সুলতান জালালুদ্দিন আর আমির মামদুদ। রিশতায় দুজন চাচাতো ভাই। আমির মামদুদ বিয়ে করেছেন চাচাতো বোনকে। সে সুবাদে সুলতানের ভগ্নিপতিও তিনি। দুজনের মাঝে বেশ গভীর সম্পর্ক। নাড়ীর টান যাকে বলে।
গা ছমছম করা রাত। আলোঝলমলে চাঁদের গায়ে সলাজ চাদর। ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিজের ছবিও দেখা যাচ্ছে না। এরমাঝে সুলতানপ্রাসাদ আলোকময়, অন্য এক জগত। পুরো ভবনজুড়ে তখন শুধু আলোর মেলা। রঙ-বেরঙের খেলা। সুলতানের প্রাসাদ বলেই কথা! না হয় এ অন্ধকারে কোথাও আলোর দেখা নেই। অথচ সেখানে আলোর অভাব নেই। যেন সূর্য হেসে উঠেছে ভবনজুড়ে। আর সে সূর্যের আলোকরশ্মি গায়ে মেখে পরমানন্দে দাবা খেলছেন তারা দুই চাচাতো ভাই। জালালুদ্দিন ও মামদুদ। খেলা চলছিল বেশ। মাঝে হঠাৎ আলাপ জুড়ে দিলেন জালালুদ্দিন।
‘মহান আল্লাহ আব্বাকে ক্ষমা করুন। কেন যে তিনি এ ভুলটা করতে গেলেন। হিংস্র তাতারিদের যদি সামান্য একটু ধাওয়া করে যেতেন, তাহলেই যথেষ্ট ছিল। এতে ওরা নাকানিচুবানি খেয়ে ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াত এবং চীনপাহাড় ও সাহারার মরুভূমিতে ঘুরঘুর করত। সামনে আর কদম ফেলার সাহস করত না।’
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে ফেললেন সুলতান। মামদুদ তখন নিষ্পলক তাকিয়ে আছেন। বিস্ফারিত চোখে চেয়ে আছেন তাঁর দিকে। ‘ও, বুঝেছি। আপনি তাহলে দাবাখেলার ইনিংস শেষ করতে চান! না, এত তাড়াতাড়ি সেটা হবে না।’ মনেমনে বললেন কথাগুলো। এরপর জোর গলায় সুলতানকে বললেন, ‘জাহাঁপনা! আপনি ঠিক ধরতে পেরেছেন। আসলেই চাচাজান খোওয়ারেজমশাহ কৌশলগত ভুল করেছেন। কিন্তু তাই বলে কি শুধু তাঁকে দোষারোপ করেই যাব? সবকিছুরও তো একটা সীমা আছে। তিনি তো আর যেনতেন মানুষ নয়। সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী, বিশ্বজয়ী সম্রাট। যিনি তাঁর বিশাল সেনবাহিনীকে অবসর থাকতে দেননি। সেনাদলের বিরাট বাহিনীকে অকর্মে রাখেননি। কাজে লাগিয়েছেন। দেশ জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন তাদের মাধ্যেমে। তবে সব দেশে অভিযান চালাতে যাননি। যেসব দেশে ইসলাম পৌঁছে গেছে, সেসব দেশ অভিযান থেকে দূরে রেখেছেন। যেসব দেশে ইসলাম পৌঁছেনি, সেসব দেশে তিনি পরিচালনা করেছেন অভিযান। এতে করে এক গুলিতে দুই শিকার হয়েছে। নিজের সাম্রাজ্যের সীমানাও বেড়েছে, আবার ইসলামও প্রচার-প্রসার লাভ করেছে পৃথিবীর শেষ প্রান্তসীমা পর্যন্ত।’
সুলতান জালালুদ্দিনের চেহারায় দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। কপালে ভাঁজ। চেহারা ফ্যাকাশে। এমন সময় শ্লেষমাখা কণ্ঠে তিনি বলে উঠলেন, ‘মামদুদ, তোমার চাচা আর কী অন্যায় করেছেন! নিজে সাম্রাজ্যের বিশাল একটা অংশ হারিয়েছেন। মুসলিম দেশগুলোকে তাতারিদের হাতে ছেড়ে গেছেন। তারা সেগুলোকে অরাজকতার প্লাবনে ডুবিয়েছে। এই তো, এটা কি কোনো অন্যায়!
