গড-গিফটেড মৃত্যুপয়গাম ও বজ্রপাত
অসহনীয় পর্যায়ের গ্রীষ্মের তাপদাহকে বুড়ো আঙুল দেয়া এই বৃষ্টি চারদিকে কেমন একটা উৎসবমুখর পরিস্থিতির জন্ম দিয়ে রেখেছে। ছোটবেলায় পাশের বাড়িতে ছাদ ঢালাই দেওয়ার মেশিনের মতো একটা আওয়াজ উঠেছে পুরো বৃষ্টিধারাতে। আনন্দ, চিৎকার, হুল্লোড়। গাছের ডালগুলোও উদ্দাম নৃত্য দেয় বৃষ্টির সাথে নেমে আসা শহুরে কালবৈশাখীর শুভাগমনে। আকাশে মেঘে মেঘে আলিঙ্গন হয়। পুরো আকাশকে আমার চৈত্রের এবড়োখেবড়ো ফেটে যাওয়া ধানক্ষেত মনে হয়। আকাশে পুরান ঢাকার থার্টিফার্স্ট নাইটের মতো লাইটিং শুরু হয়। শাপলা চত্বরের রাতের আওয়াজ রিপ্লে হয় মাথার উপর। আমি সবুজ ঘাসে হাতের তালুতে কান রেখে শুয়ে পড়ি। শরীরের ওজন হাতে এসে জমা হয়। মাঠের আরেক প্রান্তে কারা যেন ছুটে পালিয়ে যায়। এই আনন্দঘন পরিবেশে গলা ছেড়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে হয়। অথচ স্বরটা খুব অদ্ভুত শোনায়। তবুও আমি আলোড়িত হই। আনন্দিত হই। কেঁপে উঠি সারা শরীরে। কিছু গোলাবারুদ আর ছুরি চাপাতি অন্তত বেঁচে গেলো এদেশের। একজন বাঙালি হয়ে ঝামেলাহীন এমন নিশ্চিন্ত মৃত্যু এখন ক’জনে পায়?
লৌকিকতা
শতাব্দীকে এতিম করে দেওয়া দৃশ্যমান প্রতিটি আলোচিত মৃত্যুর পর আমার বলতে ইচ্ছে হয়–আকাশ! তুমি কার?
–আমি পৃথিবীর প্রতিটি জন্ম-মৃত্যুকেন্দ্রিক উৎসবের। প্রতিটি শোকসমাচ্ছন্ন আনন্দ মিছিলের।
আমি তখন আরেকবার ইসালে সওয়াবের জন্য সুরা ইখলাস পড়ে মনে মনে বলি, একজন ছায়াহীন মানুষ হয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারলেই বাঁচি।
শার্টের কালো দাগ
চকলেটগুলো প্যাকেটবন্দি। নিথর পড়ে আছে ফ্রিজের নরমালে। ডিপফ্রিজের আইসক্রিম আরো শক্ত হয়, বরফ কাঠিন্যে। ছোট্ট কিডি সাইকেলটা পড়ে আছে বারান্দায়। স্ট্যান্ডটা ভেঙে গেছে। সামনের চাকা আর হ্যান্ডেল দুমড়েছে বাস্কেটসহ। বারান্দার শিকে ঝুলছে একটি স্কুলড্রেস, শাদা শার্ট। জমাটবাঁধা রক্ত শুকিয়ে থোক থোক কালো কালো দাগ লেগে আছে। শার্টের কলারে, বুকপকেটে, হাতের কফে।
মিস্টার এন্ড মিসেস রোহান দিন গুজরান, চারদিন ধরে বাসায় কেউ ডোরেমন দেখে না।