হেমন্ত। ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু। শীতের বার্তাবাহক। কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মিলে হয় হেমন্ত। ঋতুরানী শরতের পর আগমন এই ঋতুকন্যা হেমন্তের। হেমন্তের আগমনে চারিদিকে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ। ফসলের মাঠ সোনালি রঙে রেঙে যায়, যেন মাঠে মাঠে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সোনার অলঙ্কার। কার্তিকের শেষে শুরু হয় ‘সোনার অলঙ্কার’ কেটে ঘরে তোলার মৌসুম। তাই তো কার্তিকের পরের মাসের নামকরণ করা হয়েছেÑ অগ্রহায়ণ, অর্থাৎ ধান কাটার মৌসুম। সেই ‘সোনার অলঙ্কার’ মাঠ থেকে কেটে, একটি বাঁশের দুই দিকে দুই আঁটি ধান বেঁধে, কাঁধে ঝুলিয়ে, ক্ষেতের আইল ধরে বাড়ি নিয়ে আসে গ্রামের কৃষকরা। তারপর শুরু হয় মাড়াইপর্ব; ধান মাড়াইয়ের ঝন ঝন শব্দে চারিদিক মুখরিত হয়ে যায়। যা পল্লীকবি জসীম উদ্দীন তাঁর ‘ধানের কাব্য’ কবিতায় সুন্দর করে উল্লেখ করেছেনÑ
সারা মাঠে ধান
পথে ঘাটে ধান
উঠানেতে ছড়াছড়ি
সারা গাঁও ভরি
চলেছে যে কবি ধানের কাব্য পড়ি
ঘরে নতুন ধান আসাকে উপলক্ষ করে গ্রামে গ্রামে হয় নবান্ন উৎসব। সেই উৎসবে পাড়া-পড়শী, আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করা হয়। নতুন চাল দিয়ে বানানো হয় চিতই পিঠা, কুলি পিঠা, পাটিসাপ্টাসহ আরো অনেক পিঠা। ফলে পথ-ঘাট গন্ধরাজের সুঘ্রাণের সাথে পিঠা-পুলির মৌ মৌ গন্ধে মোহিত হয়। প্রত্যেক ঋতুর মতো হেমন্তেরও আছে এক স্বতন্ত্র রূপ, আলাদা বৈশিষ্ট্য। হেমন্তের সকালে ঝিরঝিরে হিমেল হাওয়ায় ধান ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটতেই মন ফুরফুরে হয়ে ওঠে। ধানপাতার ওপর পড়া শিশির যেন মুক্তাদানা। সকালের মিষ্টি রোদে উঠানে পাটি বিছিয়ে সকালের নাশতা করা যেন অমৃত আস্বাদন। কিন্তু এ সব কেবল গ্রামের লোকদের জন্য। শহরের লক্কর-যক্কর জীবনে হেমন্ত আসতে না আসতে এসে পড়ে শীত। হেমন্ত যে কবে এসে চলে যায়, তা বোঝাই যায় না। তাই শহুরে জীবনে হেমন্ত কী, বোঝাটা দুষ্কর। তবুও হেমন্ত আসে। আসে অনেক উৎসবের উপলক্ষ হয়ে।
নভেম্বর ২০১৮