—‘শোনো, আমার বড় শঙ্কা হয়। ভয় হয়। না জানি এসব কারণে আব্বাকে মহান আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। জবাবাদিহিতার শিকার হতে হয় তাঁর কাছে।’
—‘মহোদয়! আল্লাহর কাছে মাফ পাওয়ার জন্য তাঁর বেশি কিছু দরকার নেই। তিনি যে মুসলিম দেশগুলো রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেছেন! শত্রুর মোকাবেলায় অনমনীয় থেকে যুদ্ধ করেছেন। এটা কি কম বড় কথা! কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি ভাগ্যাহত হয়েছেন। ফলে বড় নিঃসঙ্গ অবস্থায় সুদূর এক দ্বীপে পরলোগ গমন করেছেন।’
—‘মামদুদ, বিষয়টা যদি তাঁর আত্মত্যাগ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকত, তাহলে একটা কথা ছিল। আমরা তখন তাঁর বিয়োগে অঝোর হয়ে কাঁদতাম। তাঁর মতো মহান রাজার বিচ্ছেদে বড় কষ্ট অনুভব করতাম। মনে করতাম, মহান আল্লাহর কাছে বড় মর্যাদা ও সৌভাগ্যের অধিকারী তিনি! তাকে হারিয়ে ব্যথিত ও মর্মাহত আমরা। কিন্তু ঘটনা তো এ পর্যন্ত শেষ নয়। তাঁর রেখে যাওয়া মুসিবত তো এত সহজে সমাপ্ত হওয়ার নয়। যে বিপদে আমাদের ফেলে গেছেন, সেটা তো এত তাড়াতাড়ি শেষ হওয়ার নয়।
‘এ ঝঞ্ঝাট হয়তো শেষ হবে মুসলমানের রক্তের বন্যা বয়ে। লহুখুনের গঙ্গা সৃষ্টি হয়ে। মুসলিম দেশে দেশে দাউদাউ আগুন জ্বালিয়ে। সবকিছু জ্বলে-পুড়ে ছারখার করে দিয়ে।
‘এই তাতারিরা যে কত জঘন্য সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সকল অশান্তির হোতা ওরা। ওরা ধ্বংসযজ্ঞের অগ্রদূত। হত্যাযজ্ঞের খলনায়ক। পৃথিবীর যে দেশেই ঢুকেছে, হত্যা ও ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছে। ওদের হাত থেকে রেহাই পায়নি শিশু ও গর্ভবতী নারী পর্যন্ত। ওদের কবল থেকে মুক্তি পায়নি সবুজশ্যামল শহর থেকে নিয়ে মরুভূমির শহর পর্যন্ত। ওরা যেখানে গিয়েছে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মহোৎসব উদযাপন করেছে। মেতে উঠেছে রক্তের হোলিখেলায়।…’
এতটুকু বলেই নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলেন না জালালুদ্দিন। হু হু করে কেঁদে দিলেন। প্রবল কান্নায় ভারি হয়ে হয়ে গেল কণ্ঠ। বন্ধ হয়ে গেল কথা। এ সময়ে তাঁর স্মৃতিতে ভেসে ওঠে অতীতের বিষাদময় দিনগুলো। বেদনায় ঘেরা মুহূর্তগুলো। যেদিন খোওয়ারেজম শাহের সেনবাহিনী তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। সিটকে পড়েছিল তাঁর আশপাশ থেকে। তিনি তখন নিশ্চিত পরাজয় জেনে মা-বোনদের গজনি পাঠিয়ে দেন। সাথে পাঠান ধন-সম্পদ, সোনা-জহরতসহ অনেক কিছু। গজনিতে তখন অবস্থান করছিলেন সুলতান জালালুদ্দিন। শহরটা অভয়ারণ্য মনে করেই এদেরকে পাঠিয়েছিলেন খোওয়ারেজমশাহ। কিন্তু পথিমধ্যে হয়ে গেল হিতে বিপরীত।
তাতারিদের কানে এ সংবাদ পৌঁছে যায় বিদ্যুৎগতিতে। তারা সংবাদ পেয়ে আর দেরি করে না একটুও। পিছু নেয় তাদের। শুরু করে খোঁজাখুঁজি। পইপই করে। হণ্যে হয়ে। একপর্যায়ে সফল হয় তারা। হাতের নাগালে পেয়ে যায় সকলকে। অমনি তড়িঘরি করে আটকে ফেলে তাদের। গ্রেফতার করে নিমিষেই। এরপর…। এরপরের ঘটনা আরো দুঃখজনক। বেদনাদায়ক। একে একে তারা সকলকে সমরকন্দ পাঠিয়ে দেয়। মালপত্রসহ সোপর্দ করে দেয় চেঙ্গিস খানের কাছে। …
মামদুদ বিষয়টি বুঝতে পারলেন। ভাইজানের দিলের ব্যথা তিনি হাড়েহাড়ে টের পেলেন। অতীতের নীলবেদনার স্মৃতি তাকেও নাড়া দিল জোরেশোরে। তিনি হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন। ভেঙে পড়লেন কান্নায়। দুই ভাইয়ের কান্নায় ভারি হয়ে উঠল আকাশ-বাতাস। তৈরি হলো শোকাচ্ছন্ন পরিবেশ।
