গ্রামীণ জীবনের সকালটাতে আজানের সুর শুনে ঘুম ভাঙে সবার। কানে কানে ভেসে আসে পাখিদের কোরাস। কিচিরমিচির শব্দে সৃষ্টি হয় নিত্যনতুন ছন্দ। কোমল হাওয়ারা দোলা দেয় মনের ভেতর। গাছের মধ্য দিয়ে উঁকি দেয় সূয্যিমামা। গ্রামের সবুজ পল্লবে আগমন ঘটে এক সোনালি সকালের। শ্যামল পাতায় পড়ে মিষ্টি রোদ। যেন তা ঝিলিক দিয়ে ওঠে হিরের মতোন। আবার কড়া রোদে শুকিয়ে যায় সবুজ পাতা৷ মুছে যায় রং, সবুজাভ আভা। ঝড়ে পড়ে গ্রামের বুকে বুকে। মানুষের পদধ্বনি আর ঝরাপাতার গান মিলে বাজে এক নতুন সুর৷ এসব যেন গ্রামের প্রাণ।
নিয়ম করে ঋতুর দেখা মেলে গ্রামের আঙিনায়৷ এখন বর্ষা বলে জলের কলকল সুর শোনা যায় গ্রামের চারপাশে৷ আষাঢ়ে বর্ষণ হয় ক্রমাগত। কালো মেঘ জমাট বাঁধে গ্রামের আকাশে৷ শুরু হয় বৃষ্টির রিনিঝিনি তান। টিনের চালে পড়ে টিপটিপ করে। মন হারায় কী এক মুগ্ধতায়! এ যেন এক নতুন ঝংকার। বৃষ্টি ছোঁয়ার ইচ্ছে জাগে খুব। বাতায়ন পথে বাড়িয়ে দেওয়া হাত ভিজে হয় একাকার।
গ্রামের উঠোনে শুরু হয় জল-কাদার খেলা। ছোট-বড় অনেকেই হোঁচট খায় তাতে। ফুটে ওঠে কাপড়ে কাদার আঁকাবাঁকা ছাপ। এই হাস্যকর দৃশ্য রূপ নেয় গ্রাম্য সুখ-দুঃখের গল্পে। অনেক সময় বৃষ্টি নামতে নামতেই গড়ায় বিকেল।
গোধূলিলগ্নে সূর্যটা লুকিয়ে যায় গাছের ভেতর। গ্রামের পথে পথে গবাদি পশুর পাল আপন মনে ফিরে যায় গোয়ালঘরে৷ আঁধারে ছেয়ে যায় গ্রামের আকাশ। সন্ধ্যে নামে গাঁয়ের কোলে৷ ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস৷ উঠোনে উঠোনে মেলে দাদু-নাতির গপ্পো-আসর। রুপোলি চাঁদটা হেসে ওঠে মাথার ওপর। জোছনা ঢেলে দেয় গ্রামের কোলে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয় গ্রামের জনপদ। নীরব মুগ্ধতা শুরু হয় গ্রামের ঘরে ঘরে। স্বপ্নের রঙিন পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায় সবাই। গ্রামজুড়ে আরও হাজারও মুগ্ধতার জন্ম নেয় প্রতিনিয়ত৷
কবির মনে জন্ম নেয় গ্রাম্য প্রেম। উষ্ণ কলম লিখতে থাকে—
গ্রামের প্রতিটি শব্দে মুগ্ধতা জন্ম নেয় মনে
সবুজ গ্রামকে ভালোবাসি তাই প্রতিটি ক্ষণে।
অক্টোবর, ২০২০