নবধ্বনি
  • হোম
  • স্বাগত কলাম
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • মুক্তগদ্য
  • গল্প
  • রঙধনু
  • দিনলিপি
  • পুরানো সংখ্যা
No Result
View All Result
নবধ্বনি
  • হোম
  • স্বাগত কলাম
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • মুক্তগদ্য
  • গল্প
  • রঙধনু
  • দিনলিপি
  • পুরানো সংখ্যা
No Result
View All Result
নবধ্বনি

সিংহপুরুষ ঘুমিয়ে গেলেন ।। হামমাদ রাগিব

সিংহপুরুষ ঘুমিয়ে গেলেন ।। হামমাদ রাগিব
Share on FacebookShare on Twitter

হিফজখানায় পড়াকালীন রোজ রাতে ঘুমোনোর সময় হুজুরের কাছে বায়না ধরতাম গল্প বলার জন্য। আমার তখন থৈ থৈ কৈশোর। চোখভরা স্বপ্ন। হুজুর নানা কিসিমের গল্প বলতেন। কোনোদিন সাহাবায়ে কেরামের গল্প, কোনোদিন ওলি-আওলিয়ার। কোনোদিন মেলে ধরতেন নিজের ছাত্র-জমানার স্মৃতি। এসব গল্প-ঘটনা-স্মৃতি শোনাতে শোনাতে হুজুরের ভাÐার একসময় খালি হয়ে যেত। কিন্তু আমাদের বায়না ফুরোতো না। রোজ রাতে গল্প শোনাতে হতোই।
পড়তাম মৌলভীবাজার শহরের পাশেই গ্রামের ভেতর ছোট্ট একটি হিফজ-মাদরাসায়। পঁচিশ জন ছাত্র, একজন উসতাদ। মাওলানা হাফেজ আব্দুল মুকিত রূপসপুরি। হিফজখানার উসতাদ মানেই বড় বড় লাল চোখ আর লাল স্কচটেপ-মোড়ানো জালিবেত। কিন্তু আমাদের হুজুর ছিলেন এর সম্পূর্ণ বিপরীত। নরম মেজাজ এবং ¯েœহের পরশ দিয়ে দূরন্ত ছাত্রদেরও নিয়ন্ত্রণ করার অদ্ভূত ক্ষমতা ছিল তাঁর। রাতে হুজুরকে গল্পে লাগিয়ে কোনো কোনো দিন গল্প শেষ হবার আগেই আমাদের চোখ জুড়ে নেমে আসত ঘুমের বন্যা।
হুজুরের ছাত্রজমানার স্মৃতিচারণ আমাদের কাছে গল্প-ঘটনার চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় ছিল। সিলেটের রেঙ্গা মাদরাসায় তাঁর সমস্ত পড়াশোনা। ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্র মজলিস করতেন। এ জন্য তাঁর স্মৃতিচারণের বিশাল একটি অংশ জুড়ে থাকত সিলেট কাজির বাজার জামিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমানের স্মৃতি।
প্রিন্সিপালের নাম ও খ্যাতি সম্পর্কে এর আগে যদিও-বা খানিকটা ওয়াকিবহাল ছিলাম, কিন্তু তাঁর বীরত্বগাথা খুব একটা জানতাম না। হুজুরের এসব স্মৃতিচারণ থেকেই প্রিন্সিপালের বাহাদুরি ও আন্দোলন সম্পর্কে পাকাপোক্ত একটা ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যায় মানসপটে। জানতে পারি কাজির বাজার মাদরাসার নানা আন্দোলন-সংগ্রাম এবং কাজির বাজার মাদরাসার ছাত্রদের দাপট ও নির্ভীকতার কথা।
সিলেটে প্রিন্সিপালের প্রভাব একসময় অতুলনীয় ছিল। ইসলাম-বিরোধী কোনো কার্যকলাপ হলেই সর্বপ্রথম যিনি গর্জে উঠতেন, তিনি প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান। ইসলাম-বিরোধী কত কার্যকলাপ যে তিনি প্রতিরোধ করেছেন সিলেটের মাটিতে, তার কোনো হিসেব নেই।
তসলিমা নাসরিনের ধর্মবেদ্বিষী লেখালেখির বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম তিনিই গর্জে উঠেছিলেন। কাজির বাজারের ছাত্রদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন দুর্বার আন্দোলন। পরে সিলেটসহ দেশের অন্যান্য উলামায়ে কেরাম তাতে যুক্ত হন। ওই সময়ের স্মৃতিচারণ কত বার শুনেছি আমাদের হুজুরের মুখে! কাজির বাজারের ছাত্ররা হরতাল ডেকেছিল সিলেটে। শহরের নানা স্থানে অবস্থান করছিল তারা। একেবারে নুরানি থেকে নিয়ে দাওরা পর্যন্তÑসব ছাত্রই নেমেছিল আন্দোলনে। কাজির বাজারের নীতিই এ রকম। প্রিন্সিপাল কোথাও ডাক দিলে সকল ছাত্রের অনুমতি ছিল তাতে শরিক হবার। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ক্বিন ব্রিজে বিছানাপত্র নিয়ে বসে, শুয়ে হরতাল পালন করছিল নুরানি ও হিফজের বাচ্চা ছাত্ররা। নিরাপত্তার জন্য পাহারারত পুলিশরা দাঁড়িয়ে ছিল অদূরেই। দূরন্ত ছাত্ররা ক্বিন ব্রিজ থেকে পুলিশের দিকে তাকিয়ে হাতের ইশারায় বলত, এদিকে এলে জবাই করব! পুলিশ এসব দেখে হাসত, এ ছাড়া যে তাদের আর কিছু করার নেই! কারণ, তারা ভালো করেই জানত, কাজির বাজারের কোনো ছাত্রের চুল স্পর্শ করলেও তামাম সিলেট জুড়ে আগুন জ্বলবে। প্রশাসন থেকে নিয়ে সাধারণ মানুষ, কাজির বাজারের কোনো ছাত্রের সঙ্গে কোনো রূপ অন্যায় আচরণ, নির্যাতন কিংবা হেনস্থা করতে ভয় পেত। সেই প্রভাব আজও খানিকটা আছে তাদের, কিন্তু আগের সেই জৌলুস নেই।
এসব নব্বইয়ের দশকের গোড়ার কথা। তখনকার সময়ে আর এখনকার সময়ে কত পার্থক্য।
ধর্মবিরোধী কার্যকলাপের পাশাপাশি ধর্ম নিয়ে যারা ভÐামি করে, তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন প্রিন্সিপাল। শাহজালাল রহমতুল্লাহি আলায়হির মাজারে প্রতি বছর ঘটা করে ওরস হয়। এই ওরস বন্ধের জন্যও কয়েকবার জোরদার আন্দোলন করেছেন তিনি। কিন্তু মাজার কমিটি তুমুল প্রভাবশালী হবার কারণে আখেরে সেটা আর বন্ধ করতে পারেননি। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দল জামায়াতে ইসলামি প্রতি বছর সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদিকে এনে তফসির মাহফিল করাত। প্রিন্সিপাল এর বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেছেন। এসব কারণে সিলেটের শীর্ষস্থানীয় উলামা-মাশায়েখ তাঁকে ‘সিলেটের সিংহ পুরুষ’ খেতাবে ভূষিত করেছিলেন। সিলেটে ধর্ম-বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম মানেই ছিল প্রিন্সিপালের আহŸান আর কাজির বাজারের ছাত্রদের মুহুর্মুহু শ্লোগান। কওমি অঙ্গনে ‘প্রিন্সিপাল’ শব্দটা সর্বপ্রথম তিনিই ব্যবহার করেন, এবং ‘প্রিন্সিপাল’ শব্দটা শুনলেই কওমি আলেম-তালাবারা বিশ্লেষণ ছাড়াই বুঝে নেয়, এর দ্বারা কাজির বাজারের প্রিন্সিপালকেই বোঝানো হচ্ছে। এক সময় তো সিলেটের বিভিন্ন দেওয়ালে লেখা থাকত, ‘বীর মুজাহিদ প্রিন্সিপাল, বেঁচে থাকুন দীর্ঘকাল।’
কওমি মাদরাসা ও কওমি আলেমদের কল্যাণে জীবন কাটিয়ে দেওয়া প্রিন্সিপাল কিন্তু কোনো কওমি মাদরাসার ফারেগ ছিলেন না। সিলেট আলিয়া মাদারাসায় ছিল তাঁর পড়াশোনা। কাজির বাজারের পাশে পেয়াজহাটা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন কর্মজীবনের শুরুর দিকে। ওখানে থেকেই সম্ভবত প্রতিষ্ঠা করেন কাজির বাজার মাদরাসা। আমাদের হিফজের হুজুর প্রায়ই একটি হাসির গল্প বলতেন প্রিন্সিপালকে নিয়ে। প্রিন্সিপাল যখন পেয়াজহাটা মসজিদের ইমাম, প্রতিদিন কিতাব বুকে নিয়ে হেঁটে আসতেন মাদরাসায়। গড়নে একটু খাটো ছিলেন, পাগড়ি আর জুব্বা লাগিয়ে বেশ গাম্ভীর্য নিয়ে হাঁটতেন তিনি। কাজির বাজারের গেটের পাশে এক বুড়ো বাদামওয়ালা প্রতিদিন বাদাম বিক্রি করত। অল্প বয়েসি এক হুজুর এতো ভাব-সাব নিয়ে তার সম্মুখ দিয়ে রোজ আসা-যাওয়া করে দেখতে দেখতে একদিন বিরক্ত হয়ে সে হুজুরকে ডেকে দাঁড় করায়। বেশ বিরক্তি নিয়ে বলে, ‘এই যে পুচকে মৌলভি, এত ভাব নাও কেন? আমাকে কি চোখে লাগে না। সত্তর বছর বয়েস আমার। এই বয়েসে তিনবার শ্রীমঙ্গল থেকে ঘুরে এসেছি। আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একটু তমিজ রেখে চোলো।’