জালালুদ্দিন নিজেকে একটু সামলে নিলেন। ধীরে ধীরে একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলেন। দু চোখ তখন অশ্রুর জোয়ারে ভেসে গেছে। নোনা পানির জলপ্রপাতে ভিজে গেছে চোখের মণিকোঠা। জবুথবু হয়ে আছে পল্লব দুটি। তিনি আলতো করে হাত দুটি বুলিয়ে দিলেন চোখে। এরপর কোমলতার পেলব মেখে মুছে দিলেন অশ্রুকণা। চোখের ফোঁটা ফোঁটা জল।
—‘আহ, মামদুদ! দুনিয়াতে এরচেয়ে বড় ট্রাজেডি আর কী হতে পারে! পরিবারের মর্যাদাশীল নারীদের এভাবে টেনেহেচঁড়ে নিয়ে যাওয়া হলো, হেনস্থা করা হলো পদেপদে। অথচ আমরা কিছুই করতে পারলাম না। শুধু নির্বাক হয়ে বসে রইলাম। তখন আমাদের এ বিপদের সামনে সকল দুর্যোগ ছাই মনে হয়েছে। সকল মসিবত মনে হয়েছে নস্যি। আম্মিজান তুরকান খাতুন গ্রেফতার হওয়ার পর জীবনে আর কি কোনো আনন্দ বাকি থাকে? হায়, কেমন আছেন তাঁরা? যদি জানতে পারতাম! হিংস্র তাতারিদের মাঝে কেমন জীবন যাপন করছেন? যদি খবর পেতাম! কীভাবে যে তাঁরা তাদের হাতে পড়ে গেলেন, বুঝতে পারলাম না। আব্বা যদি এর আগেই নিজ হাতে তাঁদেরকে হত্যা করতেন কিংবা জ্যান্ত পুঁতে রাখতেন মাটিতে বা উত্তাল সমুদ্রের মাঝে ফেলে দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচতেন। তাহলে যে কী ভালো হতো। এ ধরনের লাঞ্ছনা-বঞ্ছনা ভোগ করতে হতো না তাঁদের। যে যাই বলুক না কেন, আমি কিন্তু শতভাগ নিশ্চিত। আব্বাজান খোওয়ারেজমশাহ এদের সংবাদ পেয়ে দুঃখে-কষ্টে কাতরাতে কাতরাতে মরে গেছেন। এ দুঃখ-যাতনা বুকে নিয়ে বড় নিঃসঙ্গ অবস্থায় ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন।’
—‘জাহাঁপনা, আল্লাহ ওদের মঙ্গল করুন। হয়তো একসময় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাতারিদের হাত থেকে তারা মুক্তি পাবে।’
—‘মামদুদ! এসব দূরাশা বৈ কিছু না। যেখানে পুরো খোরাসান তাদের দখলে। হামদান শহর তাদের করায়ত্বে। রায় শহর তাদের দখলের পথে। কাজবিন, বুরঞ্জান তাদের ধ্বংসের কবলে। তখন এসবের আশা করা বোকামি নয় কী! তুমি হয়তো চেঙ্গিসখানের কথা শোনোনি। সে যে সমরকন্দকে ঘাঁটি বানিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সৈন্য পাঠাচ্ছে, সেটা মনে হয় তুমি জানোনি। না হয় এ কথা বলতে না।
‘দেখো, আব্বাজানের বহু সৈন্যসামন্ত ছিল। শুধু বুখারাতেই ছিল ২০ হাজার অশ্বারোহী সেনা। আর সমরকন্দের কথা কী বলব। সেখানে তো প্রায় এক লক্ষ ছিল তাঁর সেনাসদস্য। কিন্তু এরপরও কি বিজয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছেন? না, মোটেই না। বরং তাতারি নেতার অদম্য সাহস্য ও দুর্জেয় শক্তি দেখে এ বিশাল বাহিনী ভ্যাবাচ্যেকা খেয়ে গিয়েছিল। সকল শক্তি ও সক্ষমতা উড়ে গিয়েছিল কার্পুরের মতো। তার অনমনীয়তা ও দুর্দমনীয় পদক্ষেপ দেখে হারিয়ে ফেলেছিল মনোবল। এখন তুমিই বলো আব্বার কাছে আমি কী! যেখানে তিনি পর্যন্ত দমন করতে পারেননি, সেখানে আমি কীভাবে মোকাবেলা করব তাদের? বিশেষভাবে তাতারিরা তো এখন আরো শক্তিশালী। দেশ-বিদেশে আরো ক্ষমতাশালী।’
—‘কী যে বলেন জাহাঁপনা! আপনি খাওয়ারেজমশাহর সুযোগ্য সন্তান। তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি। আপনি নিরাশ হয়ে গেলে হবে? আপনার বাবার শত্রুদের দেশছাড়া করতে পারবেন না, তাদের আপনি পরাস্ত করতে পারবেন না। এটা কোনো কথা হলো!
‘পূর্বেও তো আমরা দেখেছি। আপনার বাবার সাথে যখন তাতারিদের লড়াই হতো। তখন কখনো তারা জয়ী হতো। আবার কখনো জয়ী হতেন আপনার বাবা। যদিও শেষ পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমমতো ভাগ্যে যা ছিল তা-ই ঘটেছে।
‘আল্লাহর ইচ্ছায় আপনার বাবা শহিদ হয়ে গেছেন। সুদূর এক দ্বীপে পান করেছেন শাহাদাতের অমীয় সুধা। কিন্তু তাই বলে কি তাঁর সাহসিকতার মৃত্যু হয়ে গেছে? না, কখনোই না। আমরা তো বিশ্বাস করি, আপনার মাঝেই আপনার বাবার সাহসিকতা জিইয়ে আছে। হয়তো মহান আল্লাহ আপনার মাধ্যমে তাঁর শত্রুদের নাস্তানাবুদ করবেন। তাদের নাম-নিশানা মাটির সাথে মিশিয়ে দেবেন। রচনা করবেন ওদের কবর বা সমাধিস্থল। আমার মনে হয়, ইসলাম ও মুসলমানের ভাগ্য জড়িয়ে আছে আপনার সাথে। আপনার মাধ্যমে অচিরেই ইসলাম ও মুসলমানের বিজয় সাধিত হবে।’
—‘মামদূদ! বিষয়টি তুমি বুঝতে পারছ না। আজকে মুসলিম দেশের রাজা-বাদশাদের দিকে তাকিয়ে দেখো। কেউই কিন্তু আমাদের সহযোগিতায় আগ্রহী নয়। না হয় আব্বাজান যখন তাদের কাছে সাহায্যের জন্য হাত পেতেছিলেন, তখন কেউই তাঁর ডাকে সাড়া দেয়নি। মিসর বলো, শামদেশ বলো, বাগদাদ বলো, সকলেই তখন হাত গুটিয়ে বসেছিল। মুসলিম ভাইদের বিপদে এগিয়ে আসেনি। এজন্য বলছিলাম, ওরাও একটু মজা বুঝুক। তাতারি আক্রমণ কেমন, সেটা অনুভব করুক। আমরা শুধু দর্শকের মতো তাকিয়ে থাকি। তবে সতর্কতার মাইর নেই। খেয়াল রাখতে হবে, যেন তাতারিরা আমাদের কর্তৃত্বাধীন শহরে ঢুকতে না পারে।’
—‘মহারাজ! এদের দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। এদের দেশেও শকুন হানা দিয়েছে। আমাদের মতো তাদের দেশেও ভয়াবহ দুর্যোগ বিরাজ করছে। শত্রুপক্ষের একের পর এক আক্রমণের শিকার হচ্ছে তারাও। আমরা বলির শিকার তাতারিদের। আর তারা ক্রুসেডারদের। আমাদের তুলনায় তাদের শত্রু কম ভয়ানক নয়। ওদের হিংস্রতা, বর্বরতা কোনো অংশেই তাতারিদের থেকে কম নয়। এ ছাড়া ওদের মাঝে সাম্প্রদায়িকতার যে বীজবাষ্প রয়েছে, তা তো বলাই বাহুল্য। ওরা বেছে বেছে ইসলাম ও মুসলমানের কেন্দ্রীয় শহরগুলোতে আক্রমণ করে। ভুলেও কখনো পার্শ্ববর্তী শহরগুলোতে হামলা করে না।
—‘মামদুদ! ক্রুসেডারদের আক্রমণ তো ছিল সালাহউদ্দিন আইয়ুবি ও নুরুদ্দিন জঙ্গির আমলে। পরবর্তীতে তো আর তাদের আক্রমণের খবর পাইনি। তবে মিশর ও শামের রাজা-বাদশাদের পরস্পর মারামারির সংবাদ পেয়েছি। তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার বৃত্তান্ত শুনেছি। এমনকি মুসলিম প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ক্রুসেডারদের কাছে সাহায্য কামনা করার ঘটনাও কানে এসেছে আমার। আল্লাহর কসম! তাতারিরা যদি আমার দেশের সীমানায় করাঘাত না করত, তাহলে আমি ওই বিশ্বাসঘাতক মুসলিম শাসকদের গর্দান উড়িয়ে দিতাম। ওদের মতো কদাকার শাসক থেকে মুক্ত করতাম মুসলিম দেশগুলো। সাথে আমার এক গুলিতে দুই শিকার হতো। বিশ্বাসঘাতকদেরও খতম করা হতো, আবার বাবার পক্ষ হয়ে প্রতিশোধও নেয়া হয়ে যেত। কারণ ওদের কাছেই বাবা সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু ওরা হাত গুটিয়ে বসে ছিল।’
