নির্ঘুম রাত। নির্লিপ্ত ঝরে যাচ্ছে স্বপ্নের নক্ষত্র। কে যেন ডাকে, মেঘ। দূরে কোথাও বৃষ্টি হয়। সিথানে কিসের সৌরভ? কেমন বিমর্ষ অন্ধকার। নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে অনন্তকাল। জোছনার প্রতীক্ষায় ফিকে হয়ে যাওয়া আকাশ, একটু ভাবে না নির্ঘুম চোখের কথা। শৈশবের পৃষ্ঠায় যে লিখে রাখে উদাসীন প্রেম। কেমন নির্বিকার ফুরিয়ে যাচ্ছে জীবন-প্রদীপ। নির্ভেজাল মুগ্ধতা উড়ে বাতাসে। ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের আলো ডেকে দিচ্ছে শেষরাত। ¯িœগ্ধ হাওয়ার সুবহে সাদিক। বালিকার উঠোনে সফেদ বকুলের জায়নামাজ। চারপাশ আচ্ছন্ন করে রাখে প্রার্থনার বিনম্র সুর। অন্ধকার শেষে কোমল ভোরের কোলাহল। বুকের ভেতর থমকে থাকে রোদ।
কোত্থেকে একটা শালিক ডানা ঝাপটে দৃষ্টির আড়াল হয়, তারপর সেই শূন্য আকাশ। টিপটিপ বৃষ্টি। কাকভেজা হয়ে চিলোকোঠায় ফিরছে বিষণœ চড়–ই। ওরা জানে না, একদিন আবার জাগবে রোদ, নিঃশব্দে হারাবে বৃষ্টিমুখর এই প্রহর। প্রত্যুষের এই জলজ প্রেম মুছে দেয় বিনিদ্র রাতের যন্ত্রণা। তারপরও বৃষ্টির ¯িœগ্ধ ফোঁটায় লেগে থাকে একটু বিষাদ কিংবা না-বলা গল্পের হুতাশন। পুকুরভর্তি জলের বৃত্ত, বাতাসে মুছে যাওয়া বৃষ্টিচিহ্ন। কী যেন মনে পড়ে, দূর অতীতের কোনো স্মৃতি-দুপুর।
বিকেলে আকাশের কোণে গোধূলি জাগলে, স্বপ্নের পৃথিবীটা একটু রঙিন হয়ে সন্ধ্যা নামার সাথে-সাথে পাখির কলরবে আবার মিলিয়ে যায় সবকিছু। ধূসর ক্যানভাসে আটকে থাকে একটা মধুরলগ্ন, একঝাঁক ধানশালিক, একচিলতে আকাশ শুধু। দিনশেষে এইটুকুই বোধহয় আমার, বাকি সব শূন্যতার।
অদূরে একটি বটগাছ, কেমন নির্বিকার মরে যাচ্ছে। আসা-যাাওয়ার পথে সবাই কেমন থমকে দাঁড়ায়। এতদিন রোদ-বৃষ্টিতে আশ্রয় হয়ে থাকা বৃক্ষটা পাতাহীন কেমন মলিনতায় ঢেকে যাচ্ছে। আঁধারে অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে গাছটাকে। একটা পাখি বসে আছে নিশ্চুপ। মনটা হয়তো খারাপ। সন্ধ্যায় আর ওদের আসর বসবে না কোনোদিন। চাঁদের ধূসর আলোয় মাটিতে প্রতিবিম্বিত হয় আরেকটি বটবৃক্ষ। চারপাশে যার জোছনার নৃত্য। এখানে, একটি বটগাছ সঙ্গোপনে মরে যাচ্ছে, শব্দ হয়ে ঝরছে বৃষ্টি―স্তব্ধতার গান। আমার বিপণœ নদীটির কথা মনে পড়ে। ঢেউ ছাড়া যার কেউ নেই।
বাইরে রাতের অন্ধকার। বাতাসে জলজ প্রেম। কোত্থেকে ছুটে আসে দমকা হাওয়া। নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকা দুপুর। বৃষ্টিজলে লিখে রাখে তন্দ্রার এপিটাফ। টিনের চালে কবিতার কোলাহল। চোখের কোণে বিষাদ আঁকে বিজলি-চমক। মৃত্যুর মতো মেঘের আর্তনাদ। জীবনের অকারণ স্তব্ধতা, ঝিরঝির পঙক্তি। বৃষ্টি, তারপর এক নিশ্চুপ প্রহর।
সেপ্টেম্বর ২০১৮