক্ষত কোনো ফলাফল পায়নি। সিআইএ ব্যর্থ হওয়ায় এক মাস পর দায়িত্ব দেওয়া হয় আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-কে। এই জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সাদ্দামকে কোন অপরাধের কারণে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এফবিআই-এর কর্মকর্তা জর্জ পিরোকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় জোর-জবরদস্তির বদলে গল্প ও আন্তরিক হৃদ্যতা তৈরির মাধ্যমে সাদ্দাম হোসাইনের কাছ থেকে তথ্য আদায় করবে এ দল।
সিদ্ধান্ত মুতাবিক শুরু হয় দফায় দফায় সাক্ষাৎকার। এ বড় কঠিন জিজ্ঞাসাবাদ। একদিকে সাদ্দামকে কোনো অবস্থাতেই রাগানো যাবে না, অন্যদিকে তাঁর থেকে তথ্য উদ্ধার করতে হবে। সাদ্দাম ছিলেন প্রচণ্ড বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। প্রতিটা সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের জীবনের গল্প শোনাতেন, শোনাতেন নিজের সফলতা ও ইরাকে তাঁর কৃতিত্বের আখ্যান। তদন্তকারী গোয়েন্দা অফিসারদের প্রশ্ন অত্যন্ত কৌশলের সঙ্গে এড়িয়ে যেতেন। প্রশ্নের বদলে অনেক সময় তাদের লাগিয়ে দিতেন তাদের জীবনের গল্প বলায়। ছয় মাস অবধি এভাবেই চলতে থাকে তাঁর জিজ্ঞাসাবাদ। এ ছয় মাসে এফবিআইয়ের তদন্ত দল সাদ্দামের কাছ থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করেছে, এর দ্বারা তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা কঠিনই বৈ কি! সমালোচকরা বলেন, সাদ্দাম এর দ্বারা অত্যন্ত কৌশলে এফবিআইয়ের মাধ্যমে নিজের জীবনের সফলতা ও কৃতিত্বের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করিয়ে নিয়েছেন।
অবশেষে সাদ্দামকে বিচারের মুখোমুখি করা হয় সাদ্দামের শাসনামলের বিভিন্ন অফিসার ও বার্থ পার্টির অফিস তল্লাশি করে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে। বিচার কার্য শুরু হয় ইরাকের উচ্চ আদালতে।
১৯৮২ সালে ইরাকের দুজাইল শহরে সাদ্দাম হোসাইনকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা করে সেখানকার শিয়া অধিবাসীরা। সাদ্দাম হোসাইন স্বভাবতই রুষ্ট ছিলেন ইরাকের শিয়া ও কুর্দি জনগোষ্ঠীর ওপর। এর কারণও আছে অনেক। শিয়া ও কুর্দি বলতেই সাদ্দামের বিরোধী। সাদ্দামের বিরুদ্ধে সুযোগ পেলেই তারা কূটচাল চালত। এমনকি তাঁকে প্রাণে মারার জন্য তারা ছিল বদ্ধপরিকর। দুজাইলে যখন তারা সাদ্দামকে হত্যার চেষ্টা করে, সাদ্দাম খেপে যান। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন সেখানে অভিযান পরিচালনা করতে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নির্দেশ মাফিক অভিযান চালালে ১৪৮ জন শিয়া প্রাণ হারায়। প্রায় দুই যুগ পর এই অভিযোগ এনেই মার্কিন জোট তাঁকে দাঁড় করিয়েছে বিচারের কাঠগড়ায়।
তিন
ডক্টর নাজিব আল-নুয়াইমি। কাতারের সাবেক আইনমন্ত্রী। বিশ্বখ্যাত আইনজীবী। সাদ্দাম হোসাইনের শাসন প্রক্রিয়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। কিন্তু সাদ্দামের বিচারকার্য শুরু হওয়ার কিছু দিন পর সাদ্দাম-কন্যা রাঘাদ হোসাইনের অনুরোধে তিনি সাদ্দামের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। প্রথমদিকে অসম্মতি জানিয়েছিলেন। অসম্মতির কারণ অবশ্যি সাদ্দাম-বিরোধিতা নয়, তিনি বলেছিলেন, ‘এ বিচারে আমার উপস্থিতি বিচারটাকে কেবল গ্রহণযোগ্যই করে তুলবে, আর কিছু নয়। কারণ এটা একটা প্রহসনমূলক বিচার। এর রায় অনেক আগে আমেরিকাতেই লেখা হয়ে গেছে। সাদ্দাম হোসাইনকে নির্ঘাত ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে।’