—‘ওদের বিষয়ে আপনার মাথা ঘামানোর কী দরকার! মহান প্রভুই তো আছেন। তিনিই ওদের হিসাব-নিকাশ নেবেন। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো, ইসলামি রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষা করা। হিংস্র তাতারিদের অনুপ্রবেশ থেকে সীমান্ত হেফাজত করা। হয়তো এভাবে একদিন প্রাচ্যের দেশগুলোতে আমাদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে। যেভাবে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় পশ্চিমাদেশগুলোতে নুরুদ্দিন জঙ্গি ও সালাহউদ্দিন আইয়ুবির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।
‘মহারাজ! সব চিন্তা বাদ দিন। আজই চলুন। সেনাসমাবেশের আয়োজন করুন। এরপর একযোগে তাতারিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করুন। তাহলে তারা ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকবে। সামনে বাড়ার সাহস করবে না।’
—‘এক কথা কতবার বলব তোমাকে। আমি বললাম না, আমার কাজ হলো শুধু নিজের দেশ রক্ষা করা। আশপাশে কী হলো না হলো, সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। বর্বর তাতারিরা আমার দেশে অনুপ্রবেশ না করলেই হয়। যেকোনো মূল্যে ওদের প্রবেশ ঠেকাতে পারলেই হলো। এরপর ওরা কোথায় গেল, সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। বরং পারলে ওদের পশ্চিমা মুসলিম দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করব। যেখানে এখন অবসরপ্রাপ্ত রাজা-বাদশারা দেশ শাসন করছে।’
—‘মহারাজ! দেশ বাঁচাতে হলে সামনে বেড়ে লড়াই করতে হবে। না হয় দেশ রক্ষা পাবে না। যে হিংস্র শত্রু আমাদের। ওরা ঘরে বসে যুদ্ধ করলেও অস্তিত্ব-সংকটে পড়তে হবে। এ জন্য উচিত, ওদের মোকাবেলায় বের হয়ে যাওয়া। দ্রুত ওদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা। জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে। তিনি যদি আমাদের জয়ী করেন, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। আর না হয়, কমপক্ষে তো দু-একজন সহযোগী পাওয়া যাবে। যাদেরকে নিয়ে নতুনভাবে আবার যুদ্ধপ্রস্তুতি নেয়া যাবে।
‘এ ছাড়া কথা হলো, চেঙ্গিসখানের মনযোগ এখন প্রাচ্যদেশগুলোর দিকে নিবদ্ধ। সেখানে তিনি তার করিতকর্মা শেষ করে অন্যদিকে মনযোগী হবেন। এখন তার প্রধান লক্ষ্য খোওয়ারেজমশাহের রাজত্ব খতম করা। তাঁর ক্ষমতার শেষ ইটটুকু খসিয়ে ফেলা। এজন্য বলছিলাম, এখনই সুযোগ তাতারিদের ওপর আক্রমণ করার। এটাই মোক্ষম সময় তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার।’
চতুর্দিকে সুনসান নীরবতা। নিশ্চুপ সুলতান জালালুদ্দিন। বড্ড চিন্তিত মনে হচ্ছে তাঁকে। কপালে তাঁর দুশ্চিন্তার ভাঁজ। পেরেশানির কালোমেঘ। চিন্তার এক অথৈ সাগরে ডুব দিয়েছেন তিনি। কিছু একটা কুড়িয়ে নেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এর মধ্যেই তুলনা করে ফেললেন মত দুটি। একটি হলো নিজের আর অন্যটি হলো চাচাতো ভাইয়ের। বেশ অল্প সময়ের মধ্যে তিনি উভয় মতামতের মাঝে ফারাক বের করে আনলেন। খুঁজে পেলেন উভয় চিন্তার মাঝে বিশাল পার্থক্যরেখা। বেশিক্ষণ বিলম্ব করলেন না। সহসাই মাথা উত্তোলন করলেন। এতক্ষণ চিন্তার সাগরে নিমজ্জিত হয়ে নুইয়ে ছিল সেটি। কপাল থেকে তখন দরদর করে ঘাম ঝরছিল। তিনি হাত দিয়ে ঘামটুকু মুছে নিলেন। এরপর থমথমে নীরবতা ভেঙে বললেন, ‘মামদুদ, তোমার মতটিই সঠিক। যথার্থ। এ ধরনের সুচিন্তিত মত থেকে বঞ্চিত করবে না কখনো। তুমি আমাকে আজ যুক্তি-তর্ক দিয়ে নাকানিচুবানি খাইয়েছ। আমাকে শোচনীয়ভাবে হারিয়েছ তর্কযুদ্ধে। আমি তোমার মতটিই গ্রহণ করে নিয়েছি। জ্ঞান করছি তোমাকে একজন বিরলপ্রজ বিজ্ঞ ও যথার্থ উপদেষ্টা হিসেবে। ভবিষ্যতে তুমি যেভাবে পরামর্শ দেবে, সেভাবেই করব। এর থেকে এক চুল পরিমাণও সরব না। এখন থেকে তুমি আমার ‘ডান হাত’ হিসেবে কাজ করবে। তুমি থাকতে আমার আর কোনো পরামর্শদাতার প্রয়োজন নেই।’
পরিশ্রমের ফলে দরদর করে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে তাঁর শরীর থেকে। দুর্ঘন্ধময় ঘাম। ভ্যাপসা গন্ধ ছড়াচ্ছে চতুর্দিকে। তিনি এক ফাঁকে ঘামগুলো মুছে ফেললেন ।
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন।
—‘আজ্ঞে, জাহাঁপনা। আপনার হাতের আংটি কতটুকু অনুগত আপনার। এরচেয়েও বেশি অনুগত পাবেন আমাকে। আমি আপনার জন্য জীবন বাজি রেখে লড়াই করব। লড়তে লড়তে শহিদ হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।’
—‘মামদুদ, যথেষ্ট হয়েছে। তোমার কথায় কোনো ফাঁক রাখোনি। এখন আমাকে অভিযানে বের হতেই হবে। এ ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই।
‘আব্বাজানের প্রতি দয়ার আচরণ করুন মহান আল্লাহ। মাথায় তিনি পাহাড়সম বোঝা চাপিয়ে গেছেন আমার। শেষমেষ এমন রাজত্বের উত্তরাধিকারী বানিয়ে গেলেন, যা পেয়ে ঈর্ষার পাত্র হয় না কেউই।’
—‘মহারাজ! আল্লাহর জন্য নিবেদিতপ্রাণ হোন। তাঁর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। দেখবেন আসমানি সাহায্য কীভাবে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
‘কীভাবে দায়িত্বের ভারে ন্যুব্জ কোমর থেকে বোঝা সরে যাচ্ছে। আপনি নিশ্চিত থাকুন, আল্লাহ আপনার বক্ষদেশ খুলে দেবেন। তাতারিদের তিনি পরাস্থ করবেন। ফলে তাঁর কাছে এবং মানুষের কাছে আপনার মর্যাদা উচ্চ গগণে পৌঁছবে।’
জালালুদ্দিন মৃদু হাসলেন। চেহারায় তাঁর আনন্দরেখাগুলো ঝিলিক মেরে উঠল। গোটা চেহারায় দাপিয়ে বেড়াল আনন্দরা। আনন্দঝলমল চেহারা নিয়ে তিনি উচ্চারণ করলেন বাক্যগুলো—‘মামদুদ! আল্লাহ তোমাকে ভালো সুসংবাদ শোনান। তিনি তো বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে কষ্টের সাথে স্বস্তিও থাকে। নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি থাকবে। সুতরাং তুমি যখন অবসর পাও, তখন এবাদতে নিজেকে পরিশ্রান্ত করো। এবং নিজ প্রতিপালকের প্রতিই মনযোগী হও।’