কাজির বাজার মাদরাসার জায়গা নিয়ে ঝামেলা আছে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই। সিলেটের কুখ্যাত এক গুÐা বাহিনী প্রায়ই আক্রমণ করত মাদরাসায়। কাজির বাজারের ছাত্রও উচিত জবাব দিয়ে বিদেয় করত তাদের। ২০০৪ সালের সম্ভবত মার্চে একবার অতর্কিত হামলা করে বসে গুÐাবাহিনী। অতর্কিত হবার কারণে প্রথম দিকে বেশ কাবু করে ফেলে ছাত্রদের। হিফজের এক ছাত্র শাহাদত বরণ করে। আহত হয় অনেকে। আহতদের একজন ছিলেন আমাদের এলাকার এক তরুণ মাওলানা। সারা শরীরে দেশীয় অস্ত্রের অসংখ্য আঘাত ছিল তাঁর। তিনি তখন কাজির বাজারের ছাত্র। দুঃখের বিষয় হলো, পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক কারণে ত্যাগী এই ছাত্রকে মাদরাসা থেকে বহিস্কার হতে হয়েছে।
প্রিন্সিপালের নির্ভীকিতা আর আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালনের স্পৃহা এবং প্রতিপত্তি শূন্যের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে কেন যেন স্তিমিত হয়ে যায়। শারীরিক দুর্বলতা ও অসুস্থতা এর জন্য একটি কারণ হলেও কারণ আরও আছে। একসময় যে প্রিন্সিপালের নেতৃত্ব বিনা বাক্য ব্যয়ে সবাই মেনে নিত, গত দশ-বারো বছরে তাঁর সে অবস্থান আর থাকেনি। এ জন্য দায়ী কাজির বাজার মাদরাসা ও তাঁর আশপাশের লোকজনের রাজনৈতিক কিছু ভুল সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্তগুলো কী কী, তা আর বিস্তারিত করে বলার দরকার নেই আশা করি।
এত তাড়াতাড়ি তিনি চলে যাবেন ভাবিনি। গত ১৯ অক্টোবর ফজরের পর এক কলিগের মুখে প্রিন্সিপালের ইনতেকালের সংবাদ শুনে স্তম্ভিত হয়ে যাই। ১৮ তারিখ দিবাগত রাত একটার দিকে সিংহপুরুষ চলে গেছেন তাঁর সমস্ত কীর্তি ও অবদানের দাস্তান রেখে মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে। আল্লাহ তাআলা তাঁর মর্যাদা জান্নাতের উচ্চ আসন পর্যন্ত উন্নীত করুন। আমিন।

নভেম্বর ২০১৮

ShareTweetShare

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১১ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১১ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি জানুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মার্চ ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মার্চ ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি এপ্রিল ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি এপ্রিল ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মে ২০১৭ সংখ্যা

মাসিক নবধ্বনি মে ২০১৭ সংখ্যা

আমাদের সম্পর্কে

যোগাযোগ

সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা

© 2021 নবধ্বনি - Developed by Shabaka IT

No Result
View All Result
  • স্বাগত কলাম
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • মুক্তগদ্য
  • গল্প
  • রঙধনু
  • দিনলিপি
  • পুরোনো সংখ্যা

© 2020 নবধ্বনি - Developed by Shabaka IT.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Create New Account!

Fill the forms below to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist