ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হলাম। গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ধরে রওয়ানা হলাম বাড়ির দিকে। রাস্তার দু’পাশে সবুজ শ্যামল গাছগুলোতে পত্রপল্লব নিস্তেজ হয়ে আছে। দক্ষিণের হিমেল হাওয়ায় বাড়ির পাশে শিমুল গাছের ফুলগুলো ঝরে গেছে। চারদিকে সারি সারি পাতাবিহীন গাছ। আমি ঘরে প্রবেশ করে গায়ে একটি চাদর মুড়িয়ে আবার বের হলাম।
সাধারণত এ সময়টাতে গ্রাম বাংলায় নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে হাজির হয় শীত। তখন গ্রামের পরিবেশ থাকে নয়নাভিরাম আর মনোমুগ্ধকর। প্রতিদিন অতিথি পাখিরা কিচির-মিচির শব্দে মাতিয়ে রাখে পুরো গ্রাম। মনে মনে ভাবলামÑপ্রকৃতির সাথে খেলা করব আজ। ভাব বিনিময় করব। একে অপরকে বুঝবার চেষ্টা করব। এসব ভেবে মনের অজান্তেই ক্ষণিকের জন্য প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গেলাম। শীতের হিমেল সকালে তখন আমার অতীতের আয়নায় ভেসে ওঠে স্মৃতির দৃশ্য।
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়ের হাতে বানানো পিঠা-পুলি খেয়ে মাদরাসার দিকে রওয়ানা হয়েছি। যেতে যেতে চোখে পড়ল গাছের পাতা থেকে টপটপ করে কুয়াশা পড়ছে। পূবাকাশে তাকিয়ে দেখি, কুয়াশার পাতলা চাদর ভেদ করে সূর্যিমামা আলোর ধারা নিয়ে উঁকি দিয়ে পূর্ব-পশ্চিম রাঙিয়ে তুলছে। বাড়ির সামনে সদ্য ফোটা সর্ষেফুলগুলো দেখে মনে হচ্ছিল যেন দিগন্তের শেষ পর্যন্ত হলুদাভ হয়ে আছে। এদিকে একটি পাখি আমাকে বৃষ্টি শেষে ভেসে ওঠা নরম সূর্যোলোকের মতো স্নিগ্ধতা ও কোমলতার পরশ কণ্ঠে মেখে বলছে, কী ব্যাপার! শীতের সকাল কেমন লাগছে? পাখির কথায় যেন হতবাক হয়ে গেলাম। কিছু না ভেবেই সামনে এগুতে লাগলাম। তাকিয়ে দেখলাম রাস্তার দু’পাশে সবুজ ঘাসের বিন্দু বিন্দু শিশিরজল মুক্তার রূপ ধারণ করেছে। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। আমার একটি শীতের সকাল।
নবধ্বনি, মার্চ ২০১৮