নাজিব আল-নুয়াইমি সাদ্দামের শাসনামলকে সমর্থন না করলেও সাদ্দাম যখন একজন মজলুম হয়ে প্রহসনমূলক বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ালেন, তখন তিনি তাঁকে সহায়তায় এগিয়ে না এসে পারলেন না। বস্তুত তিনি এর আগেও এভাবে মজলুম আসামিদের পক্ষে অনেকবার লড়াই করেছেন। এর মধ্যে গুয়েন্তামোর ৭০ জন মুসলিম বন্দীর পক্ষে তাঁর আইনি লড়াই উল্লেখযোগ্য। সাদ্দাম যেমন আত্মমর্যাদাবান ছিলেন, তেম্নি তিনিও ছিলেন প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। সাদ্দামের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য যখন রাঘাদ হোসাইন তাঁকে বারবার অনুরোধ করেন, তখন তিনি একটি শর্তে রাজি হয়েছিলেন–এ লড়াইয়ের জন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিক গ্রহণ করবেন না।
আল-নুয়াইমি সাদ্দামের সঙ্গে প্রথম যখন সাক্ষাৎ করেন, তখনই তিনি সাদ্দামকে পরিষ্কার বলে দিয়েছিলেন, ‘এ বিচারপ্রক্রিয়ার রায় আপনার মৃত্যুদণ্ড। এটা নিশ্চিতভাবেই আপনাকে জানতে হবে। আমি যা করছি তা আশু শান্তির জন্য। আর কিছু না। কারণ, আমেরিকা কোনোভাবেই আপনাকে জীবিত রাখবে না।’
সাদ্দাম হোসাইন তাঁর কথা বিশ্বাস করেছিলেন। আল-নুয়াইমির কথার উত্তরে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড হলে হোক, কিন্তু আপনি আমার পক্ষে লড়বেন শুধু এ জন্য যে, তামাম দুনিয়া যেন এ সত্যটা জানতে পারে, একটা প্রহসনমূলক বিচারের ফাঁদ পেতে আমেরিকা আমাকে হত্যা করেছে।’ বস্তুত তখন থেকেই তিনি মৃত্যুর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করেন।
উইল বার্ডেনওয়ার্পার সাদ্দামের বন্দীজীবন নিয়ে যে বইটি লিখেছেন, দ্য প্রিজনার ইন হিজ প্যালেস, সেখানে সাদ্দামের প্রহরায় নিযুক্ত বারোজন মার্কিন সদস্যের স্পেশাল ফোর্সের বর্ণনা এসেছে। তাঁরা বলেছেন, সাদ্দাম হোসাইনকে যেদিন তাঁরা কারাগার থেকে ফাঁসির জন্য বের করে নিয়ে যান, সাদ্দাম বুঝেছিলেন ফাঁসির জন্যই তাঁকে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তারপরও তিনি ছিলেন একদম শান্ত-স্বাভাবিক। চলনে আচরণে মৃত্যুর বিন্দুমাত্র ভয় নেই। তাঁর এই যে অস্বাভাবিক স্বাভাবিকতা, এটা তৈরি হয়েছিল মূলত আল-নুয়াইমির সেদিনকার সেই সত্য উচ্চারণে।
চার
ইউটিউবে প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের অসংখ্য ভিডিও ছড়িয়ে আছে আদালতে তাঁর বক্তব্য নিয়ে। এক হাতে কুরআন নিয়ে তিনি জবানবন্দী দিচ্ছেন সাহসী একজন সেনাপ্রধানের বক্তব্যের মতো। চোহারায় হতাশা ভয় কিংবা বিমর্ষতার কোনো ছাপ নেই। নেই অপরাধীর মতো কোনো কাকুতি-মিনতি। বীরের মতো সাহস ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিতর্ক করে গেছেন বিচারকের সঙ্গে। বিচারের নানা অসঙ্গতি এবং এটা যে আমেরিকার নির্লজ্জ প্রহসনের অংশ, বলে গেছেন নির্দ্বিধায়। কখনও কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, কখনও শুনিয়েছেন বিচারের ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা। তাঁর প্রহরায় নিযুক্ত বারোজন মার্কিন সৈন্য এবং অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায়, কারাগারে থাকাকালীন নিয়মিত তিনি ধর্মচর্চা করতেন। নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত এবং নামাজের খুব পাবন্দি করতেন।
তাঁর ট্রাইবুনালের বিচারকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রউফ আবদুর রহমান। তিনিই সাদ্দাম হোসাইনের ফাঁসির আদেশ দেন। রউফ আবদুর রহমান ছিলেন খুব কঠোর। অন্যান্য বিচারক সাদ্দামকে অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ কথা বলার সুযোগ দিতেন এবং সাদ্দামের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁদের চেহারায় একটা শ্রদ্ধা ও সমীহভাব ফুটন্ত থাকত, কিন্তু রউফ ছিলেন এর সম্পূর্ণ উল্টো। আদালতে সাদ্দাম হোসাইনকে অনেক সময় ভালোভাবে কথা বলারই সুযোগ দিতেন না। ২০০৬ সালে