এরপর আকাশ পানে হাত তুলে বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রতি আগ্রহী। সুতরাং আপনার সন্তুষ্টি যে কাজে, সে কাজ করার তৌফিক দিন আমাকে।’
রাতের অর্ধভাগ তখন হারিয়ে গেছে অনন্তকালের মাঝে। নিঝুম রাত তখন হয়ে গেছে আরো নিঝুম ও ভূতুড়ে। এখন একটু বিশ্রাম নেয়া দরকার। ম্যাজম্যাজে শরীরটা এলিয়ে দেয়া দরকার বিছানায়। বড্ড দেরি হয়ে গেছে। আর দেরি করা ঠিক হবে না।
তড়িঘরি করে মামদুদ দাবার ঘুঁটিগুলো বাক্সে ভরলেন। বাক্সটি ছিল চকচকে স্বর্ণের। মুক্তা খচিত। সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে সেটি আবার রেখে দিলেন আরেকটি সিন্দুকে। সেটি ছিল আবলুস কাঠের তৈরি। আইভরি খচিত।
মজলিস থেকে ঝটপট উঠে দাঁড়ালেন মামদুদ। এরপর জালালুদ্দিনের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে প্রস্থানের অনুমতি চাইলেন। জালালুদ্দিন অনুমতি দিলেন। সাথে এগিয়ে দেয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। এমনিতেই অভ্যর্থনা কক্ষের গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দেয়ার আদত ছিল। এবারও হয়তো সেরকম কিছু ভেবেছিলেন। কিন্তু বিপত্তি বেঁধেছে মামদুদের প্রতি তাঁর অতিরিক্ত আবেগ। ফলে নির্দিষ্ট স্থান মাড়িয়ে চলে গেলেন উদ্যানের শেষমাথায়। কখন যে অতিক্রম করলেন, টেরই পাননি। ফুলে-ফলে ভরা সবুজাভ বাগানটি ছিল দুপ্রাসাদের মাঝ-বরাবর। যে দুই প্রাসাদের একটিতে থাকতেন জালালুদ্দিন। আর অন্যটিতে থাকতেন মামদুদ।
—‘ভাইজান, ব্যাস। আর আসা লাগবে না। আপনার এখন ঘুমানো দরকার। না-হয় কাল সকালে কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।’ মামদুদ বললেন।
—‘ধুত্তুরি, রাখো তো। একটু বাগানে পায়চারি করে নিই। পুস্পোদ্যানের মিষ্টি বাতাস শুঁকে নিই খানিক। জোৎস্নাভরা ফকফকে রাতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার মজাই আলাদা। এতে শুধু চোখ জুড়ায় তা না, জুড়ায় তনুমনও। কে জানে হয়তো ১৪ তারিখের চাঁদ পুরো হয়ে গেছে আজ। আজই তার শেষ রাত। আগামীকাল হয়তো আর দেখা যাবে না তাকে। এই ঝলমলে চাঁদের রৌশনি, জোৎস্নার মনমাতানো দৃশ্য হয়তো চলে যাবে পর্দার আড়ালে।’ বললেন জালালুদ্দিন।
দুই ভাই হাত ধরাধরি করে মর্মর পাথরের সিঁড়িতে নামলেন। মামদুদ তখন সিড়িতে পা রাখছিলেন আর বলছিলেন, ‘মহান আল্লাহ রাজপ্রাসাদটি আপনার মাধ্যমে আবাদ রাখুন। এই বালাখানা মুখরিত থাকুক হামেশা আপনার পদভারে।’
কথা বলতে বলতে উভয়ে চলে এলেন করিডোরে। কর্তব্যরত দারোয়ানরা তখন দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে। তাঁদের দেখে তারা ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেল। শুরু করল হন্তদন্ত হয়ে এদিক-সেদিক ছুটোছুটি।
