‘আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে
জানি নে, জানি নে…
কিছুতেই কেন যে মন লাগে না…’
‘আহা, মাঝরাতে এসব কী শুরু করলি বল তো! এখন কি তোকে কেউ কিছু করতে বলেছে?’
‘দেখছিস না, গান গাইছি!’
‘এখন গান গাওয়ার সময়?’
‘তো কখন গান গাওয়ার সময়?’
‘ধ্যাৎ!’
‘আচ্ছা, তুই এত রাগছিস ক্যান আপি? দ্যাখ, দ্যাখ, কী সুন্দর বৃষ্টি পড়ছে!’
‘তুই দ্যাখ! আমার অত শখ নেই।’
‘বৃষ্টি দেখার শখ নেই তো কিসের আছে শুনি?’
‘আমার কিসে শখ আছ, কিসে নেইÑসেটা তোর জেনে কাজ নেই। দয়াকর এখন ঘুমাতে দে!’
‘এত সুন্দর রাতটা ঘুমিয়ে নষ্ট করবি? চল ব্যালকনিতে গিয়ে বৃষ্টি দেখি!’
‘কী বললি! রাত আমি ঘুমিয়ে নষ্ট করছি? তোর মাথাটা ঠিক আছ তো?’
‘কেন, তোর কোনো সন্দেহ আছে?’
‘এখন আমার সত্যি সত্যিই সন্দেহ হচ্ছে।’
‘কেন?’
‘তোর পাগলামী দেখে। আচ্ছা, সত্যি করে বলতো, প্রেমে টেমে পড়িসনি তো?’
‘হি হি। এতক্ষণে বুঝতে পারলি? তাহলে তো বলত হচ্ছেÑ
শূন্যতায় বেশ শূন্যতায়
আজই–এ ভরা বরষায়;
এক টুপটাপ ঘন কালো সন্ধ্যায়–
মেঘ হয়ে এসো তুমি
আমি হব ঝরণা…’
‘কী ব্যাপার? তুই দেখি প্রমের কবিতা আবৃত্তি করছিস! আর এখন তো সন্ধ্যা না, রাত। মধ্যরাত।’
‘এখন যে মধ্যরাত এতক্ষণ সেটা মনে ছিল না?’
‘ঠিকাছে আমার ভুল হয়েছে। এবার বল, প্রেমের কবিতা আবৃত্তির কারণ কী?’ কার প্রেমে পড়েছিস?’
‘ধুত্তুরি! কার প্রেমে পড়ব? কী উল্টাপাল্টা বকছিস?’
‘এই একটু আগেই না বললি প্রেমে পড়েছিস?’
‘আরে বাবা, প্রেমে পড়লেই যে মানুষের প্রেমে পড়তে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।’
‘মানুষের প্রেমে পড়িসনি তো কীসের প্রেমে পড়েছিস!’
‘প্রকৃতির।’
‘নাহ, তোর মাথাটা পুরোপুরিই গেছে!’
‘আপি প্লিজ! চল না রে, বাইরে যাই। দ্যাখ কী সুন্দর বৃষ্টি পড়ছে! মনে হচ্ছে আজ আকাশটা ফুটো হয়ে গেছে।’
‘কী আর করব, যে প্যাকপ্যাক শুরু করেছিস, ঘুমোতে তো দিলি না। চল আজ না-হয় তোর সঙ্গে বৃষ্টিই দেখি।’
‘কী বললি! আমি প্যাকপ্যাক করছি? ঠিকাছে তুই ঘুমা। কারো যেতে হবে না আমার সঙ্গে। আমি একাই যেতে পারি।’
‘আরে পাগলী, রাগ করছিস ক্যান? আমি তো মজা করছিলাম। চল বৃষ্টি দেখব।’
‘থাক দরকার নেই।’
‘লক্ষী বোন আমার! চল বাইরে যাই।’
‘চল।’
‘দাঁড়া, ঘড়ি দেখি কয়টা বাজে। দু’টো বেজে সাতচল্লিশ মিনিট। তারচেয়ে আগে দু’রাকাত নামাজ পড়ে
নিই। যে দয়াময় এ সুন্দর প্রকতি দান করেছন তাঁর কাছে শুকরিয়া জানাই আগে।’
অজু করে এসে দু’বোন নামাজ আদায় করলাম। তারপর মুনাজাত শেষ ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম। নিস্তব্ধস্ত পৃথিবী। শুধু বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ। মাঝে মাঝে মেঘর গর্জন। বাড়ির পাশের পুকুরটায় ব্যাঙদের মেলা বসেছে বোধহয়। মনের সুখে গান ধরেছে ওরা। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে আছে। শুধু আমি আর আপু জেগে। আপু অপূর্ব মায়াময় কণ্ঠে নিচু স্বরে কুরআন তেলাওয়াত করছে–‘ফাবি আইয়্যি আ-লা-ই রাব্বিকুমা তুকাজ জিবান।’ আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছি আর বৃষ্টি দেখছি। বৃষ্টি দেখছি আর শুনছি। তেলাওয়াতের মোহময় পবিত্রতা হৃদয়কে শীতল করে তুলছে অমোঘ এক ভালোলাগায়।
লিখেছেন : কামারগাড়ি, বগুড়া থেকে
আগস্ট ২০১৮