যেদিন ফাঁসির রায় দেওয়ার জন্য সাদ্দামকে আদালতে হাজির করা হয়, আদালত শুরু হলে কাঠগড়ায় উঠে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে ছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গী ইরাকের সাবেক উচ্চপদস্থ আরও কয়েকজনের রায়ও পড়া হয় সেদিন। সর্বশেষে যখন সাদ্দামের পালা আসে, রউফ আবদুর রহমান তাঁকে চেয়ার থেকে উঠে এক পাশে দাঁড়ানোর আদেশ দেন। তাঁর আদেশ দেওয়ার ভঙ্গি ছিল খুবই উদ্ধত এবং নীচু মানসিকতার। প্রচÐ আত্মমর্যাদার অধিকারী সাদ্দাম প্রথমে অস্বীকৃতি জানান উঠে দাঁড়াতে। বলেন, ‘না, আমি দাঁড়াব না, বসেই শুনব। আপনি রায় পাঠ করুন।’ কিন্তু সাদ্দাম তো তখন অসহায়। বিচারকের কথা মানতেই হবে। বিচারক রউফ এবার পূর্বের চেয়েও নোংরা অঙ্গভঙ্গি নিয়ে কঠোরভাবে আদেশ করেন, ‘আপনাকে দাঁড়াতে হবে। দাঁড়ান।’
জিন্দেগিভর যিনি মানুষকে শাসন করে এসেছেন, জীবনের শেষ সময়ে এসে আজ তিনি কতটা অসহায়। পশ্চিমা বিশ্বের হাতের পুতুল সামান্য এক বিচারক এই বয়োবৃদ্ধ অবস্থায় নিজের মৃত্যু সংবাদ শোনার জন্য তাঁকে দাঁড়াতে বাধ্য করছে। তিনি ক্ষোভ, ক্রোধ এবং নিদারুণ অসহায়ত্ব নিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান। বিচারক পাঠ করতে শুরু করেন তাঁর মৃত্যুর পরোয়ানা। সাদ্দাম হোসাইন তখন উঁচু আওয়াজে নির্ভীক ও নির্বিকার কণ্ঠে বারবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলতে থাকেন। সেই সঙ্গে এক হাতে কুরআন উঁচিয়ে নিজেকে মানবতার বন্ধু এবং আমেরিকা ও তার ইন্ধনে তৈরি এই বিচারপ্রক্রিয়াকে মানবতার শত্রæ হিসেবে ঘোষণা দিতে থাকেন। রায় পাঠকালীন পুরোটা সময় এভাবে তিনি উচ্চকিত কণ্ঠে প্রতিবাদ করে যান।
সাদ্দাম হোসাইনের ফাঁসির রায়দাতা উদ্ধত বিচারক রউফ আবদুর রহমান ২০১৪ সালে তাঁর অন্যায় এই বিচারের শাস্তি ভোগ করেন। ইরাকের সাদ্দামপন্থী বিদ্রোহীরা ২০১৪ সালের ১৬ জুন তাঁকে গ্রেফতার করে এবং এর দুদিন পর ১৮ জুন সাদ্দামকে ফাঁসির আদেশ দেওয়ার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলায়।
পাঁচ
সাদ্দাম হোসাইন শাসক হিসেবে অনেক ভুল করেছেন, ইসলামের জন্য হয়তো তিনি খুব একটা কিছু করেননি, তাঁর শাসনব্যবস্থা ছিল সেক্যুলার মতাদর্শের ভিত্তিতে, কিন্তু আমেরিকা তাঁকে ফাঁসির দড়িতে এ কারণে ঝুলায়নি যে তিনি দুঃশাসন করেছেন। ঝুলিয়েছে তিনি একজন মুসলিম নেতা ছিলেন, এ জন্য। তাঁর কারণে আরবে তাদের মোড়লগিরি করতে অসুবিধে হয়, এ জন্য। পথের কাঁটা না সরালে আরবের অবারিত তেল ভাণ্ডার লুটেপুটে খেতে তাদের খানিকটা অসুবিধে হচ্ছিল, তাই পথের কাঁটা তারা সরিয়ে দিল, ব্যস।
তা ছাড়া কারাগারে বন্দী থাকাকালীন তিনি আপাদমস্তক একজন ধার্মিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। হয়েছিলেন এক চমৎকার চরিত্রের অধিকারী। এটা বোঝার জন্য বেশি না, কেবল দ্য প্রিজনার ইন হিজ প্যালেস বইটা পড়াই যথেষ্ট। অভিজাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নবপ্রকাশ থেকে মাস কয়েক আগে সাদ্দাম হোসাইন : জীবনের শেষ দিনগুলো নামে বইটির বাংলা অনুবাদ বেরিয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো সাদ্দাম হোসাইন মৃত্যুর সময় পুরো পৃথিবীকে সাক্ষী রেখে আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর রাসুলের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করে একজন পরিপূর্ণ ঈমানদার হয়ে এ পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন। এমন সৌভাগ্য ক’জনের নসিবে জোটে?
সাদ্দাম হোসাইনের পরকালীন জীবনের অফুরান কল্যাণের জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে অজস্র প্রার্থনা।
হামমাদ রাগিব নবধ্বনির সহকারী সম্পাদক
ডিসেম্বর ২০১৮ সংখ্যায় প্রকাশিত