ছোট ছোট কদম ফেলে বাগানে নামলেন তাঁরা উভয়ে। এরপর ফুলে-ফলে ভরা উদ্যানে শুরু করলেন পায়চারী। উদ্যানটি বেশ নয়নাভিরাম। যে-কারো চোখ জুড়াতে বাধ্য। তার দুই পাশে রয়েছে আমোদভ্রমণের জন্য হাঁটা-চলার রাস্তা। পিচঢালা পথ। হলদে বর্ণের বালুকারাশি দিয়ে পলেস্তার করা।
উপরের আকাশ তখন ঝকঝকে-তকতকে। উজ্জ্বল চাঁদটি রুপোর থালার মতো ফকফকে। ১৪ তারিখের চাঁদমামা জোৎস্নার বন্যা বয়ে দিয়েছে বাগানজুড়ে ।
গাছের ডালপালার সবুজ আভা রুপালি চাঁদের রৌশনিতে আরো সজীব হয়ে উঠেছে। পত্রপল্লবের ফাঁক গলে আলো নেমে এসেছে খোদ জালালুদ্দিন ও মামদুদের গায়ে। আঙুরগাছের মাচায়ও পড়েছে আলোর বিচ্ছুরণ। চাঁদের ঝলকানি। একেকটি আঙুরথোকা হয়ে উঠেছে মুক্তার মালা। লাল-টকটকে আপেল গাছেও লেগেছে আলোর ছোঁয়া। মনে হচ্ছে, লালসুন্দরী আপেলগুলোর সাথে প্রেমনিবেদন করতে চাচ্ছে চাঁদ-মামা। আর সেগুলো কুমারীর মতো লাজুকভঙিতে আশ্রয় নিচ্ছে পত্রপল্লবের মাঝে। রেহাই পাচ্ছে প্রেম-অভিশাপ থেকে। বাদ-বাকি আলোটুকু জমিনে ছড়িয়ে পড়ছে। আর সেখানে ছিটিয়ে দিচ্ছে স্বর্ণমুদ্রার সোনালি সিঁকি। চোখ ধাঁধিয়ে দেয়া অস্পৃশ্য আদুলি।
কয়েকদিন হলো, বোন জাহান খাতুনের সাথে দেখা নেই তাঁর। আজ হঠাৎ এ আলোর বন্যার মাঝে স্মরণ হলো তাঁর কথা। ‘মামদুদ! জাহান খাতুন কেমন আছে? কত দিন হলো ওকে দেখি না!’ জিজ্ঞাসা করলেন জালালুদ্দিন।
—‘ভালোই আছে ও। আল্লাহ হেফাজতে রেখেছেন ওকে। ও ভালো থাকার পেছনে আপনারও ভূমিকা রয়েছে। বাকি, ও অসুস্থ। গর্ভবতী। নবজাতকের ভারে ক্লান্ত ও অবিশ্রান্ত। এজন্য আর আপনার সাথে দেখা করতে পারে না।’
—‘ও। তাই নাকি। আমার স্ত্রী আয়েশা খাতুনও তো অসুস্থ। ন মাস হয়ে গেল গর্ভে বাচ্চা এসেছে। যাক, আল্লাহ ওদের সাথে সদয় আচরণ করুন। সবকিছু সহজ করে দিন। আর শোনো, জাহান খাতুনকে আমার অভিনন্দন জানাবে। দেখি, আগামীকাল ওর সাথে দেখা করতে পারি কি না।’
—‘আপনার আগমনে আমরা ধন্য হবো তাহলে!’
—‘মামদুদ, কথা বলতে বলতে কোথায় চলে এলাম। দেখো। একেবারে তোমার প্রাসাদ বরাবর চলে এসেছি। এখন তাহলে আসি।’
—‘মহারাজ! আপনাকে একা যেতে দেব না আমি। চলুন, আপনার প্রাসাদে এগিয়ে দিয়ে আসি।’
—‘শুকরিয়া। অসংখ্য শুকরিয়া তোমাকে। বলেছো, এতেই আমি খুশি। সাথে আসা লাগবে না।’ কিন্তু মামদুদ নাছোড়। তিনি কিছুতেই তাঁকে একা যেতে দেবেন না। বাধ্য হয়ে জালালুদ্দিন মামদুদকে নিয়েই রওয়ান হলেন। অল্প সময়ের মাঝে প্রসাদের বারান্দায় চলে এলেন উভয়ে।
মুখে হাসি মেখে জালালুদ্দিন বললেন, ‘চলো মামদুদ তোমাকেও এগিয়ে দিয়ে আসি।’
মামদুদ হো হো করে হেসে বললেন, ‘তাহলে তো আসা-যাওয়ার মাঝেই রাত শেষ হয়ে যাবে। ঘুমানোর সুযোগ হবে না আর।’
এ কথা বলে প্রাসাদের দিকে পা বাড়ালেন মামদুদ।
লেখাটি وا وإسلاماه এর অনুবাদ। লেখক মিসরীয় সাহিত্যিক আলি মুহাম্মদ বাকাসির
অনুবাদক মাহফুজুর রহমান, সিনিয়র মুহাদ্দিস : চরশুভি মাদরাসা, দৌলতখান, ভোলা